কলকাতা: মহা ধুমধামে শ্রীক্ষেত্রে পালিত হচ্ছে রথযাত্রা। পুরীতে জগন্নাথদেবের রথ টেনেছিলেন স্বয়ং চৈতন্য মহাপ্রভু। মহাপ্রভুর কৃপায় রথযাত্রা নিয়ে বাঙালির উন্মাদনা তাই উৎকলবাসীর চাইতে কম নয়। হুগলির মাহেশের রথ এবার ৬২৭ বছরে পড়ল। পুরীর পর মাহেশেই হয় দেশের বৃহত্তম রথযাত্রা। কলকাতার রাস্তায় সবথেকে বড় রথ নামে ইসকনের। মঙ্গলবার ইসকনের রথযাত্রার উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসার পর থেকেই কলকাতায় ইসকনের রথযাত্রার উদ্বোধক মমতা। এ’বারও রথের রশিতে টান দিয়ে যাত্রার সূচনা করেন তিনি।
রথযাত্রা শুরুর আগে ইসকন মন্দিরের গর্ভগৃহে বিগ্রহের সামনে পুজো দেন, মুখ্যমন্ত্রী। আরতি করেন। পরে রথে উঠে প্রভু জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার পুজো ও আরতি সারেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী প্রভু জগন্নাথের বড় ভক্ত। বিধানসভা ও লোকসভা ভোটের আগে-পরে তো বটেই, বছরে এমনিও দু’একবার পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে পুজো দিতে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জগন্নাথ মন্দিরের প্রধান পান্ডা বা দ্বৈতাপতি মুখ্যমন্ত্রীকে বিশেষ খাতির করেন। একুশে বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতার কালীঘাটের বাড়িতে বিশেষ যজ্ঞানুষ্ঠানে পুরীর দ্বৈতাপতি পৌরহিত্য করেছিলেন। এদিন রথযাত্রার সূচনা করার আগে ভাষণেও পুরীর দ্বৈতাপতির উল্লেখ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেন, “রথে ওঠার আগে পুরীর দ্বৈতাপতি আমাকে ফোন করেছিলেন। বাংলার জন্য দ্বৈতাপতি প্রভু জগন্নাথের কাছে প্রার্থনা করবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। আমি ওঁকে বলেছি, যদি জগন্নাথ অনুমতি দেন, তাহলে হয়তো আগামী রথযাত্রায় আমরা দিঘায় যে বিরাট মন্দির করছি, সেখানেই হয়তো আরও একটা আয়োজন করতে পারি। ওখানেই আমরা রথযাত্রা করার চেষ্টা করব।
ইসকনের রথযাত্রার উদ্বোধনে মমতা এবারও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন নুসরাত জাহান ও মিমি চক্রবর্তীকে। ছিলেন আরেক টলিউড অভিনেত্রী সায়ন্তিকাও। সৌরভ গাঙ্গুলির স্ত্রী ডোনা এবং প্রয়াত সাধন পান্ডের মেয়ে শ্রেয়াও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। ডোনা গাঙ্গুলির ডান্সট্রুপ রথের অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করে। ডোনা গাঙ্গুলিদের নাচতে দেখে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমারও ইচ্ছে করতে নাচে অংশ নিতে। কোমরে চোট থাকলেও আমি পারব। রোজ সকালে যোগব্যায়াম করি তো! শুধু হাতের মুদ্রাটা একটু দেখে নিলেই হয়ে যাবে।”
রথযাত্রায় আর রাজনীতি টানেন নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, “দেবতা শুধু কাঠের পুতুল নয়। মানুষের অন্তরাত্মাই দেবতার অন্তরাত্মা। দেবতা মানুষের মধ্যে থেকেই তৈরি হয়। দেবতার মধ্যে দিয়ে আমরা আমাদের হৃদয়বাসনা, মনোবাঞ্ছা, মনের ব্যথা, সুখদুঃখ প্রকাশ করি।” ওড়িশার বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃতদের আত্মার মুক্তি ও শান্তি চেয়েও প্রভু জগন্নাথদেবের কাছে প্রার্থনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মিন্টো পার্কের ইসকন মন্দির থেকে রথযাত্রা শুরু হয়ে এজেসি বোস রোড, শরৎ বোস রোড, হাজরা রোড এবং এক্সাইড মোড় হয়ে পার্ক স্ট্রিট ঘুরে আউট্রাম রোড ধরে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে গিয়ে ইসকনের রথযাত্রা শেষ হয়।
রথযাত্রায় দিনভর ব্যস্ত ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। পশ্চিমবঙ্গ দিবস উপলক্ষে বিধানসভা থেকে রেডরোড পর্যন্ত বিজেপি পরিষদীয় দলের পথযাত্রা শেষ করেই শুভেন্দু অধিকারী চলে যান উত্তর কলকাতায় সর্বভারতীয় কীর্তন, বাউল এবং ভক্তিমূলক গায়ক/গায়িকা শিল্পী সংসদ আয়োজিত রথযাত্রার উদ্বোধন করতে। পরে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু জীউ মন্দিরের রথযাত্রার মাঙ্গলিক পুজোয় অংশ নেন শুভেন্দু। এরপর বিরোধী দলনেতা মেছেদায় পৌঁছে ইসকনের রথযাত্রার উদ্বোধন করেন।
Feature Image- Collected.