তৃণমূলের নেতারা মামলা করার ফাঁকা আওয়াজই দেন, মামলা করেন না- রীতিমতো পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের
কলকাতা: কুণাল ঘোষের মানহানির মামলা করার হুমকিকে পাত্তাই দিলেন না মহম্মদ সেলিম। শুক্রবার আলিমুদ্দিনে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বলেন,”যাদের মানই নেই, তাদের আবার মানহানি!” শতরূপ ঘোষের বাইশ লাখি গাড়ি কেনা নিয়ে কটাক্ষের প্রতিক্রিয়ায় কুণালকে ‘টেস্ট টিউব বেবি’ বলে বিদ্রূপ করেছিলেন শতরূপ। এই মন্তব্যে তাঁর মানহানি হয়েছে বলে মনে করেন তৃণমূল মুখপাত্র। ‘টেস্ট টিউব বেবি’ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শতরূপ ঘোষকে আইনজীবীর চিঠি পাঠান কুণাল ঘোষ। চিঠি যায় বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু ও সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কাছেও। চিঠিতে কুণাল ও তাঁর পরিবারকে অপমান করার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা, অন্যথায় মামলার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়।
শুক্রবার সাংবাদিকেরা এই নিয়ে প্রশ্ন করলে সেলিম বলেন, “এইসব মামলা-টামলা মিথ্যে কথা। কোনও মামলা হয় নি। হবেও না। জীবনে তৃণমূলের কাছ থেকে এমন বহু মামলার হুমকি পেয়েছি। শেষ পর্যন্ত কোনও মামলাই হতে দেখি নি।” কুণালের মামলার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে সেলিমের শ্লেষ মিশ্রিত জবাব- “সেই সব মামলা ওঁর গুরুদেবরা, নিয়োগকর্তারা করবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন। সে সব হুমকিকেই পাত্তা দিই নি। আর শেষে এখন ওঁর মামলা নিয়ে কথা বলে সময় নষ্ট করব!”
অতীতে মুকুল রায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ কতজন তৃণমূল নেতা কতবার তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করার হুমকি দিয়ে শেষে চুপ মেরে গেছেন, সেই খতিয়ান দেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক। একবার ব্রিগেডের সভায় তৃণমূল নেতাদের নাম ধরে ধরে চোর বলে মুকুলের রোষে পড়েছিলেন মহম্মদ সেলিম। এই ঘটনায় মুকুল রায়ের মানহানির মামলার কথা উল্লেখ করে সেলিম তৃণমূল নেতাদের চরম কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, “সেবার এক সাংবাদিক বললেন, দাদা আপনার বিরুদ্ধে তো মুকুল রায় মানহানির মামলা করবেন। আমি তখন বলেছিলাম, যার মানই নেই, তার আবার মানহানি! সেই মামলা আজ পর্যন্ত হয় নি।” মহম্মদ সেলিম কি বোঝাতে চাইছেন তৃণমূলের নেতারা মান-সম্মানের ধার ধারেন না? প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলের।
কুণালের মানহানির জবাব দিতে গিয়ে এদিন অভিষেক প্রসঙ্গও টেনে আনেন মহম্মদ সেলিম। সেলিম বলেন, “অভিষেককে নাকি কয়লা পাচারকারীদের বন্ধু বলা যাবে না। ওঁর আইনজীবী ২৭২ পাতার দস্তাবেজ পাঠিয়ে বলেছিলেন, অভিষেকের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। নতুবা মামলা হবে। ওঁকে কয়লা পাচারকারীদের বন্ধু বলা যাবে না। সেই মামলাও আজ পর্যন্ত হয় নি।” ১৯৯৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় একটি মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়াত তৃণমূল নেতা অজিত পাঁজাও তাঁর বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকার মানহানির মামলা ঠোকার হুমকি দিয়ে শেষে পিছিয়ে আসেন বলে সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক। এই প্রসঙ্গ তুলে সেলিম বলেন, “উনি আমাকে ২ কোটি টাকার মানহানি মামলার নোটিশ পাঠিয়েছিলেন। অজিত পাঁজা আইনজীবী ছিলেন। আমি ওঁর পাঠানো চিঠি দেখে বলেছিলাম, কাগজটা টয়লেট পেপার হওয়ারও যোগ্য না। সেই মামলাও হয় নি।”
মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, বাম নেতারা কুণাল ঘোষের মানহানির মামলার হুমকিকে একেবারেই সিরিয়াসলি নিচ্ছেন না। উল্টে কুণাল সহ তৃণমূল নেতাদের গাত্রদাহ হয়, এমন অনেক কথা শুনিয়ে দিয়েছেন সেলিম। এখন দেখার সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের কটাক্ষের কী জবাব দেন তৃণমূল মুখপাত্র।
Feature Image is Representational.