ডেস্ক রিপোর্ট: কোনও সাহিত্যই হোক আর সিনেমা- সরকার নিষিদ্ধ করলে তার প্রতি মানুষের আকর্ষণ চতুর্গুণ বেড়ে যায়। নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরকালই বেশি। রিলিজ হওয়ার চারদিনের মাথায় পরিচালক সুদীপ্ত সেনের ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিষিদ্ধ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। নিষিদ্ধ করেই কি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ দেখা থেকে মানুষকে বিরত করতে পারবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? তাও আবার এই বাজারে? ছবিটি এখন বক্স অফিস কাঁপাচ্ছে। দু’দিন বাদেই কোনও না কোনও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছেড়ে দেবেন প্রযোজক। তখন ঘরে বসেই ছবিটি গোগ্রাসে গিলবেন দর্শকেরা।
রিলিজ হওয়ার আগে থেকেই ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে বির্তক। ১০টি দৃশ্য বাদ দেওয়ার পর দ্য কেরালা স্টোরির ছাড়পত্র দিয়েছে সেন্সর বোর্ড। ছবিটি কেরলের পটভূমিতে তৈরি। সেখানকার হাইকোর্টে মামলা করেও ‘দ্য কেরালা স্টোরির’ মুক্তি আটকাতে পারেন নি মুভিটির বিরোধীরা। ছবির বিষয়বস্তু সত্য ঘটনার উপর নির্মিত- মেনে নিয়েছে কেরালা হাইকোর্ট। ছবিটি নিষিদ্ধ করার মতো কোনও কারণ খুঁজে পায় নি বিচারপতি এন নগরেশ ও বিচারপতি সোফি থমাসের ডিভিশন বেঞ্চ। সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাওয়া ছবি কীভাবে নিষিদ্ধ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? প্রশ্ন তুলে এবার আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দ্য কেরালা স্টোরির প্রযোজক ও পরিচালক। ছবির প্রযোজক বিপুল শাহ বলেছেন, “আমরা আইনের সাহায্য নেবো। আইনি পথে নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলা করব আমরা।”
ইসলাম বিরোধী নয় সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ছবি
ছবিটির নির্দেশক সুদীপ্ত সেন। দ্য কেরালা স্টোরিতে ঘৃণা ও বিদ্বেষের গল্প বলা হয়েছে, এই অভিযোগ মানতে নারাজ বাঙালি সুদীপ্ত। তিনি বলেন, “এই সিনেমা দীর্ঘ গবেষণার ফল। ইসলাম বিরোধী নয় ছবির বিষয়বস্তু সন্ত্রাসবাদ বিরোধী। কুখ্যাত মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠন আইসিস কীভাবে দেশে দেশে ষড়যন্ত্রের জাল পেতে সদস্য রিক্রুট করত, সেই সত্যি কাহিনীই ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে।” ইরাক ও সিরিয়া ভিত্তিক সুন্নি জঙ্গি সংগঠন আইসিস-এর নারী বিদ্বেষ কোনও কল্পকাহিনী নয়। দ্য কেরালা স্টোরির মুখ্য চরিত্র শালিনী উন্নিকৃষ্ণণ আইসিস-এর এজেন্টদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর কী অমানুষিক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন, এটাই ছবির বিষয়বস্তু। শালিনী উন্নিকৃষ্ণণের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আদা শর্মা। যারা দ্য কেরালা স্টোরি নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন, তাদের আগে বইটি দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন অভিনেত্রী আদা। বলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী শাবানা আজমিও সিনেমাটি নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে। কারণ শাবানাও চান না, ধর্মান্ধ জঙ্গিদের হাতে নারীরা নির্যাতিত হোক।
চারদিনেই প্রায় ৫০ কোটি ঘরে তুলল টিকেএস
দ্য কেরালা স্টোরি বক্স অফিসে মুক্তি পেয়েছিল ৫ মে। পিনারাই বিজয়নের সরকার ছবিটি নিষিদ্ধ না করলেও বিজয়নের দলের লোকেরা প্রদর্শনে বাধা দিচ্ছে। হুমকির মুখে কেরলের প্রায় সব প্রেক্ষাগৃহ থেকেই ছবিটি তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন মালিকেরা। তামিলনাড়ুতেও ছবিটির প্রর্দশন জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাংলা জুড়ে চারদিন বিভিন্ন হল ও মাল্টিপ্লেক্সে রমরমিয়ে চলছিল দ্য কেরালা স্টোরি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর থেকেই রাজ্যের সর্বত্র ছবির প্রদর্শন বন্ধ। তবে চারদিনেই বিবেক অগ্নিহোত্রীর দ্য কাশ্মীর ফাইলস-এর রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে সুদীপ্ত সেনের দ্য কেরালা স্টোরি। প্রথম দিন ছবিটি আয় করেছে ৮ কোটি ৩ লক্ষ টাকা। দ্বিতীয় দিনের ইনকাম ১২ কোটি ৫০ লক্ষ। তৃতীয় দিনে ১৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। চতুর্থ দিন অর্থাৎ ৮ মে সোমবার দ্য কেরালা স্টোরি ঘরে তুলেছে ১১ কোটি। মাত্র চারদিনেই ৫০ কোটি টাকা প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে ফিল্মটি।
জোড়া মামলা সুপ্রিম কোর্টে, শুনানি ১৫ মে
এবার দ্য কেরালা স্টোরির উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন কয়েকজন। মামলাকারীদের উকিল কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল। তবে পশ্চিমবঙ্গে দ্য কেরালা স্টোরির উপর থেকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া ও তামিলনাড়ু সহ দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলিতে নির্বিঘ্নে ছবিটি প্রদর্শনের আর্জি জানিয়ে পৃথক একটি মামলাও মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয়েছে বলে জানা গেছে। ১৫ মে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি পিএস নরসিংহের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দুটির শুনানি হওয়ার কথা।
Feature Image is Representational,