নির্বাণ রায়: আমে-দুধে মিশে গেলে আঁটি গড়াগড়ি খায়। আচ্ছা কুণাল ঘোষ কি শেষে আঁট হয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছেন? কুণালকে সবাই তৃণমূলের ভেতরে অভিষেক শিবিরের বড় পান্ডা বলেই জানত। কুণাল নিজেও তা উঁচু গলায় পাবলিককে জানান দিতে কখনও কুন্ঠা বোধ করতেন না। এই তো সেদিন অভিষেক ব্যানার্জিকে লোকসভা নির্বাচনে দলের সেনাপতি করার দাবিতে মিডিয়ার সামনে কী বিস্ফোরণটাই না ঘটিয়েছিলেন কুণাল। অভিষেক ব্যানার্জি তখন দলের কাজকর্ম থেকে নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছেন। নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের বিশেষ অধিবেশনে অভিষেকের ছবি পর্যন্ত স্থান পায় নি। প্রতিবাদে রাগে গরম হয়ে ওঠা সেই কুণাল লোকসভা ভোটের মুখে নিজেই দলে ব্রাত্য!
অথচ পিসি-ভাইপোর দূরত্ব ঘোচার ইঙ্গিত খুব স্পষ্ট। অভিষেক দলের কাজে ফের সক্রিয়। দু’দিন বাদেই ব্রিগেডে তৃণমূলের জনগর্জন সভা। সভার দায়িত্বে অভিষেক। কিন্তু তৃণমূলের ব্রিগেড সভার আগেই দলের মুখপাত্র পদে কুণালের ইস্তফা গৃহীত। রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক পদে কুণাল আছেন কি নেই, তা এখনও জানা যায় নি। তিনি দুটো পদ থেকেই ইস্তফা দিয়েছেন বলে সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন কুণাল ঘোষ। মুখপাত্র পদে কুণালের ইস্তফা গৃহীত হয়েছে মানেই দলে কুণালের দুঃখ লাঘবের আর কেউ নেই। তৃণমূল দলে সাধারণ সম্পাদক পদটি খায় না মাথায় দেয়, তা তৃণমূলের লোকেরাই জানে না। সব পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে কুণাল ঘোষ নাকি একজন সাধারণ তৃণমূল কর্মী হয়েই মমতা ও অভিষেকের সেবা করতে চান। কিন্তু মমতা বা অভিষেক তাঁকে সেই সুযোগ দেবেন কিনা সন্দেহ।
তৃণমূলের ভেতরে খবর, কুণাল ঘোষ যে ভাষায় উত্তর কলকাতার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে গালমন্দ করেছেন, তা ভালভাবে নেন নি মমতা। কুণালকে শোকজের তোড়জোর চলছে বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন- কুণালের এই দুঃসময়ে অভিষেকের ভূমিকা কী? পিসির সঙ্গে মান-অভিমানের পালা চুকিয়ে অভিষেক যখন আবার তৃণমূলে সেকেন্ড লিড রোলে তখন পদ হারিয়ে কুণাল বলছেন, আজ থেকে আমি দলের পদাতিক সৈনিক মাত্র। তৃণমূলের ভেতরে গুঞ্জন, উত্তর কলকাতা আসনের দিকে নজর ছিল কুণাল ঘোষের। এই কেন্দ্রের সাংসদের সঙ্গে কুণালের মধুর সম্পর্কের কথা সর্বজনবিদিত। দক্ষ সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে তাঁর নাম প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হোক, এমনটাই নাকি কুণালের দাবি। কালীঘাট থেকে কোনও সাড়া না পেয়েই কি তবে কুণালের মেজাজ বিগড়ে গেল?
সূত্রের খবর, মমতার সঙ্গে কুণালের দূরত্ব আগেই হয়ে গেছে। এখন অভিষেকও পাত্তা দিচ্ছেন না। অথচ অভিষেকের দৌলতেই কুণাল এতদিন তৃণমূলের ভেতরে ছড়ি ঘোরাচ্ছিলেন। যা দলের মমতাপন্থী নেতাদের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। কুণাল ঘোষ আশা করেছিলেন, দিনে দিনে তৃণমূলের ভেতরে অভিষেকের কর্তৃত্ব এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছাবে যে মমতা পর্যন্ত ভাইপোকে সমঝে চলবেন। কিন্তু পরিস্থিতি সে জায়গায় পৌঁছানোর আগেই ব্রেক কষে খেলা ঘুরিয়ে দিয়েছেন মমতা। এখন অবস্থা যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, তাতে মমতার সঙ্গে সমঝোতা করেই চলতে বাধ্য হচ্ছেন অভিষেক। এই পরিস্থিতিতে কুণালের আব্দার রাখতে গিয়ে পিসিকে চটাতে মোটেই রাজি নন ভাইপো। মোদ্দা কথা একটাই, আপাতত পিসি-ভাইপো মিলেমিশে গেছে, আঁটি কুণাল গড়াগড়ি খাচ্ছে। প্রবাদ কখনও মিথ্যে হয় না।
Feature image is representational and created by NNDC.