ডেস্ক রিপোর্ট: আপাতত তিহাড় জেলেই থাকতে হচ্ছে গরু পাচার মামলায় ধৃত অনুব্রত মণ্ডলকে। বোলপুরের বাড়িতে কবে ফিরবেন ঠিক নেই। তবে আসানসোল সংশোধনাগারে ফিরতে পারলেও মন্দ হত না। কিন্তু ভাগ্য এখন সঙ্গে নেই কেষ্টদার। মোট কথা বাংলায় ফেরার জন্য আকুপাকু করছে কেষ্টর মনটা। কিন্তু হাকিমের হুকুম অন্যরকম। তিহাড় থেকে আসানসোল সংশোধনাগারে ফিরতে চেয়ে করা অনুব্রত মণ্ডলের আবেদন কানেই তুললেন না দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত। বৃহস্পতিবার সেই আবেদন নামঞ্জুর করে দিলেন বিচারক রঘুবীর সিংহ।
অনুব্রত মণ্ডল। যাঁকে বলা হত বীরভূমের বাঘ। বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়িতে বসেই শাসন করতেন গোটা বীরভূম জেলা। ২০২২-এর ১১ অগাস্ট সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে সেই অনুব্রত মণ্ডলই জেলে। বাংলা দিদির রাজ্য। আসানসোল সংশোধনাগারে অনুব্রত বেশ খাতিরদারির মধ্যেই ছিলেন বলে জানা গেছে। কিন্তু গরু পাচার মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট নাক গলাতেই কেষ্টর কষ্ট বাড়তে শুরু করে। ইডি দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের তোড়জোড় শুরু করতেই মামলার পর মামলা ঠুকে দিল্লিযাত্রা আটকে দিতে উকিলের পেছনে জলের মতো টাকা ঢেলেছেন অনুব্রত। কিন্তু শেষতক নিয়তিকে খন্ডাতে পারেন নি। গত ৭ মার্চ কেষ্ট মন্ডলকে বগলদাবা করে দিল্লির উড়ান ধরেন ইডির আধিকারিকেরা। দিল্লিতে ১৪ দিন ইডির হেফাজতে কাটানোর পর ২১ মার্চ থেকে তিহাড় জেলেই ঠাঁই বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির।
অনুব্রত তিহাড়ে পৌঁছানোর অনেক আগেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল তাঁর দেহরক্ষী সায়গল হোসেন। দিন কয়েক আগে অনুব্রত কন্যা সুকন্যাকেও একই মামলায় গ্রেফতার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ইডি হেফাজতে জেরাপর্ব শেষ হওয়ার পর সুকন্যাকেও তিহাড়ের মহিলা সেলে পাঠিয়ে দিয়েছে আদালত। একই মামলায় বাপ-বেটি জেলে, তাও আবার গরু পাচারের অভিযোগে- অতীতে বাংলার আর কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কপালে এমন সম্মান জুটেছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না।
তিহাড় থেকে আসানসোল জেলে ফিরতে চেয়ে অনুব্রত মণ্ডলের করা আবেদনের উপরে গত ১ মে রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে দীর্ঘ শুনানি হয়েছিল। বিচারককে বোঝাতে সেদিন চেষ্টার ত্রুটি রাখেন নি অনুব্রতের আইনজীবী। অনুব্রতের আইনজীবী বলেছিলেন, “৬০ দিন হয়ে গেলেও তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করতে ব্যর্থ ইডি। এখন তাকে আসানসোলের জেলে পাঠানো হোক। দিল্লিতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে আবার না হয় অনুব্রত মণ্ডলকে তিহাড়ে আনা যাবে।” অনুব্রতকে তিহাড় জেল থেকে সরিয়ে আসানসোলে পাঠানোর তীব্র বিরোধিতা করে অনেক যুক্তি দিয়েছিলেন ইডির আইনজীবী নীতেশ রানা। অনেক কথার মাঝে আসল কথাটা নীতেশ বলেছিলেন খোদ কেষ্ট মন্ডলকেই । অনুব্রতকে তিনি বলেছিলেন, “এখন থেকে তিহাড় জেলকেই নিজের বাড়ি ভাবতে শুরু করে দিন। আগামী ৩-৪ বছর তিহাড়ই আপনার ঘরবাড়ি।” বৃহস্পতিবার আর নতুন করে শুনানি হয় নি। বিচারক রঘুবীর সিংহ তৃণমূল নেতার আর্জি খারিজ করে জানিয়ে দেন, “অনুব্রত মণ্ডলের স্থানান্তর হচ্ছে না। তাকে তিহাড়েই থাকতে হবে।
গরু পাচারের টাকায় অনুব্রত মণ্ডল কোথায় কী করেছেন, তার বিস্তারিত লিস্ট নাকি এখন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট-এর তদন্তকারীদের হাতে। বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলছেন, “লোকটা পাপে শুধু একা ডোবে না, মেয়েটাকেও ডুবিয়েছে।” তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব যদিও অনুব্রত মণ্ডলকে বীরভূম জেলায় দলের সংগঠনের মাথায় এখনও বসিয়ে রেখেছেন। কেষ্ট মন্ডল তিহাড় থেকে বাংলায় ফেরার আগেই তিহাড়ে বাংলা থেকে নতুন কেউ রওনা দেন কিনা, এখন এটাই দেখার।
Feature Image is representational.