চাঁদের 'কুমেরু'তে নেমে ছবিও তুলে ফেলল বিক্রম! মহাকাশ গবেষণায় ইতিহাস তৈরি করল ভারত - nagariknewz.com

চাঁদের ‘কুমেরু’তে নেমে ছবিও তুলে ফেলল বিক্রম! মহাকাশ গবেষণায় ইতিহাস তৈরি করল ভারত


সায়েন্স ডেস্ক: ইসরোর বিজ্ঞানীদের সাধনায় কোন‌ও ত্রুটি ছিল না। চন্দ্রযান-২ অভিযানের শেষ মুহূর্তের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে চন্দ্রযান-৩ অভিযানের প্রতিটি পদক্ষেপে সতর্ক ছিলেন তাঁরা। তারপরেও দেশের বৈজ্ঞানিক মহল থেকে সাধারণ নাগরিক- মনে একটা শঙ্কা তো ছিলই।‌ কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব শঙ্কাকে পায়ে মাড়িয়ে ইতিহাস তৈরি করল ভারত, ইতিহাস তৈরি করল ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন। ভারতের মহাকাশবিজ্ঞানীদের নিখুঁত হিসেব। ঘড়ির কাঁটা একচুল এদিক-ওদিক হল না। ইসরোর পূর্ব ঘোষণা মতো বুধবার (২৩ অগাস্ট, ২০২৩) সন্ধ্যা ৬টা বেজে ৪ মিনিটে চাঁদের মাটিতে সফলভাবে অবতরণ করল ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। আমেরিকা, রাশিয়া ও চিনের পর পৃথিবীর চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদের মাটিতে পা রাখল ভারত। কিন্তু চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নেমে ভারত যে ইতিহাস তৈরি করল, আর কারও পক্ষেই তা কোনও দিন মোছা সম্ভব হবে না। কারণ, ভারত‌ই পৃথিবীর প্রথম দেশ, যার ‘ল্যান্ডার মডিউল’ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফল অবতরণ করল।

চাঁদের মাটিতে ভারতের ইতিহাস। চাঁদে পা দিয়েই ছবি তুলে পাঠাল চন্দ্রযান-৩। ফটো ক্রেডিট- ইসরো।

চাঁদের মাটিতে সফল অবতরণের পর নিজের নির্ধারিত কাজ শুরু করে দিতে দেরি করে নি ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। নেমেই চাঁদের ছবি তুলেছে বিক্রমের ল্যান্ডিং ইমেজিং ক্যামেরা (এল‌আইসি)। ছবি তুলে তা ইসরোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পাঠিয়েও দিয়েছে মুহূর্তে। ছবিতে ল্যান্ডার মডিউলের একটি পায়ের অংশ এবং চাঁদের মাটিতে তার ছায়া স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সেই যুগান্তকারী ছবি টুইটারে পোস্ট করে দেশবাসীর সঙ্গে শেয়ার করেছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। সংস্থার ভেরিফায়েড এক্স হ্যান্ডেলে ইসরো লিখেছে, “নামার পরেই ল্যান্ডিং ইমেজিং ক্যামেরার সাহায্যে এই ছবি তোলা হয়েছে। এখানে চন্দ্রযান-৩ এর ‘ল্যান্ডিং সাইট’এর একটি অংশ দৃশ্যমান। ছবিতে চন্দ্রযানের একটি পা ও চাঁদের মাটিতে তার ছায়াও দেখা যাচ্ছে।”

ইসরোর টুইট- চাঁদের মাটিতে নেমে বিক্রমের তোলা প্রথম ছবি।

মাহেন্দ্রক্ষণে বিক্রম চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মাটি স্পর্শ করতেই দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ থেকে চন্দ্রযান-৩ টিমকে অভিনন্দন জানিয়ে লাইভ ভিডিও কলে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “টিম চন্দ্রযানকে, ইসরোর সকল বৈজ্ঞানিককে আমার শুভেচ্ছা। এই মুহূর্তটির জন্য বছরের পর বছর ধরে পরিশ্রম করেছেন তাঁরা।‌ ১৪০ কোটি দেশবাসীকেও শুভেচ্ছা। এই মুহূর্তে ভারতের উদীয়মান ভাগ্য আহ্বান জানাচ্ছে অমৃতকালকে। অন্তরীক্ষে নতুন ভারতের উদয় হল। আমি এখন দক্ষিণ আফ্রিকায়। কিন্তু বাকি দেশবাসীর মতো‌ আমার মন এখানেই (বেঙ্গালুরুর ইউআর রাও স্যাটেলাইট সেন্টারে) পড়েছিল।”

ইসরোর চন্দ্রযান-৩ টিমকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা ভারতবাসী পৃথিবীকে মা বলি আর চাঁদকে বলি মামা। ভারতের মায়েরা এতদিন তাঁদের বাচ্চাদের বলে এসেছেন, ‘চান্দমামা দূর কি হ্যায়’। আমার বিশ্বাস, খুব জলদি ভারতের আগামী প্রজন্মের বাচ্চারা বলবে, ‘চান্দমামা ট্যুর কি হ্যায়’।” প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “আমরা পৃথিবীর মাটিতে দাঁড়িয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, চাঁদে গিয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ করলাম। আমি জানি ভারতের ঘরে ঘরে উৎসব শুরু হয়ে গেছে। আমিও মনে মনে সেই উৎসবে যোগ দিয়েছি। বিজ্ঞানীরা যথার্থ‌ই বলেছেন, ইন্ডিয়া ইজ নাউ অন দ্য মুন।” ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, “এই জয় শুধু ভারতের নয়। আমরা এক বিশ্বে বাস করি। এক মানবজাতির সাফল্যে বিশ্বাস করি। আমাদের চন্দ্র অভিযানেও রয়েছে সেই একই মানবতার লক্ষ্য। তাই এই সাফল্য সমগ্র মানবজাতির জয়। ভারতের এই সাফল্য অন্য দেশের চন্দ্রাভিযানেও ভবিষ্যতে সাহায্য করবে।” মোদী বলেছেন, “ভারত প্রমাণ করল, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিও পারে।”

Feature image credit- ISRO.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *