ডেস্ক রিপোর্ট: নীতি আয়োগের বৈঠক ছেড়ে রণংদেহী মেজাজে মমতা। বৈঠকে মাইক বন্ধ করে দিয়ে তাঁকে অপমান করা হয়েছে বলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ। বলতে না পেরে বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করেন তিনি। শনিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে নীতি আয়োগের বৈঠক বসেছিল। বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সাত মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় বাজেটে বৈষম্যের প্রতিবাদে বৈঠক বয়কট করেন। বয়কটের সিদ্ধান্ত ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সভায় মঙ্গলবার বাজেট পেশের দিন সন্ধ্যাতেই নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জোটের সিদ্ধান্তে সায় না দিয়ে নিজের রাস্তায় চলেন মমতা। শুক্রবার দিল্লিতে রওনা দেওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মমতা জানান, প্রতিবাদের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করতে নীতি আয়োগের বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন তিনি।
শনিবার নীতি আয়োগের বৈঠক ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের সামনে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের ২০ মিনিটের বেশি বলার সুযোগ দেওয়া হলেও আমাকে পাঁচ মিনিটের বেশি বলতে দেওয়া হয় নি। তার আগেই মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রতিবাদে আমি বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি।” বলার মাঝেই মাইক বন্ধ করে দিয়ে নীতি আয়োগের বৈঠকে তাঁকে অপমান করা হয়েছে বলে মমতার অভিযোগ। নীতি আয়োগের মাথায় মোদী। অপমানের জন্য মোদীর দিকেই আঙুল তুলেছেন মমতা। বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে থেকেই নীতি আয়োগ নিয়ে গরম গরম প্রতিক্রিয়া দিচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। নীতি আয়োগ অকার্যকর, তুলে দিয়ে ফের যোজনা কমিশন চালু করতে হবে- এমনটাই মনে করেন মমতা। মোদী ক্ষমতায় আসার পর যোজনা কমিশন তুলে দিয়ে ২০১৫-র পয়লা জানুয়ারি থেকে নীতি আয়োগের প্রতিষ্ঠা করেন।
নীতি আয়োগের বৈঠকে কী বলেছেন তিনি, তাও জানিয়েছেন মমতা। তিনি জানান, “আমি বলেছি, আপনাদের কোনও রাজ্যের প্রতি বৈষম্য করা উচিত নয়। আরও অনেক কিছু বলার ছিল। কিন্তু আমাকে মাত্র পাঁচ মিনিট বলতে দিয়েছিল। আমার বলার মধ্যেই মাইক অফ করে দেয়।” মমতা আরও বলেন, “বিরোধী দল থেকে একমাত্র আমিই বৈঠকে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকেও বলতে দেওয়া হল না। মাইক বন্ধ করে অপমান করা হল। আমার আগে এক-একজন ১০-২০ মিনিট করেও বলেছেন। এরপর থেকে নীতি আয়োগের আর কোনও বৈঠকে থাকব না।”
মমতা দাবি করেছেন, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু ২০ মিনিট বলেছেন। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুদেও সাই এমনকি গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ন্তও ১০ মিনিটের বেশি বলেছেন। কিন্তু তিনি যাতে বৈঠকে মুখ খুলতে না পারেন, সেই লক্ষ্যে তাঁর বলার সময় পাঁচ মিনিট বেঁধে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাধারণত লোকসভা, বিধানসভায় কোনও সদস্য বরাদ্দের সময়ের বাইরে গিয়ে বলতে থাকলে, তাঁর মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন অধ্যক্ষ। নীতি আয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বৈঠকে এই ধরণের ঘটনা ঘটে না।
শনিবার নীতি আয়োগের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বলার মাঝে সত্যিই কি মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল? মমতার অভিযোগকে খারিজ করে দিয়েছে কেন্দ্র। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে দেখে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (পিআইবি) তাদের ‘পিআইবি ফ্যাক্ট চেক’ নামের ভেরিফায়েড এক্স হ্যান্ডেলে সাফ সাফ জানিয়েছে, মিথ্যে বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্স হ্যান্ডেলে করা পোস্টে সাংবাদিকদের সামনে মমতার বক্তব্যের একটি ভিডিওর উপর ‘মিসলিডিং’ স্ট্যাম্প মেরে দিয়ে পিআইবি-র দাবি, “নীতি আয়োগের বৈঠক চলাকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এই দাবি বিভ্রান্তিকর। ঘড়িতে শুধু দেখানো হয়েছিল, ওনার বলার সময় অতিক্রান্ত। এমনকি সতর্ক করতে কোনও ঘন্টাও বাজানো হয় নি।”
বিজেপি শিবির কটাক্ষ করে বলছে, নাটক করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরোনো অভ্যাস। নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি করবেন, এই পরিকল্পনা করেই এদিন মমতা নীতি আয়োগের বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন বলে মনে করছেন বিজেপির নেতারা।
Feature image is representational and designed by NNDC.