আদালতে যান, প্রমাণ করে দেব শাহকে আপনি ফোন করেছিলেন: মমতাকে চ্যালেঞ্জ শুভেন্দুর - nagariknewz.com

আদালতে যান, প্রমাণ করে দেব শাহকে আপনি ফোন করেছিলেন: মমতাকে চ্যালেঞ্জ শুভেন্দুর


কলকাতা: তৃণমূলের গায়ে জাতীয় দলের তকমা ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে দরবার করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল যাতে জাতীয় দল থাকে, সেই চেষ্টা করতে অমিত শাহকে চারবার ফোন করেছিলেন মমতা। মঙ্গলবার সিঙ্গুরের সভায় এই অভিযোগ করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। বুধবার নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন- “শাহকে তিনি ফোন করেছিলেন, প্রমাণ করতে পারলে মুখ্যমন্ত্রীত্ব থেকে ইস্তফা দেবেন। আর প্রমাণ না করতে পারলে, যে বলেছে, তাকে জনগণের সামনে নাকে খত দিয়ে ভুল স্বীকার করতে হবে।” সেদিন বিকেলেই টুইট করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাল্টা চ্যালেঞ্জ দেন বিরোধী দলনেতা। ইতিমধ্যেই মন্তব্যের জন্য শুভেন্দু অধিকারীর কাছে উকিল নোটিশ গেছে মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় সাংবাদিক সম্মেলনে সে’কথা জানিয়ে শুভেন্দু বলেন, “আমি চাই আপনি ( মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কেস করুন। এর নিষ্পত্তি আদালতেই হোক।”

শুভেন্দুর সিঙ্গুরের সভা থেকেই ফোন বিতর্কের সূত্রপাত। ছবি- সংগৃহীত

টুইটেই শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছিলেন, “ল্যান্ডলাইন থেকে অমিত শাহকে ফোন করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” সাংবাদিক সম্মেলনে বিরোধী দলনেতা জানান, দেশের আইন অনুযায়ী নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীদের ফোন কলের ডিটেইলস সর্বসমক্ষে আনা যায় না। তাই মুখ্যমন্ত্রী চাইলে আমার বিরুদ্ধে আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, “রাজ্যের প্রশাসনিক কর্ত্রী আপনি। উচ্চ নিরাপত্তায় থাকেন। আপনার কল রেকর্ড, ফোন কলের ডিটেইলস সর্বসমক্ষে আনা যায় না। আমি তা আনতে চাই‌ও না। তথ্য জানার অধিকার আইনেও এ নিয়ে কিছু নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।” এরপরেই বিরোধী দলনেতার চ্যালেঞ্জ- “আদালতের হস্তক্ষেপ ছাড়া এ’সব পাওয়া যায় না। তাই আমি চাই, আপনি মামলা করুন।‌ মামলা করলে আমিও ভারত সরকারের যে ‘ট্রাই’ আছে, তাদের মামলার একটি পক্ষ করব আমি। মামলা করলে ৪ মার্চ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সময়কালে আপনার ল্যান্ডলাইনের কল রেকর্ডসের ডিটেইল দিতে বাধ্য হবে ‘টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া’। তখন জলের মতো সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।”

যত খারাপ কথা বলবেন তত‌ই সমর্থন হারাবেন

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখের ভাষা কদর্য বলে সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেন শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলেন, “যা কদর্য ভাষা আপনার! বাংলার মানুষ উত্তর দেবেন। আরামবাগের তৎকালীন সাংসদ অনিল বসু কদর্য ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন আপনাকে। সেই সময় বাংলার মানুষ আপনার পক্ষ নেন। এখন বিরোধী দলনেতা, জাতীয় নেতৃত্ব, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্পর্কে যে ভাষায় কথা বলছেন, তাতে যত এমন কথা বলবেন, তত‌ই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন মানুষের থেকে।”

নির্বাচন কমিশনে আপনার লোক বসে নেই

জাতীয় দলের তকমা হারিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনকে পর্যন্ত কাঠগড়ায় তুলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাবের কড়া সমালোচনা করেন শুভেন্দু। বিরোধী দলনেতা বলেন, “আপনি ইলেকশন কমিশনকে চ্যালেঞ্জ করে চলেছেন। আপনি বলেছেন, ইলেকশন কমিশন একতরফা কাজ করছে। এটা আপনি বলতে পারেন না। ইলেকশন কমিশন অটোনমাস বডি। তারা আইন মেনে কাজ করে। আপনি চাইলেই সব হবে না। সেখানে মনোজ মালব্য, বিনীত গোয়েলরা নেই। সেখানে আইনের বাইরে গিয়ে কেউ কোন‌ও কাজ করে না।”

অল ইন্ডিয়া নাম ধুয়ে জল খান

তৃণমূল কংগ্রেসের নামের আগে অল ইন্ডিয়া থাকলেও তা যে এখন নিছকই একটা আঞ্চলিক দল, মুখ্যমন্ত্রীকে তা কটাক্ষের ছলে মনে করিয়ে দেন শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু বলেন, “আপনার পার্টি রিজিওনাল পার্টি। আপনি নাম অল ইন্ডিয়া রাখতেই পারেন। অল ইন্ডিয়া ফর‌ওয়ার্ড ব্লক‌ও রাখে। তাতে কোনও আসে যায় না। নাম রাখুন না আপনি অল ইন্ডিয়া। ধুয়ে খান আপনি। আপনার দল ইলেকশন কমিশনের খাতায় রিজিওনাল পার্টিই থাকবে। আপনার দল দিল্লিতে জাতীয় পর্যায়ের কোন‌ও বৈঠকে ডাক পাবে না। ব্যালট হোক আর ইভিএম- আপনার দলের নাম থাকবে জাতীয় দলগুলির নিচে। গণনার সময়েও আপনার দলের কাউন্টিং এজেন্টদের দ্বিতীয় সারিতে বসতে হবে।”

এবার রিয়েল অপোজিশন দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী

শুভেন্দু অধিকারী এদিন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনি যত কুকথা বলবেন, তত‌ই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হবেন। আপনি ২০১১ সাল থেকে ফাঁকা মাঠে খেলেছেন। প্রথম দফায় সিপিএম লড়তে পারে নি আপনার সঙ্গে। সিপিএম অপোজিশন ছিল বিধানসভায়। পারে নি লড়তে। আপনি এনজয় করেছেন। ষোলোতে বাম-কংগ্রেস জোট ছিল। সংখ্যা বেশি থাকায় কংগ্রেস প্রধান বিরোধীদল ছিল। পারে নি লড়তে। আপনি দিল্লিতে গিয়ে কংগ্রেসকে ম্যানেজ করে নিয়েছিলেন। দুটো টার্ম বিধানসভায় সিভিক অপোজিশন ছিল। এখন রিয়েল অপোজিশন দেখছে। আপনি আরও দেখতে থাকুন। আমরা লড়তে থাকি। চোরেদের জেলযাত্রা সুনিশ্চিত হবে। আপনি সারদার সবথেকে বড় বেনিফিশিয়ারি। আপনাকে কেউ পারবে না দুর্নীতির বাইরে রাখতে।”

Feature image is represnetational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *