দিনহাটা: ১১২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের পরেও শুক্রবার কোচবিহারে লোকসভা ভোট সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ রাখা গেল না। প্রথম দফায় রাজ্যে ভোটগ্রহণ ছিল কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি- উত্তরবঙ্গের এই তিন আসনে। এর মধ্যে সবথেকে বেশি অভিযোগ এসেছে কোচবিহার থেকে। নিশীথ প্রামাণিক ও উদয়ন গুহের টক্কর ঘিরে কোচবিহারে অশান্তির আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। বিজেপির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভোটের দিন উদয়নের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ভোট চলাকালে নিজের বিধানসভা এলাকার বাইরে বেরোতে পারেন নি উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী।
শুক্রবার দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যেও অবশ্য বিশেষ সুবিধা করতে পারেন নি উদয়ন। পরিস্থিতি তেইশের পঞ্চায়েত নির্বাচনের মতো ছিল না। বুথে বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী। কমিশনের নির্দেশে রাজ্য পুলিশকেও সতর্ক হয়ে পদক্ষেপ করতে হয়েছে। ফলে রাজ্য প্রশাসনের কাছ থেকেও তেমন কোনও অ্যাডভান্টেজ পান নি উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী। দুপুরে ভেটাগুড়ির উত্তরপাড়ায় পা রাখা মাত্রই গ্রামের মহিলাদের রোষের মুখে পড়তে হয়েছে দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ককে। উদয়ন গুহকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন মহিলারা। পুলিশকে চাপ দিয়ে ওই গ্রামে বিজেপির এক পঞ্চায়েত সদস্যকে উদয়ন গ্রেফতার করিয়েছেন বলে মহিলাদের অভিযোগ। ফের উস্কানি ছড়াতেই তাঁর গ্রামে আসা, এমনটাই ছিল বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ। পুলিশ উদয়ন গুহকে ঘটনাস্থল থেকে বের করে আনতে চাইলে গ্রামের মহিলারা বাধা দেন। পুলিশের সঙ্গে রীতিমতো বচসায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। উত্তরপাড়া থেকে এক প্রকার পালিয়ে বাঁচেন উদয়ন।
ঘটনা শুনে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের কটাক্ষ, “নিজের আচরণই ফেরত পাচ্ছেন উদয়ন গুহ। যে যেমন কর্ম করবে, সে তেমন ফল পাবে। মহিলাদের অসম্মানিত, অপমানিত করার ফল টের পাচ্ছেন তিনি। গোটা বাংলাটাকেই সন্দেশখালি মডেল বানিয়ে ফেলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কোচবিহারের জাগ্রত জনতা প্রতিরোধ করায় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আজ কোথাও দাঁড়াতে পারে নি।” তবে রাজ্য পুলিশের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নন নিশীথ। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ সম্পূর্ণ দলদাস হয়ে গেছে। তারা তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে। এই ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে সক্রিয়তা দেখাতে হবে।”
রাজ্য পুলিশ তৃণমূলের হয়ে কাজ করলেও জনগণের প্রতিরোধের মুখে এ’দিন কোচবিহারের সব জায়গা থেকে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা পালিয়ে গেছে বলে সাংবাদিকদের জানান নিশীথ প্রামাণিক। তিনি বলেন, “গত পঞ্চায়েত নির্বাচন ও দিনহাটা বিধানসভার উপনির্বাচনে তৃণমূলের সন্ত্রাসের কারণে মানুষ ভোট দিতে পারেন নি। আজকে গণতন্ত্রের উৎসব মহোৎসবের চেহারা নিয়েছে। সকাল থেকে যেখানেই তৃণমূল ভোট লুটের চেষ্টা করেছে, গুন্ডামি করছে ,মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের রুখে দিচ্ছে।” শুক্রবার সারাদিনই রিল্যাক্সড মুডে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। দুপুর বারোটা নাগাদ নিজের ভেটাগুড়ির বাড়ি থেকে ভোট দিতে বেরোন তিনি। ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হওয়ার আগেই নিশীথের ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজে’ আত্মবিশ্বাসের ছাপ স্পষ্ট।
কোচবিহারের কয়েকটি জায়গায় বিজেপি ও তৃণমূলের সংঘর্ষে দুই দলেরই কয়েকজন আহত। কিছু এলাকায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাদের ক্যাম্প অফিসে চড়াও হওয়ার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। বিজেপির বিরুদ্ধেও ক্যাম্প ভাঙচুর ও এজেন্টকে মারধরের অভিযোগে সরব তৃণমূল। ভোটগ্রহণ শেষে যখন ইভিএম নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে তখন শীতলকুচি হাইস্কুলের বাইরে বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। অভিযোগের তির বিজেপির দিকে। বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ তুলেছেন কোচবিহারের তৃণমূল প্রার্থী জগদীশ বর্মন বাসুনীয়া। যদিও জেলা বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, পঞ্চায়েতের মতো ছাপ্পা দিতে না পেরে হার নিশ্চিত বুঝেই হতাশ তৃণমূলের লোকেরা।
Feature Image: NNDC.