মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় যখন ‘হুটার’ বাজিয়ে কনভয় হাঁকিয়ে ছুটতেন, তখন তাঁর কখনও বিনা বিচারে বন্দিদের কথা মনে পড়েছে? আরও যা লিখলেন উত্তম দেব-
পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজেকে একনিষ্ঠ তৃণমূলী প্রমাণ করতে মরীয়া কিন্তু পার্থকে জামা থেকে ময়লা ঝাড়ার মতো ঝেড়ে ফেলে দিচ্ছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত একটা গানের লাইন- “চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়/ আজিকে যে রাজাধিরাজ কাল সে ভিক্ষা চায়।” প্রেসিডেন্সি জেলের একক সেলে বসে নজরুলের এই গানটি মাঝেসাঝে শুনলে পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিশ্চয় সান্ত্বনা পাবেন।
এক বছর ধরে মানুষটা জেলে। দেখে বোঝা যায়, হাঁফিয়ে উঠেছেন। ৭১ বছর বয়সে উচ্চরক্তচাপ ও রক্তে উচ্চ শর্করা নিয়ে জেলের কুঠুরিতে নিঃসঙ্গ দিনযাপন কতটা যাতনার তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মমতার মন্ত্রিসভায় ও তৃণমূলের সংগঠনে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের যে দাপট ছিল, তাতে পার্থ নিজে, পার্থের বন্ধুমহল এমনকি পার্থের শত্রুপক্ষও ভাবে নি, একদিন তাঁর এই পরিণতি হবে।
ক্ষমতা ও বিত্ত মানুষকে দর্পিত করে। দেহে ও ক্ষমতার অলিন্দে হেভিওয়েট পার্থও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। ক্ষমতা শুধু মানুষকে দর্পিতই করে না নীতিভ্রষ্ট ও লোভাতুরও করে তোলে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় লোভে পড়ে দুর্নীতি কিছু করেছেন কিনা তা আদালতে প্রমাণ সাপেক্ষ বটে কিন্তু তিনি নিষ্কলুষ, ধর্মতলায় দাঁড়িয়ে পার্থ বুক চাপড়ে বললেও মানুষ তা বিশ্বাস করবে না। এরই নাম ‘পাবলিক পারসেপশন’ বা জন উপলব্ধি। পার্থ চট্টোপাধ্যায় সৎ নন- এই উপলব্ধিতে আসার মতো যথেষ্ট উপাত্ত জনগণের সামনে আছে। তাই বন্দী পার্থ কারাবাসের যন্ত্রণায় এজলাসে কেঁদে কঁকিয়ে ভাসালেও মানুষের সহানুভূতি পেতে ব্যর্থ।
জেলখানা থেকে আদালতে ওঠার পথে পার্থ চট্টোপাধ্যায় যতবারই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন, ততবারই বুঝিয়ে দিয়েছেন, দল তাঁকে ছাড়ে ছাড়ুক, তিনি দলকে ছাড়বেন না। ভাবখানা এমন, প্রণয়িণী উষ্টা মারলেও তার পদযুগল ছাড়ব না। বিপদে পড়লে বাপ পর হয়ে যায়। আর দল! পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে বসে ভালোই বুঝতে পারছেন, তিনি ‘বকরি’ হয়েছেন। দল, দলনেত্রী, দলের যুবরাজের জন্য তিনি যতই ম্যাতান, কারও হৃদয় গলবে না। পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় তাঁকে খরচের খাতায় ফেলে দেয় তৃণমূল। অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার এক বছর পরেও বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি পদে বহাল। নিজের গাড্ডা পার্থ নিজে খুঁড়েছেন অথবা তিনি যাতে গাড্ডায় পড়েন, সেই ব্যবস্থা কেউ করেছে। বোকা পার্থ ফাঁদ টের পাওয়ার আগেই হড়কে গেছেন হয়তো বা।
মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় যখন ‘হুটার’ বাজিয়ে কনভয় হাঁকিয়ে ছুটতেন, তখন তাঁর কখনও বিনা বিচারে বন্দিদের কথা মনে পড়েছে? তাঁর সরকারের পুলিশই তো বিরোধী দলের কত কর্মীকে মিথ্যা গাঁজা কেসে ফাঁসিয়ে জেলে পাঠায় বলে অভিযোগ। মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কখনও মুখ খুলেছেন বলে তো মনে পড়ছে না। আজ নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ধৃত এক প্রাক্তন মন্ত্রীর জন্য মুখ খুলবে বন্দিমুক্তি কমিটি? শত শত যোগ্য প্রার্থীকে বঞ্চিত করে অযোগ্যদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার সময় যাঁর মনে অনুতাপ আসে নি, আজ তাঁর দুঃখ দেখে অশ্রুপাত করবে মানুষ?
পার্থ চট্টোপাধ্যায় ভড়ংবাজি রেখে বরং কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলুন, নিয়োগ দুর্নীতির টাকার বখরা আর কে কে পেয়েছে। সত্য কথনে পার্থের পাপের বোঝা লাঘব হতে পারে। তিনি মানুষের সহানুভূতি পেতে পারেন।
Feature image is representational.