বিশেষ প্রতিবেদন: বিনিয়োগ বড় বালাই। তাই দলের নেতা দুই বেলা নিয়ম করে আদানিকে খোঁচা দিলেও সেই আদানির সঙ্গেই গাঁটছড়া বাঁধলেন রেবন্ত রেড্ডি। রেবন্ত তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় দলকে জিতিয়ে রাজ্যের দায়িত্ব নিয়েছেন গত ৮ ডিসেম্বর। এই ক’দিনেই চিনের কমিউনিস্ট নেতা দেং জিয়াও পিংয়ের মতোই রেবন্ত বুঝে গেছেন, বেড়াল সাদা না কালো বড় কথা নয়, ইঁদুর ধরতে পারলেই হল। তাই রাহুল গৌতম আদানিকে যা বলে বলুক, রাজ্যে লগ্নি টানতে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে ‘মউ’ স্বাক্ষর করতে দু’বার ভাবলেন না তেলেঙ্গানার কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী।
গৌতম আদানির বিরুদ্ধে কংগ্রেস সহ বিরোধীদের সবথেকে বড় অভিযোগ, তিনি মোদী ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি এবং এই ঘনিষ্ঠতার সুযোগে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে নানা অন্যায় সুযোগ-সুবিধে নিয়ে থাকেন। মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, খাতিরের লোক গৌতম আদানির কাছে দেশটাই বেচে দিচ্ছেন তিনি। ওদিকে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি বিনিয়োগ টানতে মরিয়া। ক্ষমতায় বসার পরদিন থেকেই তেলেঙ্গানায় বিনিয়োগ আনতে তৎপর বাস্তববাদী রেবন্ত রেড্ডি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ৫৪ তম বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে রেবন্ত এখন সুইৎজ়ারল্যান্ডের দাভোসে। বুধবার সেখানেই আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানির উপস্থিতিতে ১২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ‘মউ’ স্বাক্ষর সেরে ফেলল তেলেঙ্গানা সরকার।
কংগ্রেস শাসিত তেলেঙ্গানায় ড্রোন ও মিসাইল প্রযুক্তি নিয়ে বড় বিনিয়োগ করতে চলেছে আদানি গোষ্ঠী। হায়দ্রাবাদ-সেকেন্দ্রাবাদ ঘিরে তথ্যপ্রযুক্তি তো আছেই, গ্রিন এনার্জির মাধ্যমে :টুইন সিটিতে’ জল সরবরাহের একটি প্রকল্পেও টাকা ঢালছেন গৌতম আদানি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ও তেলেঙ্গানা সরকারের যৌথ উদ্যোগে এই প্রকল্পগুলি হওয়ার কথা। আর তাতেই আদানি গোষ্ঠীকে পাশে পাচ্ছে তেলেঙ্গানা সরকার। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে যে দলের সরকারই থাকুক, সরকার প্রধানেরা ‘পাখির চোখ’ করেন কেবল বিনিয়োগকেই। রেবন্ত রেড্ডি জানেন, রাজ্যে কর্মসংস্থানের জন্য বড় বিনিয়োগ জরুরি। তাই রাজনীতি দূরে সরিয়ে গৌতম আদানির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন তিনি।
রেবন্তের সঙ্গে গৌতমের ছবি বেরিয়েছে মিডিয়ায়। গেরুয়া শিবির এখন ঠুকতে ছাড়বে কেন। অনেকেই বলছেন, এরপরেও মোদীর সঙ্গে জুড়ে আদানিকে রাহুল কটাক্ষ করবেন কোন মুখে? গৌতম আদানি জাত ব্যবসায়ী। তিনি বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ পেলে কংগ্রেস-বিজেপি-বাম-তৃণমূল দেখেন না। কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের গন্ডারের চামড়া। তাঁরা যাকে গাল পাড়েন, ক্ষমতায় এলে বিনিয়োগের জন্য তারই হাতে-পায়ে ধরেন। রাহুল গান্ধী বলতেই পারেন- আরে, আদানি মন্দ হলেও তার লগ্নিতে বদগন্ধ নেই!
Feature image- collected.