আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইজরায়েলের ভেতরে ঢুকে ‘হামাস’-এর অতর্কিত হামলার তিনদিন পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। গত শনিবার (৭ অক্টোবর, ২০২৩) ভোরে সীমান্ত প্রাচীর গুঁড়িয়ে দিয়ে ইজরায়েলের ভেতরে ঢুকে ভয়ঙ্কর হামলা চালায় ‘হামাস’-এর ২ হাজারের বেশি যোদ্ধা। মঙ্গলবার দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে নেতানিয়াহু বলেন, “ওরা যুদ্ধ শুরু করেছে কিন্তু শেষ করব আমরা।” হামাসের হাতে আক্রান্ত হওয়ার পরেই পুরোদস্তুর যুদ্ধ ঘোষণা করে দেয় ইজরায়েল। ‘হামাস’ নিয়ন্ত্রিত গাজা স্ট্রিপ ইতিমধ্যেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। নেতানিয়াহুর হুঙ্কার “ইজরায়েল সবে ‘হামাস’কে আঘাত করতে শুরু করেছে। গাজায় ধ্বংসযজ্ঞের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে তা সূচনা মাত্র। আমরা ইতিমধ্যেই শতশত সন্ত্রাসবাদীকে নিশ্চিহ্ন করেছি কিন্তু আমরা এখানেই থামব না।”
শনিবার গাজা স্ট্রিপ থেকে ইজরায়েলের ভূখন্ডে রকেট ছুঁড়ে আক্রমণের সূচনা করেছিল হামাস। মাত্র কুড়ি মিনিটে ৫০০০ রকেট ছোঁড়া হয়েছে বলে হামাসের দাবি। যদিও ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা দফতরের হিসেবে সংখ্যাটা ২০০০-এর বেশি নয়। মিশাইল হামলার পাশাপাশি আকাশপথে ‘প্যারাগ্লাইডারে’ ভেসেও ইজরায়েল অধিকৃত ভূখন্ডে নেমে অতর্কিতে হামলা চালায় হামাসের গেরিলারা। স্থলপথেও সীমান্তে ক্রংক্রিটের দেওয়াল বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে ইজরায়েলের মাটিতে ঢুকে আক্রমণ শানায় হামাসের শত শত যোদ্ধা।
যে শহরে হামাস থাকবে সেই শহর ধ্বংসস্তূপ হবে
হামাসের হামলায় কমপক্ষে ৭০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। জখমের সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি। নিহতদের মধ্যে সামরিক-অসামরিক ইসরায়েলিদের পাশাপাশি ১১ মার্কিন নাগরিক সহ বেশ কয়েকজন বিদেশি পর্যটকও আছেন। ২০০-র বেশি মানুষ হামাসের হাতে অপহৃত বলে ইজরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে। অপহৃতদের মধ্যে সৈনিকদের পাশাপাশি অসামরিক ব্যক্তি এমনকি নারী-শিশুও আছে। কয়েকজন বিদেশি পর্যটকও হামাসের হাতে বন্দি হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত গাজা ভূখন্ডের নিয়ন্ত্রণভার হামাসের হাতে। লেবাননের হিজবুল্লাহ মিলিশিয়াদের মতোই হামাসের পেছনেও ইরানের মদত আছে। হামাসের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে এই প্রথমবার ফিলিস্তিনি এই সশস্ত্র সংগঠনের হাতে এমন বিপর্যস্ত হল ইজরায়েল।
অপমানে, লজ্জায় এবং স্বজাতির মর্মান্তিক মৃত্যুর বদলা নিতে সারা পৃথিবীর ইহুদিরা ফুঁসছে। ইজরায়েল জুড়ে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকারের উপরে প্রবল চাপ হামাসকে গুঁড়িয়ে দিতে সর্বাত্মক লড়াইয়ে নামার। জাতির উদ্দেশে ভাষণে নাগরিকদের সেই আশ্বাসই দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। ‘হামাস’কে ইরাক ও সিরিয়ার ভয়ঙ্কর সুন্নি জঙ্গিগোষ্ঠী ‘আইসিস’-এর সঙ্গে তুলনা করে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “যে স্থানেই হামাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাবে, সেই স্থানকেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হবে।” হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানকে ইজরায়েলের অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ বলে বর্ণনা করেছেন নেতানিয়াহু। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা আমাদের ঘরকে রক্ষা করার জন্য একটা অভিযানে আছি। আমাদের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতে আমরা একটা যুদ্ধে আছি। এবং এই যুদ্ধে আমারই জিতব।”
‘আইসিস’-এর মতোই হামাসকে নিশ্চিহ্ন করব
ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদীদের মোকাবিলায় ‘ফ্রি হ্যান্ড’ দিয়েছে নেতানিয়াহুর প্রশাসন। নেতানিয়াহু বলেন, “হামাস কী তা আমরা আগেই জানি। এখন দুনিয়া দেখছে হামাস কী। হামাস হল ‘আইসিস’।” হামাস ইজরায়েলে ঢুকে হামলা চালানোর পর যুদ্ধ তিনদিনে গড়িয়েছে। এ’বারের যুদ্ধ নির্ণায়ক বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। নেতানিয়াহুর ইঙ্গিত থেকে আন্তর্জাতিক মহল মনে করছে, এই যাত্রা ইজরায়েল একটা হেস্তনেস্ত না করে থামবে না। নেতানিয়াহু বলেছেন, “এই যুদ্ধ আমরা শুরু করি নি। এই যুদ্ধ আমাদের উপরে সেই ঘৃণ্য শত্রুরা চাপিয়ে দিয়েছে, যারা নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের মেরে উৎসব উদযাপন করে। পরিবারের বাকি সদস্যদের সাথে শিশুদেরকেও বেঁধে হত্যা করেছে এরা! বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের পিঠে গুলি করে খুন করা হয়েছে। এমন নৃশংসতাও এরা করেছে, যা আমি এখানে মুখেই আনতে পারব না। আইএস-এর নৃশংসতার পর থেকে এমন নৃশংসতা দুনিয়া আর দেখে নি। আলোকিত বিশ্ব ‘আইসিস’-কে যেভাবে ধ্বংস করেছে আমরাও হামাসকে সে’ভাবেই , ধ্বংস করব।”
জাতীয় ঐক্যের সরকার চান নেতানিয়াহু
কীভাবে হামাসকে নির্মূল করে ইজরায়েলের সুরক্ষা নিশ্চিত করার হবে, তার পাঁচ দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। রাজনৈতিক বিবাদ ভুলে বিরোধীদেরও ইহুদি জাতি ও রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষার এই যুদ্ধে সরকারের পাশে থাকতে আবেদন জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনও রকমের শর্ত ছাড়াই একটি জরুরিকালীন জাতীয় ঐকমত্যের সরকারে শামিল হতে বিরোধীদের প্রতি আহ্বান জানান নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, “সামনে কঠিন দিন আসছে। আর বিপদের মোকাবিলায় আমরা বরাবরই সব বিবাদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করি।” ছয়দিনের আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের সময়ও প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বিগিনের নেতৃত্বে ইজরায়েলে সকল দলকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যের সরকার তৈরি হয়েছিল।
Feature graphic is representational. Photo credit- The Times of Israel.