পলিটিক্যাল ডেস্ক: বাংলার জন্য বিজেপি দুই দফায় প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরেও চারটি আসনে প্রার্থীদের নাম জানানো এখনও বাকি। নির্বাচন কমিশন ভোটের সূচি প্রকাশের আগেই বিজেপি প্রথম দফায় ২০টি আসনের প্রার্থী তালিকা সামনে আনায় রাজনৈতিক মহল ভেবেছিল, এবার মনোনয়নের কাজটি দ্রুত সেরে ফেলে প্রচার পর্বে বাকিদের টেক্কা দেবে পদ্মশিবির। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে বিজেপির ‘লেট লতিফ’ বদনাম ঘুচলো না।
বিজেপির প্রার্থী তালিকায় চূড়ান্ত সিলমোহর পড়ে দিল্লিতে। যেহেতু এক-একটি আসনে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং অধিকাংশ আসনেই প্রার্থীপদ নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের ভেতরে মতৈক্যের ভীষণ অভাব, তাই বাংলার প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে হিমসিম অবস্থা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। বড় দলের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে টানাটানি অবশ্য নতুন ঘটনা নয়। এক সময় পশ্চিমবঙ্গে যে বিজেপি ৪২ আসনে প্রার্থী দাঁড় করানোর লোক পেত না, আজ এক-একটি কেন্দ্রে সেই দলের মনোনয়ন লাভের জন্য গড়ে সাত-আটজন করে প্রত্যাশী। বাংলার মানুষের একটা বড় অংশ ২০১৯ থেকে বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে বলেই বাংলায় বিজেপির মনোনয়ন নিয়ে কাড়াকাড়ি। এটা বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের জন্য শ্লাঘার বটে কিন্তু জনগণের এই আশীর্বাদকে ‘টেকেন ফর গ্র্যান্টেড’ বলে ধরে নেওয়াটাও ঠিক নয়।
দোল ও হোলিতে জনসংযোগ ও প্রচার করতে একটা আলাদা জোশ পান প্রার্থীরা। অথচ রাজ্যের চারটি আসনে দোল-হোলিতে প্রার্থীদের নিয়ে বাতাসে অবীর উড়িয়ে জমিয়ে প্রচার করার সুযোগ থেকে বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা বঞ্চিত! ডায়মন্ডহারবার, আসানসোল, ঝাড়গ্রাম ও বীরভূম কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীদের নাম ঘোষণা এখনও বাকি। এর মধ্যে ঝাড়গ্রাম বিজেপির জেতা সিট। সিটিং এমপি কুনার হেমব্রমকে যে এবার মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না, তা অনেক আগেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। রাগে-দুঃখে দলই ছেড়ে দিয়েছেন কুনার। কিন্তু কুনারের পরিবর্তে কে মনোনয়ন পাবেন, তা এখনও চূড়ান্ত করে উঠতে পারল না বিজেপি। ঝাড়গ্রামে বিজেপির সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, জেতা সিট কি এবার তৃণমূলের হাতে তুলে দিতে চাইছেন নেতৃত্ব?
বাবুল সুপ্রিয়র পদত্যাগের পর উপনির্বাচনে আসানসোল হাতছাড়া হলেও ২০১৪ ও ২০১৯-য়ে বড় মার্জিনে জেতা পদ্মের এই শক্ত ঘাঁটি পুনরুদ্ধার বিজেপির জন্য রীতিমতো প্রেস্টিজ ইস্যু। প্রথম দফায় বিজেপির প্রার্থী তালিকায় আসানসোলের জন্য ভোজপুরী গায়ক পবন সিংয়ের নাম ছিল। কিন্তু গানে বাঙালি নারীদের তিনি অপমান করেছেন, এই বিতর্ক ধূমায়িত হতেই নিজেকে সরিয়ে নেন পবন। তৃণমূলের শত্রুঘ্ন সিনহার মতো হেভিওয়েট প্রার্থীর বিরুদ্ধে এখনও জবরদোস্ত কোনও বিকল্প মুখ খুঁজে না পাওয়ায় আসানসোলের লড়াইয়ে বিজেপি যে পিছিয়ে পড়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
অনুব্রতহীন বীরভূমে শতাব্দী রায়কে ধরাশায়ী করতে বিজেপির আদাজল খেয়ে প্রচারে নেমে পড়া উচিত ছিল। কিন্তু শতাব্দী মাঠে নেমে পড়লেও এখনও প্রার্থীর নামই জানাতে পারে নি পদ্ম শিবির। ভাল জমি ও অনুকুল পরিবেশ পেয়েও আবাদে নামতে না পেরে বীরভূমের বিজেপি কর্মীরা ঘরে বসে হাত কামড়াচ্ছেন। রাজ্যের সবথেকে নজরকাড়া কেন্দ্রগুলির মধ্যে ডায়মন্ডহারবার এক নম্বরে। ডায়মন্ডহারবারে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে বিজেপি পরিকল্পনা করে এগোচ্ছে, অনেক দিন থেকেই এমন গুঞ্জন বাতাসে। অথচ ডায়মন্ডহারবারে দলের প্রার্থীর নাম এখনও জানাতে ব্যর্থ বিজেপি।
জায়েন্ট কিলার হতে চান রুদ্রনীল
মনোনয়ন না পেয়ে অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ অভিমানী হয়ে বিজেপির অনেক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন বলে খবর। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রুদ্রনীল যাঁদের সঙ্গে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরা সবাই তৃণমূলে ফিরে গেছেন। একুশের আগে টলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যে যাঁরা বিজেপিতে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় সবাই ভাগলবা। মমতার বিরাগভাজন হয়ে টলিউডে টিকে থাকা, কতটা ‘না মুমকিন’ তা ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন। এই পরিস্থিতিতেও রুদ্রনীল ঘোষ শুধু বিজেপিতেই থেকে যান নি, সামাজিক মাধ্যমে শাসকদলের বিরোধিতায় রীতিমতো ঝড় তুলেছে তাঁর এক-একটি ভাইরাল ভিডিও। ঠোঁটকাটা রুদ্রনীল যেমন গুণী শিল্পী তেমনি সাহসী ও বেপরোয়া। ফিল্মি জগত থেকে এসেও রাজনীতিটা তিনি মিমি-নুসরাতের স্টাইলে নয় বরং সচেতন ও আন্তরিকভাবেই করেন। কাজেই দলের মনোনয়ন নিয়ে রুদ্রনীল ঘোষের মনে প্রত্যাশা থাকা স্বাভাবিক।
সবথেকে বড় কথা ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রে
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পাঙ্গা নেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন স্বয়ং রুদ্রনীল। দল তাঁকে ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রে মনোনয়ন দিলে তিনি তাতে সানন্দে রাজি, বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকে নাকি তেমনটাই জানিয়েছেন রুদ্রনীল ঘোষ। যিনি নিরাপদ আসনে টিকিটের দাবিদার নন বরং ‘জায়েন্ট কিলার’ হওয়ার ‘কিলার ইনস্টিং’ যাঁর ভেতরে এত প্রবল, তাঁকে কি অভিষেকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দানে শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে?
Feature graphic is representational and created by NNDC.