তৃণমূলের জামানায় ছাত্র রাজনীতি কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে, বহু দিন থেকেই তার আঁচ পাচ্ছিল সাধারণ মানুষ। বলা ভাল ছাত্র রাজনীতি কোথায় নেমেছে! যাকে বলে রসাতল, সেখানেই ছাত্র রাজনীতিকে নামিয়েছে টিএমসিপি। যা সব কেচ্ছা কেলেঙ্কারি শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের নামে ছড়াচ্ছে, তাতে দলটির নাম হওয়া উচিত, টিএম ‘ছিঃ’ পি। এতদিন বিরোধীরা অভিযোগ করলে তা কুৎসা-অপপ্রচার বলে উড়িয়ে দিতেন তৃণমূলের নেতারা। কসবা আইন কলেজে ছাত্রীকে গণধর্ষণের পর কী বলবেন তাঁরা?
একটা সময় বাংলায় ছাত্র রাজনীতি ছিল রাজনীতিতে হাতেখড়ির জায়গা। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের রাজনীতি থেকে অনেক বিখ্যাত নেতা উঠে এসেছেন। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যোগমায়া দেবী কলেজে ছাত্র রাজনীতি করেছেন। আর আজ কলেজে রাজনীতি করতে গিয়ে ছাত্রীদের যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে নিজের দলের নেতাদের হাতেই। কসবা আইন কলেজে যে ছাত্রীটি গণধর্ষিত, সে টিএসসিপিই করত। ভাল পদ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ইউনিয়ন রুমে ডেকে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেছে মনোজিৎ মিশ্র সহ অন্যান্যরা। টিএমসিপি নেতা মনোজিৎ ছিল কলেজের সর্বেসর্বা এমনকি প্রাক্তনী হয়ে যাওয়ার পরেও।
ভাল পদ পাওয়ার জন্য টিএমসিপিতে দাদাদের টাকা দিতে হয়। এইভাবে যে পদ ক্রয় করে, পদাধিকারী হয়ে সেও দু’হাতে টাকা কামাই করে। তোলা কীভাবে আদায় করতে হয়, কলেজ থেকেই তা রপ্ত করে ফেলে টিএমসিপি করা ছাত্ররা। দলের মেয়েদের মনোজিৎ কী চোখে দেখত, তাদের নিয়ে কী করত, তা আজ সবাই জেনে গেছে। টিএমসিপি ও যুব তৃণমূলের ভেতরে মনোজিৎ নাকি একজন-দু’জন নয়, অসংখ্য। বলছেন অন্য কেউ নন রাজন্যা হালদার। সেই রাজন্যা, যাঁর মধ্যে মমতার পরেই তৃণমূলের আরেক ‘অগ্নিকন্যা’ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখেছিলেন অনেকেই। গত বছর একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে গরমাগরম ভাষণ দিয়ে হইচই ফেলে দেওয়া রাজন্যা এই বছর একুশে জুলাইয়ের আগে তৃণমূল নিয়ে মিডিয়ায় সামনে যা বলে চলেছেন, তা এক কথায় ভয়ঙ্কর।
টিএমসিপি ও যুব তৃণমূলের ভেতরে দলের নারীদের যৌন হয়রানি করা, যৌনতার বিনিময়ে নারীদের পদ দেওয়া, এ সবই নাকি রেওয়াজ। বলছেন সেই রাজন্যা হালদার, আরজিকর কান্ডের পর মুখ খুলে দলের সুপ্রিমোর রোষানলে পড়ে দল থেকে সাসপেন্ড হওয়ার আগে পর্যন্ত যাঁকে তৃণমূলের ভবিষ্যতের বড় নেতাদের একজন মনে করা হত। কোনও রাখঢাক না করেই রাজন্যা জানিয়েছেন, এমনকি এআই দিয়ে নির্মিত তাঁর নগ্নছবি মনোজিতের মোবাইলে আছে! দলের দাদারাই দলের ভেতরে তাঁকে কোনঠাসা করতে এআই দিয়ে তৈরি তাঁর নগ্নছবি মোবাইলে মোবাইলে ছড়িয়ে দিয়েছে বলে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন রাজন্যা হালদার। সেই ছবিই কসবা কান্ডে ধৃত মনোজিতের মোবাইলেও ঢুকেছে। কী ভয়ঙ্কর!
রাজন্যা হালদার বলেছেন, আমি দলের মধ্যে দাঁড়িয়ে দলের একাংশের নারী বিদ্বেষী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করে হেরে গেছি। খোদ রাজন্যার মতো হাইপ্রোফাইল নেত্রীকে দলের নারীলোলুপ নেতারা যে’ভাবে শাসানি দিয়েছেন, তাতে সহজেই অনুমান করা যায়, কেন যৌন হয়রানির শিকার হয়েও টিএমসিপি করা বহু মেয়ে চুপ করে গেছেন বা আছেন। কলেজে কলেজে টিএমসিপির নেতারা কীভাবে দলের নারী সদস্যদের যৌন নিগ্রহের সঙ্গে জড়িত, তা দলের শীর্ষ নেতাদের অজ্ঞাত নয় বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন রাজন্যা। রাজন্যা বলেছেন, টুকরো টুকরো করে এইসব খবর যদি আমার কান পর্যন্ত আসতে পারে, তবে দলের বড় বড় নেতানেত্রীদের কানে পৌঁছায় নি, তা হতে পারে না।
এখনও তৃণমূলের শুদ্ধিকরণের আশা রাখেন রাজন্যা হালদার! রাজন্যার এটা গভীর আশাবাদ না ফের দলে বড় জায়গা পাওয়ার ধান্ধা, তা রাজন্যাই ভাল জানেন। যে দলের নেতারা নিজের দলের নেত্রীর ছবি এআই দিয়ে বিকৃত করে মোবাইলে মোবাইলে ছড়িয়ে দিয়ে পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করতে পারে, সেই দল একদিন শুদ্ধ হবে, এই আশা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আর করে না। যে দল এত নোংরা, রাজ্যটার শুদ্ধিকরণ করতে সেই দলকে বরং ক্ষমতা থেকেই বিদায় করা জরুরি বলে মনে করেন জনগণ।
Feature graphic is representational and designed by NNDC.