ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক: ঈদ-এ-মিলাদুন নবি’র শোভাযাত্রায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় পাকিস্তানের বালুচিস্তানে কমপক্ষে ৭০ জনের মৃত্যু। নিহতদের মধ্যে এক পুলিশ আধিকারিকও আছেন। আহতের সংখ্যা দেড়শোরও বেশি। শুক্রবার দুপুরে বালুচিস্তান প্রদেশের মাস্তং জেলার সদর শহরের আলফালাহ রোডে মদিনা মসজিদের সামনে হামলাটি ঘটে। ঘটনার সময় জুমার নামাজ শেষে মসজিদের সামনে রাস্তার উপরে নামাজিরা জড়ো হয়েছিলেন নবি দিবস উপলক্ষে মিছিলে বেরোবেন বলে। ভিড়ের ভেতরে কোনও আত্মঘাতী জঙ্গি দেহে লুকিয়ে রাখা বোমায় বিস্ফোরণ ঘটায় বলে মাস্তং পুলিশের সহকারি কমিশনার আত্তা-উল-মুনিম পাক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন মাস্তং-এর জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক আব্দুল রশিদ শাহি। আহতদের চিকিৎসা চলছে স্থানীয় ‘শহিদ নবাব ঘাউস বখশ রাইসানি মেমোরিয়াল’ হাসপাতালে। তবে অবস্থা ভাল নয় এমন ২০ জনকে ‘কোয়াটা’য় পাঠানো হয়েছে বলে হাসপাতালটির সুপার ডঃ সায়িদ মিরওয়ানি জানিয়েছেন। বিস্ফোরণে নিহত পুলিশ আধিকারিক নওয়াজ গিশকোরি ‘ডিএসপি’ পদমর্যাদার। বালুচিস্তান পুলিশের ডিআইজি মুনির আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আত্মঘাতী জঙ্গি মসজিদ চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর গাড়ির সামনেই বিস্ফোরণটি ঘটায়।
মিছিল শুরু করার আগে মসজিদের সামনে জড়ো হওয়া জনতা আল্লাহ তায়ালার জিকির করছিলেন। তখনই কান ফাটানো শব্দে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ। গোটা চত্বর ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। ঘটনার পরপরই যারা উদ্ধারে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছেন তাদের বর্ণনা হৃদয়বিদারক। নিহতদের ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া দেহাংশ, নাড়িভুঁড়ি, হাত-পা রক্তের নদীতে পড়ে থাকতে দেখেন তারা। আহতদের আর্তনাদে নিজেকে ঠিক রাখা যাচ্ছিল না বলে এক উদ্ধারকারী সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন।
অর্থনৈতিকভাবে বিধ্বস্ত পাকিস্তানে জঙ্গি হামলা বন্ধ নেই। এর আগেও মসজিদে নামাজের আসরে আত্মঘাতী বোমা হামলার একাধিক ঘটনা ঘটেছে পাকিস্তানে। অধিকাংশ সময়েই শিয়াদের নিশানা করে হামলা চালায় সুন্নি উগ্রপন্থীরা। এ’দিনের হামলার পেছনে কারা দায়ী, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে সাম্প্রতিক সময়ে ‘তেহেরিক-ই-তালিবান’ গোষ্ঠীর আক্রমণের ঘটনা অনেক বেড়েছে। তবে মাস্তং-এর ঘটনার দায় স্বীকার করে নি তেহেরিক-ই-তালিবান। বালুচিস্তানের স্বাধীনতার দাবিতে বালুচ জাতিগোষ্ঠীর কয়েকটি সংগঠন পাকিস্তান গঠনের পর থেকেই সশস্ত্র সংগ্রাম চালাচ্ছে। কিন্তু ‘বালুচ ন্যাশনালিস্ট আর্মি’ (বিএনএ) কিম্বা ‘বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি’ (বিএলএ)-র মতো স্বাধীনতাপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি সাধারণত অসামরিক জনগণকে তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানায় না।
প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে শাহবাজ শরিফ পদত্যাগ করেছেন গত অগাস্টে। এরপর থেকেই পাকিস্তান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত করে নি নির্বাচন কমিশন। ‘মাস্তং’-এ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে টুইট করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। শাহবাজ শরিফ জানিয়েছেন, “নিরীহ মানুষের উপর কাপুরুষোচিত হামলার ঘটনায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত। এই ধরণের নৃশংসতার দেশে কোনও জায়গা নেই।” ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
‘মাস্তং’-এ মসজিদের সামনে আত্মঘাতী বিস্ফোরণের নিন্দা জানিয়ে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বেলুচিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন মুখ্যমন্ত্রী আলি মর্দান ডোমকি। যত দ্রুত সম্ভব পুলিশকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ডোমকি বলেন, “ধ্বংসের হোতারা ক্ষমার যোগ্য নয়। যারা শান্তিপূর্ণ মিছিলকে হামলার লক্ষ্য বানায়, তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে।” বালুচিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “যারা এই ধরণের ঘৃণ্য অপরাধ করেছে, তাদের মুসলমান বলা চলে না।” শুক্রবারের হামলার পেছনে বিদেশি শক্তির হাত দেখতে পাচ্ছেন বালুচিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্যমন্ত্রী জান আচাকজাই। আচাকজাইয়ের অভিযোগ, “শত্রুরা বিদেশিদের মদতে বালুচিস্তানের শান্তি ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতার পরিবেশকে বিনষ্ট করতে চাচ্ছে।”
ঘটনা হল, পাকিস্তান সরকারের আশ্বাসে সেই দেশের জনগণই আর বিশ্বাস করে না। দেশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে বলে ঘটনার পরপরই সামাজিক মাধ্যমে সোচ্চার হয়েছেন পাকিস্তানের নাগরিকেরা। ‘ঈদ-এ-মিলাদুন নবি’র দিনেও মুসল্লিদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তান!