ডেস্ক রিপোর্ট: যাবতীয় উৎকন্ঠার অবসান! সফল হল ১৫০ কোটি দেশবাসীর প্রার্থনা আর উদ্ধারকারী দলের নিরলস প্রচেষ্টা। উত্তরাখন্ডের উত্তরকাশীর নির্মীয়মান সিল্কিয়ারা-বারকোট সুরঙ্গপথে ধসে আটকে পড়ার ১৭ দিন পর মুক্তি পেলেন ৪১ জন শ্রমিক। মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর, ২০২৩) রাত ৭:৪৯ থেকে ৮:৩৮ মিনিটের মধ্যে সুরঙ্গ থেকে উদ্ধার করা হল শ্রমিকদের। গত ১২ নভেম্বর ভোরে সিল্কিয়ারা-বারকোট সুরঙ্গপথের ১০০ মিটার এলাকায় ধস নামায় আটকে পড়েছিলেন ৪১ জন শ্রমিক।
বিপর্যয়ের পর থেকেই আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারে সর্বাত্মক অভিযানে নামে কেন্দ্রীয় সরকার। আমেরিকা থেকে আনা হয় অত্যাধুনিক খননযন্ত্র। ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন আন্তর্জাতিক সুরঙ্গ বিশেষজ্ঞ আর্নল্ড ডিক্স। ডিক্স সহ উদ্ধারকারী দলের সকলে দিবারাত্রি প্রাণপাত পরিশ্রম করেছেন ৪১ জন শ্রমিককে নিরাপদে বের করে আনতে। কিন্তু ধসে অবরুদ্ধ সুরঙ্গ থেকে শ্রমিকদের অক্ষত অবস্থায় বের করে আনার কাজটি মোটেই সহজ ছিল না। সুরঙ্গের ভেতরে শ্রমিকেরা যে জায়গায় আটকা পড়েছিলেন মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে উদ্ধারকারীদের সেখানে পৌছতে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমেরিকা থেকে আনা ‘অগার’ যন্ত্র পর্যন্ত ধস বিধ্বস্ত সুরঙ্গপথের লোহার কাঠামোয় ধাক্কা লেগে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে। যখন শ্রমিকদের কাছে পৌঁছতে মাত্র ১০-১২ মিটার বাকি, তখনই খননযন্ত্র ভেঙে গিয়েছিল।
যন্ত্রের টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া অংশগুলি ধ্বংসস্তূপ থেকে সরিয়ে ফেলার পর হাত দিয়েই খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন উদ্ধারকারী দলে থাকা বিশেষজ্ঞরা। খনি শ্রমিকেরা গাইতি-শাবল-বেলচা জাতীয় হাতিয়ার ব্যবহার করে যে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেন, তাকে মাইনিং-এর ভাষায় বলা হয় ‘র্যাট-হোল’ বা ইঁদুরের গর্ত প্রক্রিয়া। এই ‘র্যাট-হোল’ মাইনিং-এর মাধ্যমেই শেষ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে ৪১ শ্রমিককে। ঘটনাস্থলেই রাখা ছিল ৪১টি অ্যাম্বুলেন্স সহ আপৎকালীন যাবতীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা। কেউ গুরতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হৃষিকেশের ‘এইমস’-এ পাঠানোর জন্য উদ্ধারস্থলে রাখা হয়েছিল চিনুক চপার হেলিকপ্টারও। তবে অন্ধকার সুরঙ্গ থেকে বের করে আনার পর উদ্ধারকৃতরা সকলেই সুস্থ ছিলেন বলে জানা গেছে। যদিও শারীরিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য উদ্ধার হওয়া ৪১ জনকেই ৩০ কিলোমিটার দূরের চিনিয়াসৌর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এই ১৭ দিন বলতে গেলে ঘটনাস্থলেই পড়ে ছিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী। প্রতি মুহূর্তে উদ্ধার অভিযানের খোঁজখবর রাখছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। উদ্ধার অভিযান সফল হওয়ার খবরে আবেগাপ্লুত প্রধানমন্ত্রী এক্স হ্যান্ডেলে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, “উত্তরকাশীতে আটকে পড়া শ্রমিকভাইদের উদ্ধার অভিযানের সাফল্য সকলকে আবেগাপ্লুত করে তুলেছে।” উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, “যে বন্ধুরা সুরঙ্গে আটকা পড়েছিলেন, আমি তাঁদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা যে সাহস ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন, তা সকলকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমি আপনাদের সবার সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করছি।” উদ্ধারকারী দলের সাহস, একাগ্রতা ও দৃঢ়তারও প্রশংসা করেছেন মোদী।
Feature image credit- X handle of Pushkar Singh Dhami.