কলকাতা: রবিবার দুপুরে উডল্যান্ডসে গিয়ে অসুস্থ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দেখে এসেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ঠিক ২৪ ঘন্টা পরে, সোমবার বিকেলে বুদ্ধদেবকে দেখে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাম অ্যাভিনিউর বাসায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শনিবার সন্ধ্যায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে উডল্যান্ডস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে’দিন রাতেই হাসপাতালে গিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়ে আসেন রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য ও দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
এ’দিন বিধানসভা থেকে বাড়ি ফেরার পথে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতালটিতে চলে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভেতরে ঢুকে চিকিৎসকদের কাছে বুদ্ধদেবের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন মমতা। পরে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ওঁর জ্ঞান আছে। আমাকে দেখে হাত নাড়লেন। আমার মনে হল, আগের থেকে অনেকটা সুস্থ হয়েছেন। ভেন্টিলেশন থেকে বের করে আনা হয়েছে। বাইপ্যাপ চলছে। চিকিৎসক নই। ওনার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে এর বেশি কিছু আমি বলতে পারব না।”
রবিবার বুদ্ধদেবকে দেখে বাইরে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারীও। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে জমি রক্ষার আন্দোলনের অন্যতম সেনাপতি হিসেবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারের বিরুদ্ধে দাঁতে দাঁত চেপে লড়েছিলেন কাঁথির তৎকালীন বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। তবে রাজনৈতিক মতাদর্শে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর হলেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সততার প্রশংসা করে শুভেন্দু বলেন, “আমি ওনার সময়ে বিধায়ক ছিলাম। এ’রকম একজন সৎ রাজনীতিবিদ পশ্চিমবঙ্গে খুব বিরল।” ওনার মতো সৎ রাজনীতিক দ্বিতীয়টি হবে কিনা প্রশ্নচিহ্ন আছে।”
কুণালের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে বিতর্ক
বিরোধী দলনেতার সৌজন্য এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সম্পর্কে স্পষ্ট মূল্যায়ণ রাজনৈতিক মহলে প্রশংসিত হচ্ছে। এ’দিকে অসুস্থ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের ফেসবুক পোস্ট নেটাগরিক মহলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ফেসবুকে কুণাল লিখেছেন- “বুদ্ধবাবুর আরোগ্য আমিও চাই, উনি সুস্থ থাকুন; কিন্তু দয়া করে আদিখ্যেতার পোস্টে ওঁকে মহাপুরুষ বানাবেন না। উনি সিপিএম আর ওঁর ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভুলে বহু ক্ষতি হয়েছে।” বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরল জীবনযাপন ও সততার প্রশংসায় তাঁর রাজনৈতিক বিরোধীরাও অকুণ্ঠ। বাংলার জনগণের মধ্যেও একই ধারণা বিদ্যমান। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার খবরে সামাজিক মাধ্যমে তাঁর সততার কথা বেশি বেশি করে উচ্চারিত হচ্ছে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ব্যক্তিগত সততা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশি বেশি আলোচনা চলতে থাকলে পাছে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর সততা প্রশ্ন চিহ্নের মুখে পড়ে, এই আশঙ্কাতেই কুণাল শিষ্টাচার জলাঞ্জলি দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে ‘নেগেটিভ ক্যাম্পেইন’ চালিয়েছেন বলে অভিযোগ সিপিএমের।
সোমবার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দেখে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্যের বিষয়ে বলা ছাড়া তাঁর সম্পর্কে অন্য কোনও মন্তব্য করেন নি মমতা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লাগাতার অবরোধের জেরে ২০০৯ সালে সিঙ্গুর থেকে ন্যানোর প্রকল্প গুটিয়ে চিরতরে সরে পড়ে টাটারা। সেই সময় শিল্প তাড়ানোর আন্দোলন করা ঠিক হয় নি বলে আজ আফশোস করে বেকারত্বে ভরা বাংলার মানুষ। কুণালের মন্তব্য ঘিরে বিতর্কের মধ্যেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দেখে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Feature image/graphic is representational.