হাসিনার শাসনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প শিবির! বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেবেন ট্রাম্প?

হাসিনার শাসনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প শিবির! বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেবেন ট্রাম্প?


উগ্রপন্থা দমনে শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রশংসা করলেন ট্রাম্প শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী লিসা কার্টিস। গ্রাফিক্স: এন‌এনডিসি

শনিবার প্রচারিত দুটি সংবাদ ইউনূসের হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনাকে উৎখাতের পর থেকেই বাংলাদেশ জুড়ে সংখ্যালঘুদের উপর ভয়ঙ্কর নির্যাতন নেমে আসে। অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মহম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পরেও পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয় নি। পুলিশ বিভাগ থেকে বেছে বেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বী আধিকারিকদের বরখাস্ত করা হচ্ছে। স্কুল-কলেজে হিন্দু শিক্ষকেরা লাঞ্ছিত হচ্ছেন। বিভিন্ন সরকারি দফতরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কর্মীদের ধর্মান্তরিত হতেও চাপ দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। গ্রামে গ্রামে দরিদ্র হিন্দু পরিবারগুলির উপরেও এক‌ই চাপ আসছে বলে খবর মিলেছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন বন্ধে ইউনূস সরকার ব্যর্থ হ‌ওয়ায় শনিবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প শিবিরের অন্যতম নেতা লিসা কার্টিস। ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রথম দফায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন তাঁর ওভাল অফিসে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন লিসা।

শেখ হাসিনার শাসনকালের প্রশংসায় রিপাবলিকান শিবির

পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লিসা কার্টিস বলেন, “চরমপন্থী, ধর্মান্ধ মৌলবাদী ও জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিকে দমন করতে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূসের তিন মাসের শাসনে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের নতুন প্রশাসন চরমপন্থীদের বাড়বাড়ন্ত দমনে ব্যর্থ। পাশাপাশি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীদের নিরাপত্তা প্রশ্নেও তেমন কোনও অগ্রগতি হয় নি।” ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে লিসা বলেন, “শেখ হাসিনাকে উৎখাতের পর থেকেই বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ এক যুগ সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে, যা দেশটির ভবিষ্যতের গতিপথ ঠিক করে দেবে।” হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশ ঠিক কোন পথে যাচ্ছে, তা নিয়ে বিদায়ী বাইডেন প্রশাসনের উদ্বেগ না থাকলেও হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রয়েছে। লিসা কার্টিস বলেন, “বলা হয়েছিল যে, শেখ হাসিনার শাসনের অবসানের পর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, দেশটির বর্তমান সরকার জঙ্গিদের জেল থেকে ছেড়ে দিচ্ছে। মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের উপর আক্রমণ ঘটছে এবং তা বন্ধে প্রশাসন কোন‌ও কার্যকর পদক্ষেপ করতে ব্যর্থ।”

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে যথেষ্ট উদ্বেগজনক দাবি করে লিসা কার্টিস জানান, “বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার ইতিহাস আছে। ২০১৬ সালে ঢাকার হোলি আর্টিজানে ভয়ঙ্কর হামলা চালানো হয়েছিল। আইএসের মতাদর্শে বিশ্বাসী কিছু গোষ্ঠীও সেখানে কাজ করছে। শেখ হাসিনা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে কোনঠাসা করে ফেলেছিলেন। মুহাম্মদ ইউনূসের জামানায় মৌলবাদী শিবিরের পুনরায় শক্তি সঞ্চয়ের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক ও ভীষণ উদ্বেগের।” লিসা কার্টিস ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের একজন। ২০১৭ থেকে ২০২১- ট্রাম্প সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া সংক্রান্ত ডিরেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন লিসা। বাংলাদেশ নিয়ে লিসা কার্টিসের বক্তব্যকে তাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।

বিতর্কিত মাহফুজ আলমকে নিজের প্রশাসনে বড় জায়গা দিয়েছেন ইউনূস। মাহফুজ নিষিদ্ধ হিজবুত তাহরীর তাত্ত্বিক নেতা বলে গুঞ্জন। ছবি- সংগৃহীত

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁর প্রশাসন বাংলাদেশের পরিস্থিতির দিকে যথেষ্ট নজরদারি চালাবে বলে সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দিয়েছেন লিসা কার্টিস। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বাংলাদেশ সংক্রান্ত নীতি নিয়ে তাঁর যে জোরালো আপত্তি আছে, নির্বাচনী প্রচারকালেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন ট্রাম্প। আমেরিকার বসবাসরত ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের দেওয়ালির শুভেচ্ছা বার্তা দিতে গিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে ট্রাম্প বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য বাইডেনকে দায়ী করে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট থাকলে বাংলাদেশে কক্ষনো এই পরিস্থিতি তৈরি হত না।

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চায় আমেরিকার ইন্ডিয়ান ডায়াস্পোরা

অন্যদিকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিকদের তরফেও শনিবার জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা সহ শক্ত ব্যবস্থা নিতে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে আবেদন জানাবেন তাঁরা। ট্রাম্প জানুয়ারিতে আমেরিকার দায়িত্ব নেবেন। আমেরিকায় ইন্ডিয়ান ডায়াস্পোরার অন্যতম নেতা ড. ভরত বড়াই সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, “বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর ভয়াবহ দমন-পীড়ন চলছে। হিন্দুদের মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করা হচ্ছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় সাহসী বক্তব্য দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি একজন নির্ভীক মানুষ। বাংলাদেশে হিন্দুদের পরিস্থিতির যদি উন্নতি না হয়, তবে বাংলাদেশের উপরে যাতে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়, সেই বিষয়ে প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করবেন তাঁরা।” ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁদের দাবি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন বলে আশাবাদী চিকিৎসক ভরত বড়াই।

মার্কিন কংগ্রেস‌ও এখন রিপাবলিকানদের দখলে। কংগ্রেসের কাছেও বাংলাদেশের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরবেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানরা। কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানান ভরত। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ রপ্তানি থেকে যা আয় করে তার ৮০ শতাংশ‌ই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই রপ্তানির প্রায় পুরোটাই হয় আমেরিকায়। পোশাক রপ্তানিতে যদি নিষেধাজ্ঞা চাপানো যায়, তাহলে বাংলাদেশ বাপ বাপ করে শুধরে যাবে।”

মৌলবাদীদের হাতে দেশটাকে তুলে দিয়ে পালাবেন ইউনূস!

শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের প্রতি কতটা খড়গহস্ত হবেন, তা এখন‌ই আন্দাজ করা কঠিন। তবে আমেরিকার আগামী সরকার রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় ভারতে নির্বাসিত শেখ হাসিনা যতটা উৎফুল্ল, ততটাই বেজার ইউনূস। ঘরেও ইউনূসের সমালোচকের সংখ্যা বাড়ছে। বাইরে ট্রাম্প শিবির কড়া কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। ৮৪ বছরের ইউনূস সংস্কারের কথা বলে দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশকে শেষ পর্যন্ত মৌলবাদীদের হাতে তুলে দিয়ে যাবেন বলে আশঙ্কা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।

Feature graphic is representational and designed by NNDC.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *