ডেস্ক রিপোর্ট: রাজ্যে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’-র প্রদর্শন নিষিদ্ধ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্ন থেকে এই ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও সেন্সর বোর্ড অনুমোদিত সিনেমা কীভাবে একটি রাজ্যের সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে- এই প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। সিনেমাটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির আর্জিতে কান দেয় নি দেশের শীর্ষ আদালতও। কেরালার অমুসলিম মেয়েদের ‘লাভ জেহাদে’ ফেলে ধর্মান্তরণ ও তাদের ফুসলিয়ে আইসিসে ঢোকানো- দ্য কেরালা স্টোরির বিষয়বস্তু। কেরালার বামপন্থী সরকার দ্য কেরালা স্টোরির কাহিনীর তীব্র বিরোধিতা করলেও সিনেমাটি এখনও নিষিদ্ধ করে নি। যদিও শাসকদল সিপিএম-এর বাধায় কেরলের অধিকাংশ হলে সিনেমাটির প্রদর্শন সম্ভব হচ্ছে না।
কেরলের কাহিনীর উপরে নির্মিত ফিল্ম কেরলে নিষিদ্ধ হয় নি। কিন্তু বাংলায় কেন নিষিদ্ধ করল সরকার? মমতা জানিয়েছেন, “শান্তি-সৌহার্দ্য বজায় রাখতে এই রাজ্যে ‘দ্য কেরালা স্টোরি ‘ নিষিদ্ধ করা হল। মমতা মনে করেন, “এই সিনেমায় যে সব দৃশ্য দেখানো হয়েছে, তা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, “রাজনৈতিক দলগুলি আগুন নিয়ে খেলছে। তারা জাত-ধর্ম-বর্ণ নিয়ে ভেদাভেদ তৈরির চেষ্টা করছে।” মমতা মনে করেন, “দ্য কাশ্মীর ফাইলস, দ্য কেরালা স্টোরি একটি সম্প্রদায়কে হেনস্থা করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রী নিজে দ্য কেরালা স্টোরি দেখেছেন কিনা জানা যায় নি। কিন্তু তিনি বলে দিয়েছেন, “ফিল্মটির কাহিনি অসত্য ও বিকৃত।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “বিজেপির মনোনীত কিছু তারকা এখানে এসেছিলেন। ওরা বলেছিলেন, ওরা ‘বেঙ্গল ফাইলস’ খুলবে। যদি এরা ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ করে কাশ্মীরের মানুষের নিন্দা করার জন্য, যদি কেরালায় একপেশে বক্তব্য দিয়ে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ করে থাকে, তবে বাংলাকেও ওঁদের পরের ছবিতে সে ভাবেই দেখাবে।” “দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস”-এর ওপর একটি মুভি নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। ‘বেঙ্গল ফাইলসে’ এই জাতীয় কোনও কাহিনী উঠে আসতে পারে। ‘বেঙ্গল ফাইলস’ নিয়ে তিনি যে ভয়ে আছেন, নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যই তার প্রমাণ- এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বাংলায় দ্য কেরালা স্টোরি-র প্রদর্শন নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে রাজ্য বিজেপি। বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে ইতিমধ্যেই সিনেমাটি করমুক্ত করে দিয়েছে সরকার। কর্নাটকে ভোটের প্রচারে গিয়ে দ্য কেরালা স্টোরির প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। মোদী বলেছেন, “এই সিনেমা সন্ত্রাসবাদের মুখোশ টেনে খুলে দিয়েছে।” রাজ্য সরকারের নির্দেশের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে। ১০টির বেশি সিনে কাঁচি চালানোর পর ফিল্মটিকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ছাড়পত্র দিয়েছে সেন্সর বোর্ড। তারপরও রাজ্য সরকার কোন গ্রাউন্ডে মুভিটি নিষিদ্ধ করল- এই প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রশ্ন তুলেছেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কি জঙ্গি গোষ্ঠী আইসিস-এর প্রতি সহানুভূতিশীল? শুভেন্দু টুইটারে লিখেছেন, “আমি যতদূর জানি, কেরলে কীভাবে মহিলাদের মগজধোলাই করেন কট্টরপন্থী ধর্মগুরুরা, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে দ্য কেরালা স্টোরি। ছবিতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে কেরলে মহিলাদের ধর্মান্তরিত করে আফগানিস্তান, ইয়েমেন, সিরিয়ায় আইসিসের হয়ে যুদ্ধ করতে পাঠানো হয়। আইসিস-এর কার্যপদ্ধতির বিরুদ্ধাচরণ করে তৈরি হয়েছে সিনেমাটি। তাহলে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আইসিস-এর প্রতি সহানুভূতিশীল?”
মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। সুকান্ত মজুমদার বলেন, “নবান্নের এই সিদ্ধান্ত বুঝিয়ে দিল, তৃণমূল কংগ্রেস আসলে কাদের দল। আগেই নির্লজ্জ তোষণের নজির দেখিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই বার সরাসরি জেহাদিদের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন তিনি।” সব মিলিয়ে বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেনের “দ্য কেরালা স্টোরি” নিয়ে সরগরম বাংলা।
Feature Image is representational.