পঞ্চায়েত ভোটের ফল কী হতে যাচ্ছে, তা ভোটের দিন সন্ধ্যা নামার আগেই দিনের আলোর মতো সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সকাল থেকেই অবশ্য টের পাওয়া যাচ্ছিল বিরোধীদের চোখে সর্ষেফুল না দেখিয়ে শাসকদলের দামাল ছেলেরা ঘরে ফিরবে না। ফেরেও নি। বুথ থেকে গণনাকেন্দ্র- কর্তব্য পালনে তৃণমূলের যোদ্ধারা কোথাও এক চুল পরিমাণ শৈথিল্য দেখিয়েছে, এই অপবাদ দেওয়ায় তিল মাত্র সুযোগ তারা রাখে নি। ভোট শুরু হওয়ার আগেই অতিরিক্ত ব্যালট পেপার বাক্সে গুঁজে দেওয়া থেকে বুথে ঢুকে ছাপ্পা। গণনা কেন্দ্রে ব্যালট পেপার চিবিয়ে খাওয়া থেকে ব্যালট পেপারে কালি ঢালা। এমনকি বিরোধী প্রার্থীকে কিলিয়ে গণনা কেন্দ্র থেকে দূর করে দিয়ে হারা ম্যাচ জিতিয়ে আনা- যাবতীয় কাজ সুষ্ঠুভাবে সেরে তবেই বুধবার রাতে শান্তিতে ঘুমোতে যাবে তারা।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনার, পুলিশ এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত আধিকারিকও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। তাঁদের ঘাড় থেকে গুরু দায়িত্ব নামল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তাঁরা রিল্যাক্সড। কানে তুলো গুঁজে পঞ্চায়েত ভোট নামিয়ে দেওয়া চাট্টিখানি কথা! বিরোধীদের অভিযোগের পাহাড়, মামলা-মোকদ্দমা, আদালতের কড়া কড়া নির্দেশ- এই এক মাস কত হ্যাপাই না তাঁদের সহ্য করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তাঁদের উদ্দেশ্য সফল। কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার- সবুজ ছাড়া আবির উড়ছে না। নিন্দুকেরা বলছে, গণতন্ত্র জখম হইয়াছে। কিন্তু তাতে কার বাপের কী। গণতন্ত্রের চেয়ে মাননীয়ার ‘গুডবুক’ অনেক বেশি দামি। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করিয়ে সেই গুডবুকে বঙ্গের সরকারি আধিকারিকদের নাম রক্ষা পেয়েছে, এই ঢের।
প্রশ্ন একটাই- সাত মন তেল পুড়িয়ে বাংলায় যেটা সবে সাঙ্গ হল সেটা নির্বাচন না নির্যাতন? করদাতাদের কোটি কোটি টাকা খরচ করে করদাতাদের উপরেই এমন উপদ্রব চাপিয়ে না দিলেই কি নয়? প্রহসন দেখতে বাঙালি চিরকালই আমোদ পায়, এটা ঠিক। কিন্তু তার জন্য পাঁচ বছর পর পর পঞ্চায়েত নির্বাচন কেন? পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএমের এক বিজয়ীনি পৃথিবীতে সবথেকে দ্রুততম সময়ে দলত্যাগ করে দেশে বাঙালির মুখ উজ্জ্বল করেছেন। ঘরে ফেরা পর্যন্ত তর সয় নি মহিলার, গণনাকেন্দ্রেই সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন তিনি। দিন কয়েক আগেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, বিরোধী দলগুলি থেকে যে দু-একজন জিতবেন, তাঁরাও তৃণমূলেই আসবেন। সবাইকে আগে থেকে তৃণমূলে ঢুকিয়ে নিলেই তো ভোট নামক রক্তারক্তি কান্ডটা খামোখা করতে হয় না। জনগণের টাকা গেল। সেটাও বড় কথা নয়। পাবলিকের টাকা তো উড়ানোর জন্যই। কিন্তু সাধারণের প্রাণেরও কি দাম নেই? পঞ্চায়েত ভোটে কতগুলি মায়ের কোল খালি হল! বাপের কাঁধে ছেলের লাশ উঠল। সংসার শেষ হল কত যুবতীর। শিশুরা পিতৃহীন হল। ভোট দিতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত এক যুবকের মা বুক চাপড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “আর কোনও দিন ঘর থেকে কোনও ছেলেকে ভোট দিতে পাঠাবো না।” মুখ্যমন্ত্রীর দয়ার শরীর। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আপনি শুনছেন শোকার্ত মায়ের বিলাপ? দয়া করে এমন ভোট তুলে দিয়ে বাংলার মায়েদেরকে সন্তান রক্ষার অভয় দিন।
Feature image is representational.