সায়েন্স ডেস্ক: যে দূরত্ব থেকে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ সম্ভব, সেই দূরত্বে চলে এসেছে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। রবিবার ভারতীয় সময় রাত পৌনে দুটো নাগাদ শেষবারের মতো কক্ষপথ পরিবর্তন করেছে ইসরোর ‘ল্যান্ডার মডিউল’। ল্যান্ডারের কক্ষপথ পরিবর্তনের কাজটি সফল হয়েছে বলে টুইট করে জানিয়েছে ‘ইসরো’। এখন ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ ২৫ কিমি×১৩৪ কিমি কক্ষপথে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করছে। অর্থাৎ ল্যান্ডারটি যখন চাঁদের একদম কাছে চলে আসছে, তখন চন্দ্রপৃষ্ঠের সঙ্গে সেটার দূরত্ব দাঁড়াচ্ছে মাত্র ২৫ কিলোমিটার, যখন সবথেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তখন দূরত্ব হচ্ছে ১৩৪ কিলোমিটার।
‘ল্যান্ডার মডিউলের’ আর কোনও কক্ষপথ পরিবর্তন হবে না বলে ইসরো সূত্রে জানা গেছে। এবার ২৫ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে ল্যান্ডারকে ধীরে ধীরে নামিয়ে আনার পালা। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বুধবার (২৩ অগাস্ট) ভারতীয় সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে ছ’টার মধ্যে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ ‘সফ্ট ল্যান্ডিং’ করবে বলে ইসরোর বেঙ্গালুরুর ‘গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন’-এর বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশা- সংস্হার ভেরিফায়েড এক্স (টুইটার) হ্যান্ডেল থেকে রবিবার এমনটাই জানানো হয়েছে। বিক্রমের স্বাস্থ্যও চমৎকার রয়েছে বলে জানিয়েছেন চন্দ্রযান-৩ মিশনের বিজ্ঞানীরা।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের লক্ষ্যে গত ১৪ জুলাই দুপুর ২টা বেজে ৩৫ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টারের ‘লঞ্চিং প্যাড’ থেকে চন্দ্রযান-৩ কে নিয়ে রওয়ানা দিয়েছিল এলভিএম-৩ রকেট। নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে ধাপে ধাপে বুস্টিং করে পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের বাইরে চাঁদের অভিকর্ষের অধীনে মহাকাশযানটিকে পৌঁছে দেওয়া মোটেই সহজ কাজ ছিল না। পৃথিবীর কক্ষপথ হোক আর চাঁদের কক্ষপথ, ‘ডি অর্বিটিং ম্যানুভার’ বা কক্ষপথ পরিবর্তনের কৌশল চূড়ান্ত পর্যায়েও সফলভাবে ইসরোর বিজ্ঞানীরা করতে পেরেছেন বলেই চন্দ্রযান-৩ মিশন এখনও পর্যন্ত নিখুঁতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।
রাশিয়ার লুনা-২৫ ব্যর্থ! ইতিহাস গড়ার মুখে ভারত
চাঁদের দক্ষিণ মেরু পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান নয়। এখনও পর্যন্ত কোনও দেশ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান অবতরণে সফল হয় নি। কাজটি সহজও নয়। রাশিয়ার মহাকাশযান ‘লুনা-২৫’ও ‘চন্দ্রযান-৩’এর মতোই দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের লক্ষ্যে এগোচ্ছিল। কিন্তু শনিবার সর্বশেষ কক্ষপথে গতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় রুশ ‘ল্যান্ডার’টি চন্দ্রবক্ষে ভেঙে পড়েছে বলে জানা যাচ্ছে। ভারতের অনেক পরে গত ১১ অগাস্ট ‘লুনা-২৫‘ নামে চাঁদে একটি মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করেছিল রাশিয়া। অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছেন, ভারতকে টেক্কা দিয়ে ইতিহাসে নাম তোলার তাগিদে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনলো না তো রুশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস? ‘লুনা-২৫‘ ব্যর্থ। মহাকাশ বিজ্ঞানের ইতিহাসে নতুন নজির গড়ার দায়িত্ব এখন ভারতের ইসরোর কাঁধে। চাঁদে ভারত সফল হোক- সকল ভারতবাসীর এখন একটাই চাওয়া।
Feature image credit- ISRO.