শিলিগুড়ি: দিন দিন বিপজ্জনক হয়ে উঠছে সিকিম। হিমালয় এমনিতেই ধস প্রবণ; বর্ষায় পাহাড় ধসের ঘটনা বেড়ে যায়। তবে বেহিসাবি উন্নয়ন ও তিস্তার উপর পাইকারি হারে বাঁধ নির্মাণ সিকিমকে আরও বেশি খারাপ অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে পরিবেশবিদদের অভিযোগ। গত অক্টোবরের বিপর্যয়ের ধাক্কা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারে নি সিকিম। এবার বর্ষার শুরুতেই উত্তর সিকিমের যে জায়গাগুলিতে ধস নেমেছে, গত বছরের বন্যায়ও সে’সব জায়গা তিস্তার জলে ভেসে গিয়েছিল।
তরাই হিমালয়ে সাধারণত বর্ষার শেষভাগে অতিবৃষ্টি ও হড়পা বানের আশঙ্কা বেড়ে যায়। ১৯৬৮-র যে ভয়াবহ বন্যায় জলপাইগুড়ি শহর ভেসে গিয়েছিল, তা ঘটেছিল অক্টোবরের ৪ তারিখ রাতে। বুধবারের অতি ভারী বৃষ্টির জেরে উত্তর সিকিমের মঙ্গন, লাচুং, চুংথাম, ইউমথাম, ও লাচেন বড় রকমের ক্ষতিগ্রস্ত। ধসে বেশ কয়েকটি জনপদ মাটিতে মিশে গেছে। কয়েকশত বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। পাঁচজন মাটি চাপা পড়ে নিহত। কয়েকজন নিখোঁজ। মঙ্গন ও লাচুংয়ের মাঝে সাংকালান সেতু হড়পা বানে ধুয়ে যাওয়ায় উত্তর সিকিমের বিস্তীর্ণ অংশের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সমতলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
তেইশের অক্টোবরের দুর্যোগেই সাংকালানের স্থায়ীসেতু ভেঙে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। তড়িঘড়ি বেইলি ব্রিজ তৈরি করে আটকে পড়া পর্যটকদের নামিয়ে এনেছিল সেনাবাহিনী। বুধবারের বৃষ্টিতে সেই বেইলি ব্রিজও ভেঙে গেছে। এখন প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, লাচুং-চুংথামে আটকে পড়া ১,২০০ পর্যটককে ভালয় ভালয় নামিয়ে আনা। আটকে পড়া পর্যটকদের ৭০০-ই বাঙালি। আশার কথা, শনিবার ভেঙে পড়া বেইলি ব্রিজটি সারানো সম্ভব হয়েছে।
তিনদিন ধরে পর্যটকেরা আটকে। শনিবার হেলিকপ্টারের সাহায্যে তাঁদের উদ্ধার করার পরিকল্পনা করেছিল সেনাবাহিনী। কিন্তু আবহাওয়া অনুকুল না থাকায় চপার উড়ানো যায় নি। রবিবারও হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার অভিযানের চেষ্টা করা হবে। তবে সড়ক পথ চলাচলযোগ্য হওয়ায় প্রশাসনের উৎকণ্ঠা কমেছে। চপার উড়ানো সম্ভব না হলে সেদিন সড়কপথ ধরেই আটকে পড়া পর্যটকদের নিচে নামিয়ে আনার কাজ শুরু করতে চায় সিকিম সরকার।
উত্তরবঙ্গে পুরোদমে বর্ষা শুরু হয়ে গেছে। শনি-রবি দু’দিনই অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কবার্তা রয়েছে আবহাওয়া দফতরের। বর্ষা মরশুমে সিকিম থেকে দূরে থাকাই পর্যটকদের জন্য মঙ্গল।
Feature image: NNDC.