বিশেষ প্রতিবেদন: ২০১৪ থেকেই তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত ঘাটালের সাংসদ দেব। পর্দার দেবের আসল নাম দীপক অধিকারী। দেব বা দীপক তৃতীয়বারের মতো ঘাটাল থেকে তৃণমূলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে রাজনৈতিক মহল। ধোঁয়াশা অবশ্য নিজেই তৈরি করেছেন দেব। শোনা যাচ্ছে, এবারও ঘাটাল থেকে তাঁকেই পছন্দ তৃণমূল সুপ্রিমোর। কিন্তু দেব নিজে দাঁড়াতে ইচ্ছুক কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
টলিউডের যে ক’জন নায়ক-নায়িকা তৃণমূলের রাজনীতি করেন, তাঁদের মধ্যে দেব নিঃসন্দেহে সবথেকে চতুর। সংবাদ মাধ্যমে আলটপকা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন। বিরোধী নেতাদের সম্পর্কে খারাপ কথা দেবের মুখ থেকে শোনা যায় না। বিতর্ক বা বিপদ হতে পারে, এমন পরিস্থিতি সযত্নে এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করেন দেব। তারপরেও রাজনৈতিক জীবনে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারেন নি টলিউডের এই জনপ্রিয় অভিনেতা। যে গরু পাচার মামলায় অভিযুক্ত হয়ে অনুব্রত মন্ডল সকন্যা তিহাড় জেলে, সেই মামলার তদন্তে নেমে ঘাটালের তৃণমূল সাংসদকেও জেরা করেছে সিবিআই।
অনেকেই বলেন, তৃণমূলে যোগ দিয়ে দেবের অবস্থা সাপের ছুঁচো গেলার মতো। ১৪-য় মমতা যখন ঘাটাল থেকে তাঁর নাম চূড়ান্ত করেন, দেব তাতে নিমরাজি ছিলেন। কিন্তু বাংলায় থেকে টলিউডে অভিনয় করে দিদিকে চটালে পরিণাম কী হতে পারে, এই চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে যান তিনি। শোনা যায়, উনিশে ভোটে না দাঁড়াতে চেয়ে কালীঘাটে গিয়ে হাতেপায়ে পর্যন্ত ধরে ছিলেন দীপক অধিকারী। কিন্তু রেহাই মেলে নি। চব্বিশ আসতে আসতে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে। সংসর্গ বলে একটা কথা আছে। তার ছোঁয়ায় দলে থেকে দেবকেও গায়ে কালি লাগাতে হয়েছে বলে ঘাটালের বাতাসে গুঞ্জন।
গরু পাচার মামলায় পত্রপাঠ দেব সিবিআইয়ের দফতরে হাজিরা দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হলেও অভিযোগ মুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ স্বস্তিতে, এ কথা বলার মতো সময় এখনও আসে নি। অন্য দিকে ঘাটালে তৃণমূল সাংসদের অনুগামীদের বিরুদ্ধে নিয়োগ ও অর্থ সংক্রান্ত একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই লোকসভা ভোটের সূচি ঘোষিত হয়ে যাবে। সব দলেই প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ জোরকদমে শুরু হয়ে গেছে। এ’বারও নাকি ঘাটাল থেকে দেবকেই দাঁড় করাতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু দেব কি রাজি? রাজনৈতিক মহলের এই প্রশ্নের মধ্যেই ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি, বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদ ও ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের গর্ভনিং বডির চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন দেব। এর মধ্যে প্রথম দুটিতে ঘাটালের সাংসদ হিসেবে পদাধিকার বলেই চেয়ারম্যান ছিলেন দেব।
ঘাটালে দেবই মমতার পছন্দের প্রার্থী, এই গুঞ্জনের মধ্যেই তিনটি পদ থেকে দেবের আকস্মিক পদত্যাগ স্বাভাবিকভাবেই সংবাদ মাধ্যম ও রাজনৈতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ঠিক কী কারণে দেবের এই পদক্ষেপ, তা জানতে চাইছে সবাই। এমন শোনা যাচ্ছে, দেব এবারও ভোটে দাঁড়াতে ইচ্ছুক নন। এবং না দাঁড়ানোর ব্যাপারে তিনি এতটাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে নেত্রী ও দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে তিনটি পদ থেকে দুম করেই ইস্তফা দিয়ে বসেছেন। তৃণমূল থেকে না দাঁড়ালেও দেবের মাথায় কি অন্য কোনও রাজনৈতিক পরিকল্পনা আছে? কোনও কোনও সংবাদ মাধ্যম এমনও জানাচ্ছে যে, বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন ঘাটালের সাংসদ।
দেব ঘাটাল থেকে তৃণমূলের মনোনয়নে দাঁড়াচ্ছেন কি দাঁড়াচ্ছেন না, কিম্বা তাঁর ভিন্ন কোনও রাজনৈতিক পরিকল্পনা আছে কিনা, এই দুই বিষয় পরিষ্কার হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট, দেব খুব একটা স্বস্তিতে নেই। তাঁর শুভানুধ্যায়ীদের অনেকেই মনে করেন, রাজনীতিতে ঢুকেই ভুল করে ফেলেছেন দেব। ঘনিষ্ঠ মহলে দেব নিজেও নাকি একই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ আবার বলছেন, দেব যার খপ্পরে পড়েছেন, কেউ ভুল করেও সেখানে একবার গিয়ে পড়লে, তার সহজে নিস্তার নেই!
Feature image is representational. Credit- Official FB page of Dev.