আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিত্র আমেরিকার পরামর্শ ছিল সংযত থাকার। কিন্তু বদলা নিতে শেষ পর্যন্ত ইরানে সীমিত আকারের হামলাই চালাল ইজরায়েল। শুক্রবার ভোর রাতে মধ্য ইরানের শহর ইসফাহান থেকে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। ইসফাহানের একটি সামরিক বিমান ঘাঁটি লক্ষ্য করে ইসরায়েল ড্রোন বা মিসাইল হামলা চালিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থার তরফে হামলার কথা স্বীকার করা হয়েছে। ইরানের সরকার পরিচালিত মিডিয়া জানিয়েছে, আক্রমণ ব্যর্থ করতে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় আছে। ঘটনাস্থলে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয় নি এবং জনজীবন স্বাভাবিক রয়েছে বলেও ইরানের দাবি। যদিও ইসফাহানে ইজরায়েলের হামলার ঘটনার পরেই ইরানের আকাশ সীমায় বেসামরিক বিমানের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দিয়েছে তেহরান।
তেহরানের ৩১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ইসফাহানে ইরানের নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট রয়েছে। যে পারমাণবিক প্রকল্পের দিকে সর্বক্ষণ কড়া নজরদারি চালায় আমেরিকা ও ইজরায়েল। তবে শুক্রবার ভোরের হামলায় ইসফাহানের নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট লক্ষ্য করে কোনও হামলা চালানো হয় নি বলে ইজরায়েলের বিভিন্ন সূত্র থেকে ওয়াশিংটন প্রশাসনকে নিশ্চিত করা হয়েছে। গত শনিবার (১৩ এপ্রিল) ইজরায়েলের ভূখন্ড লক্ষ্য করে তিনশোর বেশি ড্রোন, ক্রুজ ও ব্যালাস্টিক মিসাইল ছোড়ে ইরান। ইজরায়েল ও আমেরিকার আকাশ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি আকাশেই সে’সব ধ্বংস করে দেয়। কেবল দুটি ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র মাটিতে বিস্ফোরিত হলে তা থেকে সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ইজরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে। গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে ইরানের দূতাবাসে মিসাইল হামলা চালিয়ে রেভোলিউশনারি গার্ড কপর্সের শীর্ষস্থানীয় কমান্ডার মহম্মদ রেজা জাহেদি এবং এক কূটনীতিক সহ নয়জনকে হত্যা করেছিল ইজরায়েল। এর বদলা নিতেই ইজরায়েলে হামলা চালায় ইরান।
ইজরায়েল প্রত্যাঘাত করলে কড়া জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল তেহরান। সাধারণত আক্রান্ত হলে প্রতিশোধ না নিয়ে ছাড়ে না ইজরায়েল। ইজরায়েল ইরানের উপর বড় মাপের হামলা চালালে দুই দেশ পুরোদস্তুর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আশঙ্কা। ইরানের আক্রমণ মোকাবিলায় বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে সব রকমের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত থাকলেও জো বাইডেনের প্রশাসনও চায় না, শনিবারের হামলার শক্ত জবাব দিক ইজরায়েল। তবে সীমিত আকারের হলেও তারা যে ইরানের উপর আক্রমণ চালাবে, তেল আভিভের তরফে এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। শনিবার ভোর রাতে ইরানের ইসফাহানে ইজরায়েলের হামলার নমুনা দেখে কূটনৈতিক মহল মনে করছে সীমিত আকারের হামলাই চালিয়েছে নেতানিয়াহুর সরকার।
ইজরায়েলের বিমান বাহিনী দুর্ধর্ষ। অতীতে ইজরায়েলের বিমান হামলায় ইরানের নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু এ’দিন বিমান বা প্রচুর বিস্ফোরক বহনে সক্ষম ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বদলে ছোট ড্রোন দিয়েই ইরানের ভূখন্ডে ইজরায়েল হামলা চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। ঘটনার পরপরই ইরানের তরফ থেকে হামলার কথা স্বীকার করা হলেও উচ্চবাচ্য করে নি ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা দফতর। ইরানের সরকারি টিভি চ্যানেল জানিয়েছে, ইসফাহানের আকাশে তিনটি ড্রোন চিহ্নিত করা মাত্রই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং মাটিতে আঘাত করার আগেই তিনটি ড্রোনই ধ্বংস করা হয়। ইসফাহানের স্থানীয় সামরিক আধিকারিক জেনারেল সিয়াভোশ মিহানডুস্ট দাবি করেছেন, শহরে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয় নি। যদিও নিরপেক্ষ সূত্র থেকে এই দাবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয় নি।
ইরানে হামলা চালানোর আগে তেল আভিভ বাইডেন প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছিল বলে রয়টার্সের কাছে আমেরিকার একটি নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে দাবি করা হয়েছে। হামলা যে সীমিত আকারের বা প্রতীকি হবে, সে ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বাইডেনকে নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। ইরান অস্বীকার করলেও ইসফাহানের একটি সামরিক বিমান ঘাঁটি থেকে জোরালো বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে খবর মিলেছে। ইরানের যথেষ্ট অভ্যন্তরে সামরিক পরিকাঠামোর উপর ছোট আকারের ড্রোন দিয়ে কেন হামলা চালাল ইজরায়েল? আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসলে ইজরায়েল ইরানকে এই বার্তাই দিল, চাইলে যে কোনও মুহূর্তে তোমাদের সামরিক লক্ষ্যবস্তুর উপরে জোরালো হামলা চালাতে সক্ষম আমরা।
Feature image is representational.