আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজা স্ট্রিপের পশ্চিম অংশ শত্রুমুক্ত হয়েছে বলে দাবি করল ইজরায়েল। বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদমাধ্যমের কাছে ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োঅ্যাভ গ্যালেন্ট জানিয়েছেন, গাজা স্ট্রিপের প্রধান শহরের পশ্চিমাংশ তাদের সামরিক বাহিনী জয় করে নিয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে ইজরায়েলের সামরিক বাহিনীর ৩৬ সাঁজোয়া বিভাগ পরিদর্শন শেষে হামাস-ইজরায়েল সংঘর্ষের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতি দেওয়ার সময় এই দাবি করেছেন গ্যালেন্ট। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, গাজা শহরের পশ্চিম অংশ থেকে হামাসের সন্ত্রাসবাদীদের উৎখাত করা সম্ভব হয়েছে।
হামাসের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের স্থলাভিযান দ্বিতীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে ইয়োঅ্যাভ গ্যালেন্ট জানিয়েছেন। গাজা ভূখন্ড দখলের উদ্দেশ্য না থাকলেও গাজা থেকে হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার। গত ৭ অক্টোবর ভোরে ইজরায়েলের ভূখন্ডে হামাসের বিধ্বংসী হামলায় ১৪০০ মানুষের মৃত্যুর পর থেকেই গাজা স্ট্রিপে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। অভিযানের শুরুতেই ইজরায়েল স্পষ্ট জানিয়েছিল, এই যাত্রায় শুধু বিমান হামলা চালিয়েই তারা ক্ষান্ত দেবে না, হামাসকে নির্মূল করতে গাজাতে পুরোদস্তুর স্থলাভিযানও চালানো হবে।
৭ অক্টোবর সীমান্ত পেরিয়ে দক্ষিণ ইজরায়েলে হামলা চালিয়ে ২৪০ জন অসামরিক ব্যক্তিকে বন্দি করে গাজাতে নিয়ে গিয়েছিল হামাসের যোদ্ধারা। হামাসের হাতে অপহৃতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আমেরিকান নাগরিকও আছেন। গাজায় ইজরায়েলের বিমান হামলা শুরু হওয়ার কয়েক দিন পর চারজন বন্দিকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। গাজায় ইজরায়েলের স্থলবাহিনী ঢুকলে বন্দিদের হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছিলেন হামাসের নেতারা। কিন্তু হুমকিতে কর্ণপাত না করে গাজায় স্থল অভিযানের সিদ্ধান্তে অটল থাকে ইজরায়েল সরকার। স্থল অভিযানের মধ্যেই একজন বন্দিকে হামাসের ডেরা থেকে উদ্ধারও করেছে ইজরায়েলি সেনা।
৭ অক্টোবর ইজরায়েলের অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় সাড়ে এগার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৩,১৬০ জন নারী ও ৪,৭১০ জন শিশু বলে গাজার হামাস পরিচালিত মিডিয়া অফিসের দাবি। ইজরায়েলের অভিযানের জেরে গাজার ১৫ লক্ষ অসামরিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে হাসপাতাল, স্কুল, চার্চ, মসজিদ ও জাতিসংঘ পরিচালিত বিভিন্ন কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। গাজায় ইজরায়েল অসামরিক জনগণকে লক্ষ্যবস্তু করেছে বলে মুসলিম দেশগুলি অভিযোগ তুলেছে। যদিও গাজার বাসিন্দাদের দুর্দশার জন্য হামাসকেই দায়ী করেছে ইজরায়েল সরকার। নারী ও শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে হামাসের জঙ্গিরা ইজরায়েলের বাহিনীকে মোকাবিলা করার অমানবিক কৌশল নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে আইডিএফ।
আল-শিফা হাসপাতাল ছিল হামাসের ঘাঁটি
গাজা স্ট্রিপ জুড়ে মাটির নিচে সুরঙ্গের জাল বিছিয়ে রেখেছে হামাস। সুরঙ্গ থেকে বেরিয়ে হামাস জঙ্গিদের অতর্কিত হামলাকেই স্থল অভিযানের সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ইজরায়েলের সামরিক বাহিনী। অনেক সুরঙ্গের মুখ গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে এসে শেষ হয়েছে বলে আইডিএফ জানিয়েছে। হামাস যে হাসপাতালগুলিকে অস্ত্রভান্ডার ও ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে, আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলির কাছে সেই প্রমাণ রেখেছে ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী। গাজার আল-শিফা হাসপাতালে অভিযানের জেরে পশ্চিমা বিশ্বের কাছেও সমালোচনার মুখে পড়েছে ইজরায়েল। যদিও যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার জানিয়েছে, আল-শিফা হাসপাতালকে হামাস কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করাতেই সেখানে অভিযান চালাতে বাধ্য হয়েছে ইজরায়েলি সেনা। অভিযান চলাকালে রোগী, শিশু, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও সেখানে আশ্রিত অসামরিক ব্যক্তিদের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে তাদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত সেনাসদস্যরা সতর্কতার সঙ্গে অভিযান চালিয়েছে বলে তেল আভিভের দাবি।
হামাসের যোদ্ধাদের হটিয়ে আল-শিফা হাসপাতাল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর বিবিসি সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের হাসপাতালটিতে ঢোকার সুযোগ দিয়েছে ইজরায়েলের সেনাবাহিনী। আল-শিফা হাসপাতালের ‘এমআরআই’ ইউনিট থেকে উদ্ধার হওয়া তিনটি কালাসনিকভ রাইফেল সহ ১৫টি স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র, কিছু গোলাবারুদ, কয়েকটি রকেট প্রোপেল্ড গ্রেনেড বা আরপিজি, বেশকিছু হ্যান্ডগ্রেনেড ও বুলেট প্রুফ ভেস্ট সাংবাদিকদের দেখিয়েছেন আইডিএফ-এর লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোনাথন কনরিকাস। আল-শিফা হাসপাতাল থেকে কিছু সামরিক পত্রিকা ও প্রচারপত্র এবং একটি মানচিত্র উদ্ধার হয়েছে। হাসপাতালটির ভেতরে পাওয়া একটি ল্যাপটপ চালু করে ৭ অক্টোবর ইজরায়েল থেকে অপহৃতদের ছবি ও ভিডিওর সন্ধান পেয়েছে আইডিএফ।
এক ইজরায়েলি অপহৃতের দেহ উদ্ধার
আল-শিফা হাসপাতাল সংলগ্ন একটি পরিকাঠামো থেকে এক ইজরায়েলি বন্দির দেহ উদ্ধার হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘোষণা করেছে ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী। ইহুদিত ওয়াইস নামে ওই নারীকে ৭ অক্টোবর বন্দি করা হয়েছিল বলে আইডিএফ-এর তরফে জানানো হয়েছে। দক্ষিণ ইজরায়েলের বেরি কিবুজের বাসিন্দা ওয়াইসের দেহ উদ্ধার করেছেন আইডিএফ-এর ৬০৩ ‘কমব্যাট ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটেলিয়নের সদস্যরা।
৬৫ বছরের ইহুদিত ওয়াইস ক্যান্সারে ভুগছিলেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। ইহুদিতের স্বামীও ৭ অক্টোবর সকালে হামাসের হাতে খুন হয়েছিলেন। ইহুদিত ওয়াইসের মৃত্যুর জেরে বাকি বন্দিদের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে ইজরায়েলে।
Feature image is representational and collected.