নিজ দলে ব্রাত্য কুণাল নাকি শত্রু বধে গোপন পরিকল্পনায় ব্যস্ত!

নিজ দলে ব্রাত্য কুণাল নাকি শত্রু বধে গোপন পরিকল্পনায় ব্যস্ত!


দু’দিন আগেই একটি বিতর্ক সভায় বেফাঁস বলে জনরোষের শিকার হয়েছিলেন এই পোড় খাওয়া সাংবাদিক। কুণালের মুখে বিরোধীদের প্রতি ঝাঁঝালো আক্রমণের কমতি নেই। মমতার স্তুতিতেও তিনি আগের মতোই পারঙ্গম। কিন্তু এত করেও কালীঘাটের খাতায় কুণালের নম্বর বাড়া তো দূরের কথা, উল্টে তাঁর উপর সন্দেহ আরও বেড়ে গেছে তৃণমূল সুপ্রিমোর। দলের দুই প্রার্থীকে হারাতে কুণাল ঘোষ তলে তলে বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন- বাজারে এই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার পর কুণালকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে না রাখাই মমতার জন্য স্বাভাবিক বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

গভীর জলের মাছ কুণালের মনে মনে কী ফন্দি আঁটছেন, তা কুণাল আর ভগবান জানেন। কিন্তু দল ও দলনেত্রীর প্রতি কুণাল যে ভেতরে ভেতরে ভীষণ বেজার তা সকলের জানা হয়ে গেছে। তৃণমূলের মুখপাত্র পদে ইস্তফা দেওয়ার পর কুণাল ঘোষের মেজাজ দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন যে দল ছেড়েই বুঝি বেরিয়ে যাবেন তিনি।‌ কিন্তু দেখা গেল, মমতার হাতে রীতিমতো অপমানিত হয়েও তৃণমূলেই রয়ে গেছেন কুণাল ঘোষ। এবারের লোকসভা নির্বাচনে যে দুই প্রবীণকে দলের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করতে কুণাল আদাজল খেয়ে নেমেছিলেন, সেই দু’জনকেই প্রার্থী করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ভিডিও: প্রচারের ফাঁকে সুইমিং পুলে সৌগত রায়। এই সন্তরণ দৃশ্য কুণালের হৃদয়ে কাঁটা হয়ে বিঁধছে না তো? সংগৃহীত ভিডিও

দমদম কেন্দ্রে প্রচারের ফাঁকে রিল্যাক্সড মুডে সুইমিং পুলে সাঁতার কাটছেন ৭৬ বছরের সৌগত রায়। আর ঘরে বসে সেই হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখতে হচ্ছে ৫৫ বছরের কুণালকে! নবীনদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিয়ে এই সৌগতকেই পাড়ার পার্টি অফিসে বসার পরামর্শ দিয়েছিলেন কুণাল। অথচ কুণালকেই কার্যত ঘরে বসিয়ে দিয়ে দিল্লি চলোর লড়াইয়ে জিততে রোজ ঘাম ঝরাচ্ছেন বৃদ্ধ সৌগত। কুণালের মনের জ্বালা বোঝার জন্য মনস্তত্ত্বের পন্ডিত হ‌ওয়ার দরকার নেই।

উত্তর কলকাতায় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় যাতে দলের মনোনয়ন না পান, সেই লক্ষ্যেও কম চেষ্টা করেন নি কুণাল ঘোষ। কিন্তু মমতার তালিকা থেকে ৭৫ বছরের সুদীপের নাম কাটতে ব্যর্থ কুণাল। সুদীপ বা সৌগত কেউই অভিষেকের প্রিয়পাত্র নন। এই দুই প্রবীণ নেতা এবার মনোনয়ন পান, সঙ্গত কারণেই অভিষেক তা চান নি। কিন্তু অভিষেকের চাওয়া আর মমতার চাওয়া এক বিন্দুতে না মেলায় কুণালের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় নি। ভাইপো শেষ পর্যন্ত ঢোক গিলে পিসির নির্দেশ মেনে নিয়ে তৃণমূলের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ পোস্ট ফিরে পেলেও আগ বাড়িয়ে মুখ খুলে মমতাকে বিড়ম্বনায় ফেলে কুণাল আজ তৃণমূলে একঘরে। তবে বাতাসে কানাঘুষো, আহত কুণালের অন্য রকম কিছু পরিকল্পনা আছে। উত্তর কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কুণালের যতটা দূরত্ব, ঠিক ততটাই নৈকট্য বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের সঙ্গে। কুণাল ঘোষ তাপসকে তলে তলে সহযোগিতা করছেন, এমন কথা উত্তর কলকাতার বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিষয়টা মিডিয়ায় আসার পর যথারীতি অস্বীকার করেছেন কুণাল। এখন রাজনীতিতে বিশ্বাস এবং আনুগত্য নামক বস্তুটার এতটাই উত্থান হয়েছে যে সকালে যাঁকে এক দলের মঞ্চে দেখা যায়, বিকেলে তাঁকেই আরেক দলের মঞ্চে আবিষ্কার করেন সাংবাদিকেরা। রণাঙ্গনে সত্যবাদী যুধিষ্ঠিরকে পর্যন্ত মিথ্যে বলতে হয়েছিল আর এ তো ঘোর কলির ভোল পাল্টানো কুণাল ঘোষ!

Feature graphic is representational and created by NNDC.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *