পলিটিক্যাল ডেস্ক: ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ঢাকার ধানমন্ডির বাসভবনে সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৪৯ বছর পর অগাস্টের ৫ তারিখ দুপুর দুটো নাগাদ বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে গণভবন থেকে পালিয়ে বাঁচলেন শেখ হাসিনা। গণভবন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন। গণভবন ছাড়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই গণভবনে ঢুকে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর বেডরুম থেকে হেঁসেল- সবকিছু তছনছ করে জনতা।
শোনা যাচ্ছে, সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে গণভবন ছেড়ে ঢাকার কোনও বিমানঘাঁটি থেকে কার্গো বিমানে চড়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন হাসিনা ও তাঁর বোন। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ গাজিয়াবাদের হিন্ডনে ভারতীয় বায়ুসেনার বিমানঘাঁটিতে হাসিনাকে বহনকারী কার্গো বিমানটি অবতরণ করে বলে জানা গেছে। যে কার্গো বিমানে শেখ হাসিনা ঢাকা ছেড়েছেন, তা বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বলে সূত্রের খবর। শেখ হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবেন না অন্য কোনও দেশে যাবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। শেখ হাসিনা ব্রিটিনের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলেও ব্রিটিশ সরকার তাতে সাড়া দেয় নি বলে একটা মহল জানাচ্ছে।
এদিকে শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বিবিসিকে জানিয়েছেন, তাঁর মা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না। জয় বলেছেন, “রবিবার রাত থেকেই পদত্যাগের কথা ভাবছিলেন মা। পরিবারের অনুরোধে নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি দেশত্যাগ করেছেন।” দেশের পরিস্থিতি দেখে শেখ হাসিনা খুব হতাশ বলে জানিয়েছেন জয়। তিনি বলেন, “তাঁর রাজনীতি এখানেই শেষ। আমি এবং আমার পরিবার- আমাদের যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে। তাঁর (শেখ হাসিনা) বয়স সত্তরের ঘরে। তাঁর এত পরিশ্রমের পর একটা ছোট্ট অংশ তাঁর বিরুদ্ধে এমন বিক্ষোভ করল! এ’সব দেখে তিনি ( শেখ হাসিনা) খুবই হতাশ।”
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজ আওয়ার অনুষ্ঠানে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়। বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসকে জয় বলেছেন, “শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন। তিনি যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন এটি একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র ছিল। এটি একটি গরীব দেশ ছিল। আজকের দিন পর্যন্ত বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম ‘রাইজিং টাইগার’ হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু তাঁর (শেখ হাসিনা) সব পরিশ্রমের ফসল ছোট্ট একটি অংশ নষ্ট করে দিল। দেশের অবস্থা দেখে তিনি হতাশ।” উল্লেখ্য, আমেরিকা প্রবাসী সজীব ওয়াজেদ জয় শেখ হাসিনার সরকারে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন।
ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে ২০১৮ সালেই সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সহ সমস্ত কোটার বিলোপ ঘোষণা করে অধ্যাদেশ জারি করেছিল শেখ হাসিনার সরকার। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ জুন সরকারের সেই অধ্যাদেশ বাতিল করে দিয়ে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের পক্ষে রায় দেয় হাইকোর্ট। এরপর থেকেই ফের রাজপথে ছাত্র সমাজ। ছাত্রদের কোটা বিরোধী অরাজনৈতিক আন্দোলন যে সরকার পতনের কারণ হবে, তা শেখ হাসিনার অতি বড় রাজনৈতিক শত্রুও কল্পনা করতে পারে নি। সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায়কে বাতিল করে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা প্রায় তুলে দিলেও শেষ পর্যন্ত মসনদ রক্ষা করতে পারলেন না হাসিনা। হাসিনা যখন ছাত্রদের দাবির কাছে নত হলেন তখন ছাত্রদের আন্দোলন গণ আন্দোলনে পরিণত হয়ে গেছে। ১৮ জুলাই থেকে আন্দোলন হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। বিক্ষোভ দমাতে গুলি চালায় পুলিশ। ১৮ জুলাই থেকে ঢাকা সহ গোটা বাংলাদেশের পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। ১৮ থেকে ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে প্রায় তিনশো জনের মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশে।
সেনা নামিয়ে, দফায় দফায় কারফিউ জারি করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে নি শেখ হাসিনার প্রশাসন। শেষ মুহূর্তে হাসিনার পাশ থেকে সরে যায় সেনা বাহিনী। সোমবার সকালে ঘড়ির কাঁটা দশটায় পৌঁছানোর আগেই কারফিউ উপেক্ষা করে ঢাকার রাজপথের দখল নেয় জনতা। দুপুরে গণভবনে পৌঁছে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করার জন্য ৪৫ মিনিটের আল্টিমেটাম বেঁধে দেন বাংলাদেশ আর্মির জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ইস্তফা দেওয়ার আগে শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে চেয়েছিলেন বলে খবর। কিন্তু সেনাবাহিনী প্রধান হাসিনার সেই অনুরোধ রাখেন নি।
Feature image: Collected.