শুক্রবার সকালে সন্দেশখালিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট-এর আধিকারিকেরা গণপ্রহারে খুন হয়ে যেতে পারতেন। তিনজন আধিকারিক জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। রাজকুমার রাম নামে এক অফিসারের মাথায় পাঁচ-ছয়টি সেলাই পড়েছে। ভগবান সহায় বলতে হবে। তাই তাঁরা বেঁচে ফিরেছেন। রেশন দুর্নীতির তদন্তে স্থানীয় তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল ইডির একটি দল। দলটিকে নিরাপত্তা দিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কয়েকজন জওয়ানও ছিলেন। ইডির তদন্তকারীরা রেশন দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত শাহজাহান শেখের বাড়ির কাছাকাছি যেতেই তাঁদের ঘিরে ধরে মারধর শুরু করে গ্রামবাসীরা।
উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা এবং হাওড়া জেলার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ব্লকগুলিতে আইনের শাসন বহুদিন ধরেই নেই। থানায় হামলা হলে পুলিশ টেবিলের তলায় লুকোয়, এমন দৃশ্যও আমাদের দেখা হয়ে গেছে। এবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা কোনও রকমে প্রাণে বাঁচলেন। তাঁদের ল্যাপটপ-মোবাইল লুট হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে বাঁচা ইডির আধিকারিকদের আতঙ্ক কাটতে সময় লাগবে। তাঁরা টের পেয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীর এলাকাগুলিতে দুর্বৃত্তরাজ কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে। তদন্তের স্বার্থে ইডি-সিবিআইয়ের আধিকারিকদের বহু জায়গাতেই তল্লাশিতে যেতে হয়। কিন্তু দেশের কোথাও তাঁদের এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় নি।
শাহজাহান শেখ সন্দেশখালি বিধানসভায়
তৃণমূলের কনভেনার। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কর্মাধ্যক্ষ পদেও আসীন তিনি। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের মন্ত্রী থাকাকালীন যাদের মাধ্যমে রেশন দুর্নীতির টাকাপয়সা সরিয়েছেন, শাহজাহান তাদের অন্যতম বলে অভিযোগ। সন্দেশখালিতে শাহজাহানই শেষ কথা। সুন্দরবনে শাসকদলের শিবিরে এই রকম আরও অনেক শাহজাহান আছে। শাহজাহান শেখের মতো দুর্নীতিবাজ ও দুর্বৃত্তদের যা খুশি তাই করার ছাড়পত্র দিয়ে রেখেছে প্রশাসন। যে জনতা কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে ইডির আধিকারিকদের উপরে চড়াও হতে পারে, তারা রাজ্য সরকারের থানা-পুলিশের চোখের সামনে কী ঘটাতে পারে, তা বাংলার জনগণ নিত্যদিন চাক্ষুষ করে থাকেন। দিদির রাজত্বে পশ্চিমবঙ্গ শুধু দুর্নীতিতেই জর্জরিত নয়, আইনশৃঙ্খলারও বারোটা বেজে গেছে।
যাদের বাড়িতে বুলডোজার চালানো উচিত, এই রাজ্যে তাদের রক্ষা করা হচ্ছে! ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে আইনের শাসনকে স্থবির করে দিতেও যিনি কুন্ঠিত নন, সেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রাজধর্ম প্রত্যাশা করা বৃথা। কিন্তু শুক্রবার সকালে সন্দেশখালিতে যে ঘটনা ঘটে গেল, তারপরেও যদি কেন্দ্রীয় সরকার শক্ত কোনও পদক্ষেপ না করে তবে বাংলার শান্তিপ্রিয় জনগণের সামনে আশার আলো বলে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। পশ্চিমবঙ্গে আইনের শাসন ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বললেও ভুল হবে। সত্য হল, পশ্চিমবঙ্গে আইনের শাসন ইতিমধ্যেই ভেঙে পড়েছে। শুধু প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে কাজ সারলেই হবে না। নবান্নের কাছে রিপোর্ট তলবও যথেষ্ট নয়।সাংবিধানিক কোন পদক্ষেপ বাংলার জন্য যথার্থ, তা নির্ণয় করার দায়িত্ব কেন্দ্রকেই নিতে হবে।