আগরতলা: বিধানসভা নির্বাচনে নোটার চেয়েও কম ভোট পাওয়া তৃণমূল ত্রিপুরা থেকে উঠে যাওয়ার পথে। ফেব্রুয়ারিতে ভোট মিটেছে। ছয় মাসও হয় নি। কিন্তু এর মধ্যেই বাঙালি অধ্যুষিত ত্রিপুরায় ঝাঁপ বন্ধ হওয়ার পথে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের সভাপতি পীযূষকান্তি বিশ্বাস মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন। সঙ্গে ছেড়েছেন তৃণমূলের প্রাথমিক সদস্যতাও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা চার লাইনের পদত্যাগপত্রে কোনও কারণ জানান নি পীযূষকান্তি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি লিখেছেন,”আমাকে ত্রিপুরা তৃণমূল কংগ্রেসের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য দলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ।”
ত্রিপুরা তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দিয়ে ভোটের মুখে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন সুবল ভৌমিক। এরপর কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় দলের সভাপতির পদ পেয়ে যান পীযূষকান্তি বিশ্বাস। এগারোয় বাংলায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ত্রিপুরায় সংগঠন বিস্তার তৃণমূল সুপ্রিমোর লক্ষ্য। একুশের সাফল্যে মাথা ঘুরে যায় অভিষেকের। গোয়া ও ত্রিপুরায় সরকার গঠনের সঙ্কল্প নিয়ে ফেলেন তিনি। ভোটে গোয়ায় শোচনীয় ফল হয় তৃণমূলের। আর ত্রিপুরা থেকে সাফ হয়ে যায় ঘাসফুল।
ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে ৬০টি আসনের মধ্যে মাত্র ২৮টিতে প্রার্থী দিতে পেরেছিল তৃণমূল। তখনই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা হয়েছিল, উত্তর পূর্বাঞ্চলের এই রাজ্যে তৃণমূলের আশা শেষ। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ভোটের প্রচারে গিয়ে একাধিক সভা করেছেন ত্রিপুরায়। অভিষেক একসময় কলকাতা-আগরতলা ‘ডেলি প্যাসেঞ্জারি’ শুরু করেছিলেন। কিন্তু ত্রিপুরার মানুষ তৃণমূলকে প্রত্যাখ্যান করেন। পরিণামে নোটার থেকেও কম ভোট পেয়ে রাজ্যটির রাজনৈতিক পরিসর থেকে হারিয়ে যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
অভিষেকের নির্দেশে বাংলা থেকে সায়নী, কুণাল, দেবাংশু সহ একঝাঁক নেতা ত্রিপুরা অভিযানে নেমেছিলেন। বিজেপি ছেড়ে দলে ফেরার পর রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে ত্রিপুরার দায়িত্ব দিয়েছিলেন অভিষেক। ভোটের ফল প্রকাশের পরদিন কলকাতার ফ্লাইট ধরেন রাজীব। আর আগরতলা মুখো হন নি। ভোটে শোচনীয় বিপর্যয়ের পর থেকেই ত্রিপুরার তৃণমূল কর্মীরা দল করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। অনেকেই বিজেপিতে যোগ দেন। আশায় বাঁচে চাষা- এই প্রবাদ মেনে যে ক’জন ঘাসফুলের ঝান্ডা আঁকড়ে ধরেছিলেন, গত এপ্রিলে প্রচারিত নির্বাচন কমিশনের একটি নির্দেশিকার পর তাঁরাও দলের সংশ্রব ত্যাগ করেন। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস জাতীয় দলের মর্যাদা হারানোর পর ত্রিপুরায় তৃণমূলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার। ভবিষ্যতে কেউ চাইলেও তৃণমূলের ‘জোড়াফুল’ প্রতীক নিয়ে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না ত্রিপুরায়।
এই পরিস্থিতিতে ত্রিপুরা তৃণমূল কংগ্রেস টিকে আছে কেবল দলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে। সদ্য পদত্যাগী রাজ্য সভাপতি বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন বলে আগরতলার রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন।