কলকাতা: ২৯ নভেম্বর ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনেই অমিত শাহের সভা। রাজ্যের যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে ধর্মতলায় বিজেপিকে সভা করার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বঞ্চিতদের নিয়ে আগামী বুধবার ধর্মতলায় সভার আয়োজন করেছে রাজ্য বিজেপি। সভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উপস্থিত থাকবেন। কলকাতা পুলিশের কাছে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে সভা করার অনুমতি চেয়েও পান নি বিজেপি নেতৃত্ব। কোনও কারণ না দেখিয়েই পরপর দু’বার বিজেপির আবেদন নাকচ করে দেয় পুলিশ।
লালবাজার বিমুখ করায় রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব আদালতের দ্বারস্থ হন। গত সোমবার কলকাতা পুলিশকে শর্ত সাপেক্ষে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনেই বিজেপিকে সভা করার অনুমতি দিতে বলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। বুধবারের মধ্যে পুলিশকে সিদ্ধান্ত জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি মান্থা। মঙ্গলবার সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য সরকার। শুক্রবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য উঠলে নাক কাটা যায় রাজ্যের।
২১ জুলাইয়ের সভাও বন্ধ করে দেবো!
প্রধান বিচারপতি রাজ্যের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, কোন গ্রাউন্ডে ধর্মতলায় বিজেপিকে সভা করার অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না? রাজ্য সরকারের তরফে আদালতকে জানানো হয়, “ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে, যেখানে বিজেপি সভা করতে চাইছে, তা কলকাতার প্রাণকেন্দ্র। সেখানে সভা হলে শহরের জনজীবন স্তব্ধ হয়ে যাবে। সেখানে ২১ জুলাই ছাড়া আর কোনও সভার অনুমতি দেয় না পুলিশ।” রাজ্যের আইনজীবীর জবাবে রীতিমতো চটে যান প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। জানতে চান, ২১ জুলাইয়ের বিশেষত্ব কী? একুশে জুলাইয়ের সভা নিয়ে রাজ্যের যুক্তিকে গ্রাহ্যের মধ্যেই নেন নি ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিরা। প্রধান বিচারপতি রাজ্যের আইনজীবীকে পাল্টা বলেন, “তাহলে ২১ জুলাইয়ের সভাও বন্ধ করে দিই! আমরা সব বন্ধ করে দিচ্ছি। কোনও মিটিং, মিছিল, সভা নয়। একটাই সমাধান, সবার জন্য সব কর্মসূচি বন্ধ করেছি। সেটা করলে কি ভাল হবে?” মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন,”রাজ্য সরকার বিষয়টিতে অযথা রাজনৈতিক রং দিচ্ছে। অকারণে সমস্যা তৈরি করছে। দু’সপ্তাহ আগে সভার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে, এটা যথেষ্ট।”
পুলিশের অতিরিক্ত শর্ত চাপানো চলবে না
রাজ্য সরকারকে তুলোধুনো করার পর ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিরা সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়কেই বহাল রেখে নির্দেশ দেন, “ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনেই বিজেপিকে সভা করার অনুমতি দিতে হবে পুলিশকে। কলকাতা পুলিশের ওয়েবসাইটে দেওয়া সব শর্ত মেনে সভা করতে হবে বিজেপিকে।” তবে পুলিশের তরফ থেকে সভার আয়োজকদের উপর অতিরিক্ত কোনও শর্ত চাপানো যাবে না বলেও সতর্ক করে দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে ধর্মতলায় শাহের সভা নিয়ে জট কেটে যাওয়ায় উচ্ছ্বসিত বঙ্গ বিজেপি। আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
সুপ্রিম কোর্টে ক্যাভিয়েটের প্রস্তুতি বিজেপির
প্রত্যেক বছর একুশে জুলাই শহিদ স্মরণে ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বিশাল সমাবেশ করে থাকে তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু অন্য কোনও দল একই জায়গায় সভা করতে চাইলে অনুমতি দেয় না পুলিশ। দেশের আইন সবাইকে সভা-সমাবেশ করার ব্যাপারে সমানাধিকার দিলেও ধর্মতলা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পর্শকাতর। শুভেন্দু অধিকারী কটাক্ষ করে বলেছেন, “ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনের রাস্তাকে পৈত্রিক সম্পত্তি বলে মনে করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই সেখানে অন্য দলকে সভা করতে দিতে তাঁর আপত্তি।” ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে গাত্রদাহের কারণ হলেও না মেনে উপায় নেই মুখ্যমন্ত্রীর। ধর্মতলায় বিজেপির সভা রুখতে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে গেলে অবশ্য অন্য কথা। তবে মমতার নির্দেশে রাজ্য প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে, এই আশঙ্কা থেকে দেশের শীর্ষ আদালতে ‘ক্যাভিয়েট’ দাখিল করার প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন সুকান্ত মজুমদারেরা।
Feature graphic- NNDC.