বোসের তোপের মুখে সিনহা: দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে চরম হুঁশিয়ারি রাজ্যপালের - nagariknewz.com

বোসের তোপের মুখে সিনহা: দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে চরম হুঁশিয়ারি রাজ্যপালের


কলকাতা: শনিবার পঞ্চায়েত ভোট।‌ ভোট ঘিরে মানুষের উদ্বেগ চরমে। সাধারণ মানুষের উদ্বেগ-আশঙ্কা স্পর্শ করেছে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকেও। মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রথম দিন থেকে ভোট প্রচারের শেষ দিন- রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসার বলি ১৭টি প্রাণ। গ্রাম বাংলার পরিস্থিতি ভয়াবহ, বুঝতে ফেরে শেষ বেলায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহাকে চরম হুঁশিয়ারি দিলেন রাজ্যপাল। বৃহস্পতিবার রাজভবনে সাংবাদিকদের ডেকে নিজের উদ্বেগ ও আশঙ্কার কথা জানালেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। রাজ্যপাল নির্বাচন কমিশনারের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনি নিজের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। আপনাকে আমি নিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু আপনি রাজ্যবাসীকে হতাশ করেছেন। এখনও সময় আছে। সঠিকভাবে রাজধর্ম পালন করুন।”

ভিডিও: নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক করে রাজ্যপালের ভাষণ। সংগৃহীত

পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে হানাহানিতে কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার রক্তাক্ত হয়ে উঠতেই রাজভবনের ঠান্ডাঘর ছেড়ে পথে নেমে আসেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। হিংসাদীর্ণ কলকাতা সংলগ্ন ভাঙড় থেকে সুন্দরবনের বাসন্তী, উত্তরবঙ্গের কোচবিহার থেকে চোপড়া- ছুটে গিয়ে আর্ত-ভয়ার্ত মানুষকে অভয় দিয়েছেন আনন্দ বোস। শাসক শিবির তীব্র কটাক্ষে ধেয়ে এসেছে। শিষ্টাচারের বাইরে গিয়ে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানকে আক্রমণ করেছেন মদন মিত্র, কুণাল ঘোষ। কিন্তু বোসকে দমানো যায় নি। রাজনৈতিক হিংসা ও সন্ত্রাসের শিকার মানুষের অভিযোগ শুনতে রাজভবনে ‘পিস রুম’ বা শান্তি কক্ষ খোলার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল। রাজ্যপালের শান্তি কক্ষ খোলার উদ্যোগকে নির্বাচিত সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ বলে সমালোচনা করেছে তৃণমূল। অথচ রাজভবনের শান্তি কক্ষে অভিযোগ জানিয়েছেন তৃণমূলের আক্রান্ত কর্মীরাও। হিংসা থেকে রাজ্যবাসীকে রক্ষা করতে রাজ্যপালের সর্বশেষ পদক্ষেপ- ‘শান্তি ও সামাজিক সংহতি কমিটি’ গঠন।

রক্তের হোলি খেলা বন্ধ হোক

অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পঞ্চায়েত ভোটের স্বার্থে শাসকদলের সমালোচনা উপেক্ষা করে তিনি যে শেষ পর্যন্ত কাজ করে যাবেন, বৃহস্পতিবারের সাংবাদিক সম্মেলনে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজ্যপাল বলেন, “চিত্ত যেথা ভয়শূন্যের বাংলায় এসে আমি আনন্দিত ছিলাম। কিন্তু এত হিংসা দেখে আমার মোহভঙ্গ হয়েছে। বাংলায় এখন চিত্ত ভয়ে পূর্ণ আর মাথা হেঁট হয়ে আছে। গুরুদেবের মাটিতে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা হচ্ছে। আগুন নিয়ে খেলা হচ্ছে। আমি শিশুদের কান্না শুনেছি। মানুষের হতাশার কথা শুনেছি। মানুষের রক্ত নিয়ে রাজনৈতিক হোলি খেলা বন্ধ হোক।”

গঙ্গার পবিত্র জলেও হাতের রক্ত ধোবে না

রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার কাজে হতাশ রাজ্যপাল বলেন, “যেখানে একটা ফোন করলেই কাজ হয়ে যেত, সেখানে আপনি হাত গুটিয়ে বসেছিলেন।” রাজ্যের হিংসাদীর্ণ এলাকাগুলিতে অসহায় মানুষের চোখে ভয়ভীতি দেখে রাজ্যপালের হৃদয় আর্দ্র। বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখের চশমা খুলে ফেলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের চোখে জল দেখতে পান রাজভবনে উপস্থিত সাংবাদিকেরা। তিনি বলতে থাকেন, “বাসন্তী, পুরুলিয়া, কোচবিহারে হিংসার দায় কার? কে ঘাতক? রাজ্য নির্বাচন কমিশনের জানা উচিত। এত মৃত্যুর দায় কার? কমিশনকে জবাব দিতে হবে।” নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহাকে সতর্ক করে দিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বলেন, “এখনও সময় আছে। সঠিক পদক্ষেপ করুন। সঠিক পদক্ষেপ করতে যদি ব্যর্থ হন, তা হলে আরবের সমস্ত সুগন্ধী ঢাললেও আপনার ছোট হাত দুটি মিষ্ট হবে না। গঙ্গার পবিত্র বারি দিয়েও আপনার হাতের রক্ত ধোয়া সম্ভব হবে না।”

রাজ্যপাল চান ‘গ্রাউন্ড জিরো’ নির্বাচন কমিশনার

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে কোন ভূমিকা নিতে হবে, তাও বাতলে দেন রাজ্যপাল। সিভি আনন্দ বোস বলেন, “মানুষের হৃদয় ভেঙে গেছে। মানুষ বলছে, তাঁদের প্রিয়জনের জীবন ফেরাতে। ‘গ্রাউন্ড জিরো’ রাজ্য নির্বাচন কমিশনার হন।” নির্বাচন কমিশনারকে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের পরামর্শ- “এখনও সময় আছে।‌ সঠিক পদক্ষেপ করুন। স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে সিসি ক্যামেরা বসান। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করুন। স্ট্রংরুমের নিরাপত্তা বাড়ান। সাধারণ মানুষের কথা শুনুন। তাঁদের মতামত নিন।” বিরোধীদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোটে ছাপ্পা করতে নকল ব্যালট ছাপাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই বিষয়েও নজর দিতে বলেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, “অভিযোগ সত্য কিনা খতিয়ে দেখুন।”

পঞ্চায়েত ভোটে হানাহানি বন্ধে রাজ্য ঘুরছেন রাজ্যপাল। দিনহাটায় আহত একজনের সঙ্গে হাসপাতালে কথা বলছেন সিভি আনন্দ বোস। ছবি- টুইটার

সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিস্ফোরক ভাষণে তৃণমূল তেলেবেগুনে জ্বলছে। বিরোধীরা খুশি। তবে স্তুতি-সমালোচনা কোনোটাই সিভি আনন্দ বোসকে খুশি কিম্বা বিচলিত করছে না। রাজ্যপালের একটাই চাওয়া- রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে শান্তি। রাজ্যপাল রাজধর্ম পালন করছেন মাত্র। নবান্ন কিম্বা নির্বাচন কমিশন- এই ব্যাপারে প্রথম থেকেই সদর্থক ব্যবস্থা নিলে রাজভবনকে সক্রিয় হতে হত না- এমনটাই মনে করছে নাগরিক সমাজ।

Feature image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *