মীরার মিরাকল: ২ লক্ষ টাকা নিয়ে ব্যবসায় নেমে ১,২৯০ কোটি টাকার মালকিন!

মীরার মিরাকল: ২ লক্ষ টাকা নিয়ে ব্যবসায় নেমে ১,২৯০ কোটি টাকার মালকিন!


বিশেষ প্রতিবেদন: দুই লক্ষ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করে আজ ১,২৯০ কোটি টাকার মালিক। ম্যাজিক! তাই না। ম্যাজিকটি যিনি ঘটিয়েছেন, তিনি একজন নারী। নাম মীরা কুলকার্নি। উত্তরাখণ্ডের তেহরি গাড়‌ওয়ালের মেয়ে। মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। পড়ালেখা সিমলার লরেটো কনভেন্টে। এর পর চেন্নাইয়ের স্টেলা মারিস কলেজ থেকে ফাইন আর্টসে স্নাতক। পড়ালেখা শেষ করার আগেই ১৯ বছর বয়সে বাবা-মায়ের অমতে প্রেমে পড়ে বিয়ে এবং গৃহত্যাগ। বিবাহিত জীবন সুখের হয় নি মীরার। পতিদেবটি ছিলেন পাঁড় মাতাল আর চরম অকর্মণ্য। বিবাহবিচ্ছেদ শেষে দুটি শিশুসন্তানকে সঙ্গে নিয়ে মীরা যখন  বাপের বাড়ি ফিরে আসেন, তখন তাঁর বয়স আটাশ। 

দিল্লিতে পিতৃগৃহে ফিরেও শান্তি নেই।  বাবা ও মা- দু’জনকেই পরপর হারিয়ে মীরা হয়ে পড়েন সহায়-সম্বলহীন সিঙ্গেল মাদার। নিজের উপার্জন বলতে তখন কিছুই ছিল না তাঁর। এক ছেলে ও এক মেয়েকে বড় করতে হবে। শেষে বাপের বাড়ির একটা অংশ ভাড়া দিয়ে দিলেন।  ভাড়া বাবদ যে টাকা পেতেন, তা দিয়েই দুই সন্তানকে বড় করেন তিনি। মেয়েটির বিয়ে দেওয়ার পর মীরার মাথায় যখন প্রথম ব্যবসার চিন্তা আসে, তখন তাঁর বয়স পঁয়তাল্লিশ। ঘরে মোমবাতি ও সাবান অর্থাৎ ‘হ্যান্ডমেড হার্বাল সোপ’ তৈরি করা শুরু করেন মীরা‌। একটু লাভের মুখ দেখতেই ব্যবসাটাকে বাড়ানোর কথা ভাবলেন তিনি।

২০০০ সালে ব্যাঙ্ক থেকে দু’লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে শুরু করেন আয়ুর্বেদিক প্রসাধনী পণ্যের ব্যবসা। একটি গ্যারেজঘর ভাড়া নিয়ে মীরা কুলকার্নি চালু করেন তাঁর নিজের কোম্পানি ‘ফরেস্ট এসেনশিয়ালস’। দু’জন কর্মী আর দু লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে ব্যবসার শুরু। নিজের রাজ্য উত্তরাখণ্ডের তেহেরি গাড়‌ওয়ালের জঙ্গল থেকে ভেষজ উপাদান সংগ্রহ করে এনে বিভিন্ন ধরণের ‘স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট’ উৎপাদন করা শুরু করে মীরার ‘ফরেস্ট এসেনশিয়ালস’। 

আর থামেন নি মীরা কুলকার্নি। এক বছর পরেই ‘Hyatt Regency’ গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তি। হায়াত গ্রুপের সমস্ত হোটেলের জন্য ভেষজ সাবান বানানো শুরু করল মীরার কোম্পানি। ২০০৩ সালে রাজধানী দিল্লির খান মার্কেটে  নিজের কোম্পানির প্রথম আউটলেট খুললেন তিনি। পরের পাঁচ বছরের মধ্যে মীরার কোম্পানি করল ৬ কোটি টাকা মুনাফা! দু লক্ষ টাকা মূলধন দিয়ে ব্যবসা শুরু করে মাত্র ৮ বছরের মাথায় ৬ কোটি টাকা লাভ। ম্যাজিক নয় তো কী!

৪৫ বছর বয়সে ২ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করে ১,২৯০ কোটি টাকার মালিক মীরা কুলকার্নি। সংগৃহীত ছবি

আজকে সারা দেশে ফরেস্ট এসেনশিয়ালসের নিজস্ব আউটলেটের সংখ্যা ১৩০। পৃথিবীর ১২০টি দেশে নিজের কোম্পানির প্রসাধনী সামগ্রী রফতানি করেন মীরা কুলকার্নি। ভারত জুড়ে ৩০০টির‌ও বেশি ফাইভ স্টার হোটেলে ‘ফরেস্ট এসেনশিয়ালস’-এর বিশুদ্ধ আয়ুর্বেদিক প্রোডাক্টগুলো ব্যবহার করা হয়। 

ব্যবসা থেকে মীরার কোম্পানির বছরে মুনাফা ৪৩২ কোটি টাকা। আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি ৪৫ বছরে ব্যবসা শুরু করেন মীরা কুলকার্নি। এখন তাঁর ৬৮ বছর বয়স। দু লক্ষ টাকা দিয়ে যে উদ্যোগের শুরু, আজ তা দাঁড়িয়েছে ৮,৩০০ কোটি টাকার বিশাল সাম্রাজ্যে। মীরা কুলকার্নির ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। মীরার মোট ব্যক্তিগত সম্পদের মূল্য ১,২৯০ কোটি টাকা। ভারতের শীর্ষতম ধনাঢ্য মহিলাদের তালিকায় তাঁর নাম আছে। 

মীরা কুলকার্নির লেখা ব‌ই: ‘এসেনশিয়ালি মীরা’, নিজের উদ্যোগী হ‌ওয়ার যাত্রাপথ তুলে ধরেছেন মীরা।

সফল উদ্যোক্তা মীরা কুলকার্নি বলেন, “জীবনে হতাশার কোনও স্থান নেই। দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি থাকলে সবথেকে খারাপ সময়েও আপনি ঘুরে দাঁড়াতে পারেন।  মীরার জীবন সত্যিই একটা মিরাকল এবং  আমাদের তা অনুপ্রাণিত করে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *