ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশের কোনও জায়গায় নয়, বিজয়া দশমীতে দুর্গাপ্রতিমা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটল পশ্চিমবঙ্গে। রবিবার হাওড়ার শ্যামপুরে বিভিন্ন পুজোমন্ডপে হামলা চালিয়ে মন্ডপে আগুন ও ভাঙচুরের পাশাপাশি বেদী থেকে টেনে নামিয়ে মাদুর্গার প্রতিমা ভেঙে গুঁড়িয়ে কার্যত মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকেরা। পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্ব এই ঘটনায় নীরব থাকলেও বিজেপির তরফে একমাত্র সরব রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ঘটনার পরপরই নিজের ভেরিফায়েড এক্স হ্যান্ডেলে বিষয়টি বিস্তারিত উল্লেখ করে অবিলম্বে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজ্য পুলিশের ডিজি, রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব, হাওড়ার জেলাশাসক ও গ্রামীণ হাওড়ার পুলিশ সুপারের কাছে একযোগে দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
ঘটনার সূত্রপাত শ্যামপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতি আয়োজিত দুর্গাপুজোর বসে আঁকো প্রতিযোগিতা ঘিরে। বসে আঁকো প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তু ছিল সম্প্রীতি ও মনীষীদের বাণী। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী কোনও বাচ্চা ভিন্ন ধর্মের এক প্রবর্তকের বাণীর পাশাপাশি তাঁর ছবিও এঁকেছিল এবং সেই ছবি সম্প্রীতির নিদর্শন হিসেবে প্রদর্শনীতে স্থান দিয়েছিল পুজোকমিটি। প্রদর্শনীতে তাদের পয়গম্বরের ছবি দেখে প্রতিবাদ জানান স্থানীয় ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা। সঙ্গে সঙ্গে ছবি সরিয়েও দেন পুজোকমিটির সদস্যরা। কিন্তু তাতে রাগ পড়ে নি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের। কিছুক্ষণের মধ্যেই দলে দলে সেই সম্প্রদায়ের লোকেরা ঘটনাস্থলে এসে ব্যবসায়ী সমিতির মন্ডপে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেয় ও ভাঙচুর চালায়। এরপর দুর্গাপ্রতিমার গায়ে হাত দিতেও দ্বিধা করে নি বিধর্মীরা। দেবীদুর্গার প্রতিমা সহ অন্যান্য প্রতিমা ভেঙে গুঁড়িয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেয় তারা।
মন্ডপ ও প্রতিমা ভাঙার অভিযান শুধু শ্যামপুর বাজারেই সীমাবদ্ধ ছিল না। শ্যামপুর এলাকার আরও কয়েকটি মন্ডপে হামলা চালায় উন্মত্ত জনতা। মন্ডপ বিধ্বস্ত হয় তাদের হাতে। এবং যতগুলি মন্ডপে হামলা চলেছে, তার প্রত্যেকটিতেই প্রতিমা ভাঙা হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রতিমা নিয়ে বিসর্জনের ঘাটের দিকে যে দলগুলি যাচ্ছিল, তাদের উপরেও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এমনকি বিসর্জনের ঘাটেও হামলা চালানো হয়েছে বলে এক্স হ্যান্ডেলে অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু।
সোমবার বীরভূমের সিউড়িতে জেলা বিজেপি আয়োজিত বিজয়া সম্মিলনীতে উপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। শ্যামপুরে পুজোমন্ডপ ও দুর্গাপ্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা উল্লেখ করে সিউড়িতে বিরোধী দলনেতা বলেন, “গতকাল শ্যামপুরে যত মায়ের মূর্তি আছে, ভেঙে দিয়েছে। অথচ মমতার মুখ বন্ধ। কোনও কথা নেই। আর সিপিএমকে পাবেন না। ওরা হচ্ছে সেক্যু আর মাকু। এদের পাবেন না আপনি। তাই ভারতীয় জনতা পার্টিই একমাত্র পশ্চিমবাংলায় রাষ্ট্রবাদ, সুশাসন ও নারীসুরক্ষা দিতে পারে।”
মহাষ্টমী ও মহানবমী তিথির দিন আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটা ও কলকাতার গার্ডেনরিচ এলাকায় দুটি পুজোতেও বাধা এসেছে। মন্ডপে ঢাক-কাঁসর, মাইক বাজবে না এমনকি শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনি দেওয়া যাবে না, এই দাবিতে দুটি মন্ডপে চড়াও হয়েছিল এলাকার ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা। এই দুই ঘটনাতেও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বিরোধী দলনেতা। নবমীর সন্ধ্যায় গার্ডেনরিচের সেই পুজোমন্ডপে গিয়ে প্রতিমা দর্শনও করে আসেন শুভেন্দু অধিকারী।
রবিবার শ্যামপুরে যখন মন্ডপের পর মন্ডপ আক্রান্ত হচ্ছিল, যখন দুর্গাপ্রতিমা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছিল উন্মত্ত জনতা, তখন পুলিশ কার্যত তাদের সামনে আত্মসমর্পণ করে বলে স্থানীয় পুজো কমিটিগুলির সদস্যদের অভিযোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় ১৪৪ (বিএনএস-১৬৩) ধারা জারি করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এ’বারের শারদোৎসবে তিন ঘটনার জেরে রাজ্যের বাঙালিহিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এই প্রশ্ন উঠে গেছে, এখন থেকে কি তাহলে আর পশ্চিমবঙ্গে শান্তিতে দুর্গাপুজোও করা যাবে না?
Feature graphic designed by NNDC.