'বাংলার পঞ্চায়েত ভোটে রক্তের খেলা দেখেছে সারা দেশ', পঞ্চায়েতিরাজ সম্মেলনে তৃণমূলকে চরম ঝাড়লেন মোদী - nagariknewz.com

‘বাংলার পঞ্চায়েত ভোটে রক্তের খেলা দেখেছে সারা দেশ’, পঞ্চায়েতিরাজ সম্মেলনে তৃণমূলকে চরম ঝাড়লেন মোদী


কলকাতা: বাংলায় পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে যা যা ঘটে গিয়েছে, সব‌ই তিনি জানেন- শনিবার কোলাঘাটে বিজেপির ‘পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেত্রীয় পঞ্চায়েতিরাজ’ সম্মেলনে নিজের বক্তৃতায় বুঝিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদী। দিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রাজ্যে এসেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। রক্তস্নাত পঞ্চায়েত ভোট শেষ হয়েছে একমাস হল। যদিও এখনও তার জের চলছে। গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা।

পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে সব অভিযোগ মোদীর মুখস্ত

পশ্চিমবঙ্গে দলের পঞ্চায়েত সম্মেলনে মোদীর মুখে সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কিছু কথা থাকবেই, রাজনৈতিক মহল আগেই তা অনুমান করেছিল।‌ কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রাজ্যে যা যা ঘটেছে, তার খুঁটিনাটিও যে মোদীর ভাষণে উঠে আসতে পারে, তা অনেকেরই ধারণা বাইরে ছিল। মোদী বলেন, “এই ভোটে তৃণমূল কেমন রক্তের খেলা খেলেছে, সারা দেশ তা দেখেছে।” বিরোধীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না দিয়ে ভোটের সূত্রপাত থেকেই বাংলার শাসকদল গণতন্ত্রকে প্রহসনে পরিণত করে বলে অভিযোগ। এখন এটাকেই রণকৌশলে পরিণত করেছে তৃণমূল, বিরোধীদের অভিযোগ এমন‌ই। এদিন প্রধানমন্ত্রীও বলেন, “এদের ভোটপদ্ধতি কেমন ছিল? প্রথমে, ভোটে লড়ার প্রস্তুতির সময়টুকুও দিও না। দ্বিতীয়ত, ভোটে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য কম সময় দাও। তাই তাড়াতাড়ি ফর্ম ভরার সময় ঘোষণা করে দাও। তারপরেও কোন‌ও বিজেপি অথবা বিরোধীদের কেউ যাতে মনোনয়ন ফর্ম ভরতে না পারে, তার জন্য যা যা করার দরকার করো। তারপরেও কেউ যদি বিভিন্ন উপায়ে মনোনয়ন জমা করেও ফেলেন, তাঁকে ভোটে লড়তে যত রকম পদ্ধতিতে পারা যায়, বাধা দাও।”

তোলাবাজদের ফৌজ ছাপ্পাবাজদের ফৌজে পরিণত হয়েছিল

পঞ্চায়েত ভোটের আগে গ্রাম বাংলার রাজনৈতিক পরিবেশ কেমন হয়েছিল, বক্তৃতায় তা তুলে ধরেন‌ নরেন্দ্র মোদী। প্রচারে বাধা, হুমকি এবং ঘরে ঘরে ঢুকে ভয় দেখানো- ধরে ধরে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “শুধু যে বিজেপির কর্মকর্তাদের ধমকেছে এমন নয়, ভোটারদের‌ও ভয় দেখিয়েছে। বিজেপি কর্মীদের যে সমর্থক এবং তাঁদের আত্মীয় আছেন, তাঁদের‌ও বাঁচা মুশকিল করে দেওয়া হয়েছে। আর তার পর ভোটের সময় ছাপ্পা দেওয়া হয়েছে। তখন তোলাবাজদের ফৌজ ছাপ্পাবাজের ফৌজ‌ হয়ে যায়।” পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল কীভাবে বুথ দখল করেছে, তা নিয়েও মুখ খোলেন মোদী। তিনি অভিযোগ করেন, “বুথ দখল করতে গুন্ডাদের ভাড়া করা হয়। কে, কীভাবে, কোন কোন বুথ কব্জা করবে, তা ঠিক করে ফেলা হয়। তারপর ভোট বাক্স নিয়ে চম্পট দেয়।” পঞ্চায়েত ভোটের গণনা ঘিরেও যে অভিযোগের পাহাড়, মোদীর কানে সেই খবর গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, “শুধু ভোটের দিনেই জুলুমের শেষ নয়। এমনকি ভোটগণনার সময়‌ও বিজেপির কার্যকর্তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া, তাঁদের গণনাকেন্দ্রের মধ্যে থাকতে না দেওয়ায় ঘটনা ঘটেছে।”

জুলুমের পরেও দলের ভাল ফল, তুষ্ট মোদী

পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির ফলে তিনি যে তুষ্ট, এ’দিন তা জানাতে ভোলেন নি নরেন্দ্র মোদী। মোদী মনে করেন, এত জোরজুলুম, অনিয়মের পরেও বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাল ফল করেছে দল। তিনি বলেন, “এত জুলুমের পরেও বিজেপিকে আশীর্বাদ করেছে পশ্চিমবঙ্গের জনগণ। এই পরিস্থিতির মধ্যেও বিজেপির যে প্রতিনিধিরা জয়ী হয়েছেন ভোটে, তাঁদের আমি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এঁরা গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন।” পঞ্চায়েত ভোটের পরেও বাংলায় বিরোধীদের উপরে হামলার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, “ভোটের পরেও জয়ী বিজেপি প্রার্থীদের উপর আক্রমণ অব্যাহত আছে।” প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, “তৃণমূলের সংস্কৃতিটাই এমন যে, বিজেপি ভোটে জিতলে বিজয় মিছিল বের করতে দেয় না। সেই মিছিলে হামলা প্রাণঘাতী হামলা চালায়।”

রাজ্য সরকারের বাধায় বাংলায় ব্যাহত গ্রামোন্নয়ন

পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল পরিচালিত সরকারের বাধার কারণেই এই রাজ্যে গ্রামোন্নয়নের কাজ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে নি বলে সম্মেলনে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এই রাজ্যে সরকার‌‌ই কাজ করতে দেয় না। রাজ্য সরকার বাধা দেওয়ার পরেও বাংলায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে ৪৫ লক্ষ পাকাবাড়ি তৈরি করা হয়েছে।” পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেত্রীয় পঞ্চায়েতিরাজ সম্মেলনে রাজ্যে বিজেপির সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের প্রশংসা করেন নরেন্দ্র মোদী। মোদী বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে পেরে খুব ভাল লাগছে। কোনও পদের আশা না করেই এখানে ভারতমাতার জন্য কাজ করে চলেছেন লক্ষ লক্ষ কার্যকর্তা।”

ভিডিও: পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেত্রীয় পঞ্চায়েতিরাজ সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।

পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে তাঁর ‘হোম ওয়ার্ক’ যে যথেষ্ট ভাল, শনিবার তা বুঝিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদী। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঝাঁঝালো বক্তৃতা তৃণমূল নেতৃত্বের গায়ে যতটা জ্বালা ধরিয়েছে ততটাই জুড়িয়েছে বাংলার গেরুয়া শিবিরের নেতাকর্মীদের প্রাণ। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে বাংলা কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে, মোদীর শনিবারের ভাষণ তার প্রমাণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

Feature image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *