হয়তো যে কোনও পরিস্থিতির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতও আছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশই দিক, সমস্ত দিকেই নজর রাখছে জনগণ। নিয়োগ দুর্নীতির সুবিচারের পথে বাধা এলে মানুষ চুপ করে বসে থাকবে না। লিখলেন নির্বাণ রায়-
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ থেকে কি যে কোনও মুহূর্তে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত যাবতীয় মামলা সরিয়ে নেওয়া হতে পারে? সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের একটি নির্দেশ এই আশঙ্কাই উস্কে দিয়েছে বাংলার জনগণের মনে। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে প্রয়োজন হলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিবিআই-ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে বলে সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে রাজ্য সরকার। এদিন মামলাটির শুনানি চলাকালে কলকাতার একটি বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকারের বিষয়টি উত্থাপন করেন অভিষেকের আইনজীবী।
ওই সাক্ষাৎকার নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের কাছে হলফনামা চাইলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। আগামী বৃহস্পতিবারের (২৭ এপ্রিল) মধ্যে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে হলফনামা সুপ্রিম কোর্টে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরের দিন অভিষেকের মামলার শুনানির সময় এ নিয়ে কোনও নির্দেশ দিতে পারেন প্রধান বিচারপতি। ২০২২-এর ১৯ সেপ্টেম্বর চ্যানেলটিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার সম্প্রচারিত হয়েছিল। এ নিয়ে অভিষেকের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বিচারপতিকে একটি চার পাতার অভিযোগ জমা করেন। অভিযোগপত্রে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বাংলা ভাষায় দেওয়া সাক্ষাৎকারের অনুবাদ করা ছিল। সব শুনে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, “ওই সাক্ষাৎকারে কী রয়েছে, তা আমাদের দেখা দরকার।” সাক্ষাৎকার নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলার পর হলফনামা তৈরি করে তা সুপ্রিম কোর্টে পাঠিয়ে দেবেন রেজিস্ট্রার জেনারেল।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির এই নির্দেশের পর স্বাভাবিক ভাবেই উল্লসিত তৃণমূল শিবির। নির্দেশের কথা কানে যাওয়া মাত্রই প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের মন্তব্যকে বাড়িয়ে চড়িয়ে টুইট করে জাস্টিস গঙ্গোপাধ্যায়কে বিদ্রূপ করতে ছাড়েন নি তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নামেই কুণাল সহ তৃণমূল নেতাদের গাত্রদাহের কারণ মানুষ বোঝে। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে বিচারপতিদের মিডিয়ায় মুখ খোলা বাঞ্ছনীয় নয় বলে শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় মন্তব্য করছেন বলে জানা গেছে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সেদিন ওই বৈদ্যুতিন চ্যানেলে সাক্ষাৎকার না দিলেই ভাল করতেন বলে মনে করছেন আইনজ্ঞ মহলের একাংশ।
মিডিয়ায় সাক্ষাৎকারের কারণে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কোনও নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট দিলে নিঃসন্দেহে তা হবে ন্যায় বিচার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ চাকরিপ্রার্থীদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের। জাস্টিস অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ থেকে নিয়োগ দুর্নীতির যাবতীয় মামলা সরিয়ে নিতে অনেক দিন ধরেই সচেষ্ট শাসক শিবির। হয়তো যে কোনও পরিস্থিতির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতও আছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশই দিক, সমস্ত দিকেই নজর রাখছে জনগণ। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এখন মামলা ধামাচাপা দেওয়া সহজ নয়। আর সেই অপচেষ্টা হলে জনতার আদালত বসে থাকবে না।
Feature Image is representational.