ডেস্ক রিপোর্ট: পঞ্চায়েত ভোটে বাংলা জুড়ে অবাধে ছাপ্পার অভিযোগ। শনিবার দিনভর হিংসার আগুনে পুড়ল কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার। ভোটগ্রহণের দিন হিংসা কাড়ল ১৮টি প্রাণ। শাসকদলের রোষ থেকে রেহাই পেলেন না সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরাও। বুথে ছাপ্পা চলছে- এই অভিযোগ পেয়ে খবর করতে ঘটনাস্থলে গিয়ে জলপাইগুড়ির বানারহাটে দুর্বৃত্তদের হাতে বেধড়ক মার খেলেন সাংবাদিকেরা। বানারহাট ব্লকের নাথুয়াহাটের ১৫/৪১ নং বুথের ঘটনা। সাংবাদিকদের উপর আক্রমণকারীরা সকলেই তৃণমূলের বলে জানা গেছে। হামলায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের ছয় প্রতিনিধি আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সাংবাদিকেরা বুথের ভেতরে পা দেওয়া মাত্রই তাদের দিকে তেড়ে আসেন তৃণমূলের কয়েকজন স্থানীয় নেতা। তাঁদের উস্কানিতে সাংবাদিকদের ঘিরে ধরে জনা চল্লিশেক লোক। তখন বুথের ভেতরে ছাপ্পা চলছিল বলে অভিযোগ। পাছে ছবি উঠে যায়, এই ভয়ে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের বুথের ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয় তৃণমূলের সদস্যরা। সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করলে তাদের গায়ে হাত তোলে দুষ্কৃতীরা। মুখে অশ্রাব্য গালিগালাজ। নিগ্রহের হাত থেকে নারী সাংবাদিকেরাও রেহাই পান নি। গলায় গামছা পেচিয়ে কয়েকজনের শ্বাসরোধ করারও চেষ্টা করা হয়। তাঁদের গণধোলাই দিয়ে মেরে ফেলার চক্রান্ত হয়েছিল বলে আহত সাংবাদিকদের অভিযোগ।
আহতদের কোনও রকমে উদ্ধার করে প্রথমে ধূপগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়। আঘাত গুরুতর হওয়ায় ছয়জনকে পরে জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রবিবার আহত সংবাদিকদের চিকিৎসা চলছে সঙ্গে সিটি স্ক্যান, আল্ট্রা সোনগ্রাফি করে শরীরে আঘাতের কারণে ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ এভাবে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় নিন্দার ঝড় সর্বত্র। এদিন আহত সাংবাদিকদের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে দেখতে এসেছিলেন জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ ডা: জয়ন্তকুমার রায়। গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সাংসদ বলেন, “বাংলায় জঙ্গলের রাজত্ব চলছে। এই রাজ্যে কেউ সুরক্ষিত নন। এমনকি সাংবাদিকেরাও পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন।”
সাংবাদিকদের উপর হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে পুলিশ এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয় নি বলে জানা গেছে। ঘটনার নিন্দা করেছে জলপাইগুড়ি প্রেস ক্লাব। প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে জেলা শাসক ও জেলার পুলিশ সুপারের কাছে দোষীদের শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে। সাংবাদিকদের উপর আক্রমণের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জলপাইগুড়ি প্রেস ক্লাবের সম্পাদক শান্তুনু কর বলেন, “গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে সেটি একটি সংগঠিত হত্যার চক্রান্ত। সাংবাদিকের গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা প্রশাসনকে বলছি আপনাদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে অপরাধীদের শনাক্ত করে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবার।”
Feature image and video- reporter.