"চুরি আটকেছি টাকা আটকাই নি, আবার আটকাব"- ময়না থেকে অভিষেককে জবাব শুভেন্দুর - nagariknewz.com

“চুরি আটকেছি টাকা আটকাই নি, আবার আটকাব”- ময়না থেকে অভিষেককে জবাব শুভেন্দুর


ডেস্ক রিপোর্ট: শনিবার উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে অভিষেক যা বললেন পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না থেকে তার জবাব দিলেন শুভেন্দু। একশ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখে গ্রামবাংলাকে ভাতে মারছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার- এই ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ। ময়নার বাকচা থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জবাবে বললেন- “চুরি বন্ধ করেছি। টাকা আটকাই নি। চুরি আটকেছি। আবার আটকাবো।” ময়নায় আইনশৃঙ্খলার দোহাই দিয়ে শুভেন্দুর সভা আটকে দিয়েছিল পুলিশ। পরে সভার অনুমতি দেয় হাইকোর্ট। টান টান উত্তেজনার মধ্যেই শনিবার দুপুরে বাকচায় বিজেপির সভা শুরু হয়। সভার আগে পতাকা টাঙানোকে ঘিরে কয়েক জায়গায় তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।

দিল্লি পুলিশের লাঠির মাপ ছয় ফুট

মাঠে ভিড় ছিল নজর কাড়া। পঞ্চায়েত ভোটকে পাখির চোখ করে পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপি যে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করে দিয়েছে, সভায় শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য থেকে তা স্পষ্ট। এপ্রিলেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের সূচি ঘোষণা হয়ে যেতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। এখনও পর্যন্ত অনেক তর্জন গর্জন করেও একশ দিন ও আবাস যোজনার টাকা দিল্লির কাছ থেকে আদায় করতে পারেন নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে দিল্লিতে গিয়েও কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের দেখা পান নি অভিষেক। সচিবের সঙ্গে দরবার করেই বাংলায় ফিরতে হয়েছে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ডকে। বকেয়া আদায় না হলে এবার দিল্লিতে বাংলা থেকে লোক নিয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর ঘেরাওয়ের হুমকি দিয়েছেন অভিষেক। যদিও ময়নার মঞ্চ থেকে অভিষেকের হুমকিকে তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দিলেন শুভেন্দু। বিরোধী দলনেতা বলেন, “আরে দিল্লিতে পুলিশটা অরবিন্দ কেজরিওয়াল চালায় না। দিল্লি পুলিশ চালায় কাশ্মীর ঠান্ডা করে দেওয়া কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দফতর। দিল্লি পুলিশের লাঠির মাপ কিন্তু ছয় ফুট।”

বামে- ময়নার সভায় শুভেন্দু। ডানে- আলিপুরদুয়ারের সভায় অভিষেক। ছবি- সংগৃহীত

শুভেন্দু অধিকারী দিল্লি গিয়ে দলের নেতাদের বলে বাংলার ন্যায্য পাওনা আটকে দিচ্ছেন- এমন‌ও আওয়াজ‌ তুলেছেন মমতা-অভিষেক। এই প্রসঙ্গে শুভেন্দুর পাল্টা অভিযোগ- বাংলার মানুষ ভালোই জানেন, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা কীভাবে লুটপাট করেছে তৃণমূল। শুভেন্দু অধিকারী কটাক্ষ করে বলেন, “মিশন নির্মল বাংলায় শৌচালয়ের টাকা পর্যন্ত মেরে খেয়েছেন তৃণমূলের নেতারা। বাংলায় ৭২ লক্ষ শৌচালয় নির্মাণের টাকা দিয়েছেন মোদীজি। কোথায় শৌচালয় হয়েছে? কার বাড়িতে হয়েছে?” শুভেন্দু আরও বলেন, “প্রতি বাড়ির জন্য ১২ হাজার করে টাকা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। গত মাসেই কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত রাজ্যকে ১ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা দিয়েছেন, এখনও যে’কটা বাড়িতে নলবাহিত পানীয় জল ও শৌচালয়ের কাজ বাকি আছে, তা সম্পূর্ণ করার জন্য। আমি এবার এটাও বন্ধ করে দেবো।”

ধানের টাকাও মেরে খাচ্ছে তৃণমূল

কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার টাকা অগ্রিম প্রদান করে কেন্দ্রীয় সরকার। ধান কেনার টাকা নিয়েও রাজ্যে দুর্নীতি চলছে বলে শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ। ময়নার সভায় বিরোধী দলনেতা বলেন, “ধান কেনার সব ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে কৃষকদের চেকগুলি মেরেছে। শুধু কেষ্ট মন্ডল একা ২০০ ভুয়ো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট চালায় বীরভূম সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে। আমার কাছে সব ব্যাঙ্কের নথি আছে।” কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করতে কেন্দ্র যে অগ্রিম টাকা দিয়ে থাকে, এবার তাও তিনি আটকে দেবেন বলে হুমকি দেন শুভেন্দু।

পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার বাকচায় বিজেপির সভায় ভাষণ দিচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী। ছবি- সংগৃহীত

শুভেন্দু অধিকারী ময়নায় বলেন, “বাংলার মানুষ জানেন, সব প্রকল্প কেন্দ্রীয় সরকারের। রেশন দেন মোদীজি। ফ্রিতে কোভিড ভ্যাকসিন দিয়েছেন মোদীজি। কৃষক সম্মাননিধির বছরে ছয় হাজার টাকা মোদীজি পাঠান। এই জন্য‌ই রাজ্য সরকারের দুয়ারে সরকার ফ্লপ। কেউ যাচ্ছে না ওতে। ঢপের চপ খেতে চাইছেন না মানুষ। কারণ লোক জেনে গেছে, বাংলা আবাস যোজনার নাম প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা। বাংলা গ্রাম সড়ক যোজনার নাম প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা।” বিরোধী দলনেতা কটাক্ষের সুরে বলেন, “ভাইপো বলেছিলেন বাংলা আবাস‌ই লিখব, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা লিখব না। বাংলা গ্রাম সড়ক‌ই লিখব, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা লিখব না। বলেছিলেন নাম আমাদেরটাই থাকবে। চাপে পড়ে পাল্টাবো না। বলেছিলেন, কেন্দ্রের টাকা আমাদের দরকার নেই, ভিক্ষা চাই না। আর এখন দিল্লিতে গেছেন ভিক্ষা করতে।”

রিষড়ায় সত্য ঢাকতে কেন্দ্রীয় দলকে বাধা

শনিবার দাঙ্গা বিধ্বস্ত রিষড়ায় কেন্দ্রের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সদস্যদের যেতে দেয় নি পুলিশ। ১৪৪ ধারার কথা বলে তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। এই নিয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে শুভেন্দু জবাব দেন, “প্রশাসন ১৪৪ ধারা করে রেখেছে, যাতে সত্যটা সামনে না আসে। প্রচূর মানুষের বাড়িঘর ভেঙেছে। দোকান ভেঙেছে। ধর্মীয় আস্থার জায়গা ভেঙেছে। বহু মানুষ ঘরদোর ছেড়ে চলে গেছে। পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল। এটা সবাই দেখেছি আমরা।” বিরোধী দলনেতা আরও বলেন, “আজ না হোক কাল, সত্য প্রকাশ পাবেই। সোমবার উচ্চ আদালতে মামলা আছে। এন‌আইএ তদন্ত হলেই কারা কারা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সঙ্গে যুক্ত, প্রমাণ হয়ে যাবে।”

বাপের ব্যাটা হলে আমাকে ঘিরে দেখা

কেন্দ্রীয় সরকার বকেয়া টাকা না মেটালে যেখানেই বিজেপির নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের দেখবেন, ঘেরাও করে রাখবেন- আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে এমন হুমকিও দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ময়না থেকে শুভেন্দুর পাল্টা হুঁশিয়ারি- “আমাকে ঘিরুক না। আমি তো ময়নার বাকচাতে রয়েছি। যদি বাপের ব্যাটা হয়, ঘিরে দেখাক না! চ্যালেঞ্জ করলাম। আমার বাড়ি পর্যন্ত গিয়েছিল তো।” শুভেন্দু অধিকারী অভিষেককে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “যত এ’সব করবে। তত‌ই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হবে। এই নোংরা কালচার পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ছিল না। ভাইপো আমদানি করেছে।”

নমিনেশন-কাউন্টিং আমি, বুথ আপনারা সামলাবেন

আঠারোর পঞ্চায়েত নির্বাচনে হাজার হাজার আসনে শাসকদলের সন্ত্রাসের মুখে মনোনয়ন‌ই জমা দিতে পারে নি বিরোধীরা। এবার তেমন হবে না বলে দলের কর্মী-সমর্থকদের আশ্বাস দেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “এবার নমিনেশন হবে। আমাদের এম‌এল‌এ-রা আপনাদের সঙ্গে যাবেন। তাঁদের সঙ্গে সেন্ট্রাল ফোর্স থাকবে। গণনাকেন্দ্র সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব‌ও আমার। আপনারা বুথকে রক্ষা করুন। পারবেন তো?” শুভেন্দু বলেন, “নমিনেশন, গণনাকেন্দ্রের দায়িত্ব আমার। বুথ আগলে রাখার দায়িত্ব‌ আপনাদের।‌ এই এগ্রিমেন্ট হয়ে গেল।”

Feature Image- Collected.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *