সিঙ্ঘভিকে সুপ্রিম কোর্টের সাফ কথা- আইনের কাছে বিশেষ খাতির আশা করবেন না
দিল্লি প্রতিনিধি: ইডি-সিবিআই নিয়ে বিরোধীদের মুখে কার্যত ঝামা ঘষে দিল শীর্ষ আদালত। কেন্দ্রের মোদী সরকার রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনে ইডি-সিবিআইয়ের মতো তদন্তকারী এজেন্সির অপব্যবহার করছে- এই অভিযোগে গত ২৪ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল ১৪টি বিরোধী দল। এতে কংগ্রেস, সিপিএম ও তৃণমূলও সামিল আছে। ইডি-সিবিআইয়ের অপব্যবহার রোধে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করুক- এই ছিল বিরোধীদের আর্জি। বুধবার মামলার প্রথম শুনানিতেই ১৪ দলের আর্জি খারিজ করে দিল প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি জেবি পার্দিওয়ালার ডিভিশন বেঞ্চ।
বিরোধীদের হয়ে মামলাটি লড়ছিলেন কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী মনু সিঙ্ঘভি। এদিন মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় সিঙ্ঘভিকে বলেন, “কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির অপব্যবহার করা হচ্ছে- শুধু মুখে বলাটাই যথেষ্ট নয় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ চাই। যখন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনতে পারবেন, তখন আবার আসবেন। সব শুনবো। এখন আসেন।” বিরোধীদের আশা ছিল, হয়তো সিবিআই-ইডির কার্যক্রমের উপরে ঢালাও স্থগিতাদেশ দিয়ে বসবে সুপ্রিম কোর্ট অথবা এই নিয়ে কেন্দ্রের অবস্থান জানতে চাইতে পারেন বিচারপতিরা। কিন্তু সেই আশায় জল ঢেলে দিয়ে বিরোধীদের অনেক কড়া কড়া কথা শুনিয়ে দেন তাঁরা।
সুপ্রিম কোর্টের সাফ কথা, “আইনের কাছে রাজনীতিকরা কোনও বিশেষ খাতির আশা করতে পারেন না।” যদিও পরিসংখ্যান দিয়ে মনু সিঙ্ঘভি শীর্ষ আদালতকে বোঝাতে চেয়েছিলেন, মোদী জামানায় কীভাবে বিরোধী দলগুলিকে শায়েস্তা করতে ইডি-সিবিআইকে ব্যবহার করছে কেন্দ্রীয় সরকার। সিঙ্ঘভির পেশ করা তথ্য অনুযায়ী ইউপিএ-র আমলে মোট ৭২জন রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত করেছিল ইডি-সিবিআই। এদের মধ্যে ৪৩জন বিরোধী দলের। মোদী জামানায় এখনও পর্যন্ত যে ১১৮জন নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, তাদের ৯৫ শতাংশ বিরোধী দলের। এই পরিসংখ্যানকে আমলই দেন নি প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের ডিভিশন বেঞ্চ। বিরোধীদের আইনজীবীকে প্রধান বিচারপতি বলেন, “নির্দিষ্ট মামলা নিয়ে আসুন। আমরা মোকাবিলা করব। কিন্তু কিছু পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে ভাবের বশে আইন প্রয়োগ করতে অপারগ আমরা।”
রাজনৈতিক দলগুলির পেশ করা পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে কেন কোনও রায় আদালত দেবে না, তাও ব্যাখ্যা করেন বিচারপতিরা। তাঁরা বলেন, “কোনও একটি নির্দিষ্ট মামলা থেকে পর্যাপ্ত তথ্য হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আদালতের তরফে সাধারণ নির্দেশিকা জারি করা অত্যন্ত বিপজ্জনক।” সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ মনে করে, “আইনের সাধারণ নীতিগুলি প্রয়োগ করে কোনও নির্দেশ দেওয়ার আগে আমাদের তথ্যের প্রয়োজন।” কোনও বিরোধী রাজনৈতিক নেতা যদি মনে করেন, তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই-ইডিকে অপব্যবহার করা হচ্ছে, তবে তাঁকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন বিচারপতিরা। কিন্তু রাজনৈতিক নেতারা আদালতের কাছে আলাদা কোনও অধিকার দাবি করতে পারেন না, যা সাধারণ নাগরিকদের নেই- বুধবার মনু সিঙ্ঘভিকে মনে করিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় সিঙ্ঘভিকে বলেন, “যখন আপনি যুক্তি দেখান, কেবল বিরোধী নেতাদের ঠান্ডা করার জন্যই তাঁদের উপর ইডি-সিবিআই মামলা দিচ্ছে, তখন এর জবাবটা রাজনৈতিক পরিসরেই নিহিত থাকে আদালতে নয়।” আদালতের কাজ ন্যায় প্রদান করা, রাজনৈতিক লড়াইয়ের মধ্যে আদালতকে টেনে আনা উচিত নয় – বিরোধীদের মামলা খারিজ করে দিয়ে এদিন দেশের শীর্ষ আদালত এটাই প্রমাণ করল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
Feature Image is representational.