ডেস্ক রিপোর্ট: মালদ্বীপের চিনপন্থী সরকার ভারত বিরোধিতার যে বেলুনটি ফুলিয়েছিল, তার হাওয়া বেরিয়ে যেতে শুরু করেছে। গত নভেম্বরের নির্বাচনে ভারতবন্ধু ইব্রাহিম মহম্মদ সোলিহকে পরাস্ত করে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন চিনপন্থী মহম্মদ মুইজ্জু। মুইজ্জু প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসার পর থেকেই কোনও রাখঢাক না রেখেই ভারত বিরোধী অবস্থান নিতে থাকেন। দেশ থেকে ভারতীয় সেনা সরিয়ে নেওয়ার আল্টিমেটাম থেকে প্রেসিডেন্ট হয়েই চিন সফরে যাওয়া- মুইজ্জুর একাধিক পদক্ষেপ ও তির্যক মন্তব্যে হঠাৎ করেই মালদ্বীপের সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে যায় সাউথ ব্লকের। মুইজ্জুর প্রেসিডেন্ট হওয়ার বছর ঘুরতে এখনও চারমাস বাকি। এরমধ্যেই পর্যটন নির্ভর মালদ্বীপের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার মুখে। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে ভারতীয় পর্যটকদের ফিরিয়ে আনতে সোমবার ভারত সফরে এসেছেন মালদ্বীপের পর্যটনমন্ত্রী ইব্রাহিম ফয়সল।
ঘটনাটিকে ভারতের মানভঞ্জনে মুইজ্জুর প্রথম বড় পদক্ষেপ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ভারতীয় পর্যটকেরা আবার যাতে মালদ্বীপমুখী হন, সেই লক্ষ্যেই নিজের সরকারের পর্যটনমন্ত্রীকে ভারতে পাঠিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু। ভারত মহাসাগরের বুকে ১,১৯২টি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কোরাল দ্বীপের সমষ্টি মালদ্বীপের মোট আয়তন মাত্র ২৯৮ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা মাত্র ৫ লক্ষ ১৫ হাজার ১৩২। মালদ্বীপের প্রকৃতি নিঃসন্দেহে নয়নাভিরাম। এবং তা উপভোগ করতে প্রত্যেক বছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকেরা ছুটে আসেন মালদ্বীপে। মালদ্বীপ ভ্রমণে যাওয়া বিদেশিদের তালিকায় এতদিন ভারতীয়রাই ছিলেন সবার আগে। এরপর রাশিয়া। তিন নম্বরে চায়না।
২০২৩ সালে মালদ্বীপ ভ্রমণে গিয়েছিলেন ২ লক্ষ ৯ হাজার ১৯৮ জন ভারতীয় পর্যটক। চলতি বছরের প্রথম চার মাসের পরিসংখ্যান বলছে মালদ্বীপে ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা ৪২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে লাক্ষাদ্বীপ সফরে গিয়ে ভারতীয় পর্যটকদের আরও বেশি সংখ্যায় লাক্ষাদ্বীপ সফরে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোদী লাক্ষাদ্বীপের সৌন্দর্য ও তার পর্যটন সম্ভাবনা নিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করতেই মোদীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করে বসেন মুইজ্জু সরকারের দুই মন্ত্রী। প্রতিবাদে ভারতে ‘বয়কট মালদ্বীপ’-এর ঢেউ ওঠে। এতে সুর মেলান বলিউডের সেলিব্রেটিরাও। রাতারাতি লাক্ষাদ্বীপ নিয়ে আগ্রহ বেড়ে যায় ভারতীয়দের। মালদ্বীপ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন ভারতের ভ্রমণপিপাসুরা। চাপে পড়ে ওই দুই মন্ত্রীকে ক্যাবিনেট থেকে বিদায় করেন প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু। কিন্তু তাতেও ভারতীয়দের খুশি করা যায় নি। ভারতীয় পর্যটকদের ঘাটতি মেটাতে চিনের শরণাপন্ন হন চিনপন্থী মহম্মদ মুইজ্জু। বেজিং সফরে গিয়ে মুইজ্জু তাঁর দেশে বেশি বেশি করে চিনা পর্যটক পাঠাতে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কাছে আবেদন জানান।
কিন্তু চিনা পর্যটক দিয়ে যে ভারতীয় পর্যটকদের শূন্যস্থান পূরণ সম্ভব নয়, চলতি বছরের প্রথম চার মাসেই তা টের পেয়ে যায় মালদ্বীপ সরকার। মালদ্বীপের জিডিপির ২৫ শতাংশ সরাসরি আসে পর্যটন খাত থেকে। বাকি ৭৫ শতাংশের পেছনেও পরোক্ষে পর্যটনের বড় অবদান। পর্যটন থেকে আসা রাজস্বে টান পড়তেই মালদ্বীপের ভারত বিরোধিতার সুর নরম হতে শুরু করে। মে মাসেই মালদ্বীপের পর্যটনমন্ত্রী ইব্রাহিম ফয়সল ভারতীয় পর্যটকদের কাছে মালদ্বীপে ঘুরতে আসার আবেদন জানান। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছিলেন, “আমাদের দেশ পর্যটনের উপরে খুব নির্ভরশীল। দয়া করে মালদ্বীপে বেড়াতে আসুন।” ভারতীয়দের মন ফেরাতে এবার পর্যটনমন্ত্রীকেই ভারত ভ্রমণে পাঠিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু।
ভারতীয়দের মালদ্বীপ ভ্রমণে ফের উৎসাহিত করতে সপ্তাহ ভর ভারতের শহরে শহরে ঘুরবেন ইব্রাহিম ফয়সল। ‘ওয়েলকাম ইন্ডিয়া’ আওয়াজ তুলে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দিল্লিতে রোড শো করবেন ইব্রাহিম। ১ অগাস্ট মুম্বাইয়ে রোড শো করবেন তিনি। ৩ অগাস্ট বেঙ্গালুরুতে রোড শো সেরে তবে দেশে ফিরবেন মালদ্বীপের পর্যটনমন্ত্রী। এখন চিনপ্রীতি ঠিক রেখেই ভারতের সঙ্গে তিক্ততার অবসানে মরীয়া মুইজ্জু। গত শুক্রবার দেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রচারিত ভাষণে ঋণ পরিশোধের শর্ত সহজ কথায় চিনের পাশাপাশি ভারতের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট। চিনের প্ররোচনায় বরাবরের বন্ধু ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করার পরিণতি যে শেষ পর্যন্ত ভাল হবে না, ইতিমধ্যেই মুইজ্জুকে অনেকবার সেই সতর্ক করে দিয়েছে মালদ্বীপের বিরোধী দল থেকে ব্যবসায়ী মহল। অর্থনীতি ও জনগণের চাপেই ভারত সম্পর্কে মোলায়েম হচ্ছেন মুইজ্জু।
Feature graphic is representational and designed by NNDC.