আদালতও মনে করে ডিএ সমস্যার সমাধানে আলোচনাই সবথেকে গ্রহণযোগ্য পথ।
কলকাতা: জট কাটাতে আলোচনার বিকল্প নেই গণতন্ত্রে। অথচ ডিএ-র দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীদের চোর-ডাকাত আখ্যা দিয়ে আলোচনার দরজা নিজে থেকেই বন্ধ করে রেখেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এবার হাইকোর্টের নির্দেশে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতেই হচ্ছে সরকারকে। বৃহস্পতিবার মহার্ঘ ভাতা সংক্রান্ত বিষয়ে দুই পক্ষকে আলোচনায় বসার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের নির্দেশ মেনে রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনের তিন প্রতিনিধির সঙ্গে আগামী ১৭ এপ্রিল বৈঠকে বসবেন রাজ্যের মুখ্যসচিব ও অর্থসচিব।
কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতার দাবিতে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ব্যানারে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের অবস্থান আন্দোলন দু’মাস গড়াতে চলল। ডিএ নিয়ে প্রথম থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু অনড়ই নন রীতিমতো অসহিষ্ণুও। যখনই সরকারি কর্মচারীরা ডিএ-র দাবি তোলেন তখনই রাগে ঝনঝন করে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। হাইকোর্ট বাধা হয়ে না দাঁড়ালে শহিদ মিনারের তলা থেকে এতদিনে হয়তো পুলিশ দিয়ে সরকারি কর্মচারীদের তুলেই দিত প্রশাসন। তবে গত ২৯ মার্চ মেয়ো রোডের ধর্না মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে যে ভাষা প্রয়োগ করেছিলেন, তা শুনে তাজ্জব হয়ে যান সবাই। সে’দিন ডিএ-র দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীদের চোর-ডাকাত ও চিরকুটে চাকরি পাওয়া বলে কটাক্ষ করেছিলেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রীর এই অপমানজনক মন্তব্যকে বিনা প্রতিবাদে মেনে নেওয়া হবে না বলে ঠিক করেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। বৃহস্পতিবার রাজ্য জুড়ে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে যৌথ মঞ্চ। দফতরে দফতরে হাজিরা খাতায় সই করার পরেই কাজ বন্ধ করে দেন কর্মচারীরা। এর ফলে সরকারি দফতরগুলিতে পরিষেবা স্তব্ধ হয়ে গেছে। সরকারি কর্মচারীরা কর্মবিরতিতে গেলে জরুরি পরিষেবাও ব্যাহত হতে পারে- এই আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন আইনজীবী রমাপ্রসাদ সরকার। সরকারি কর্মচারীদের কর্মবিরতির ফলে ৪৩৬ কোটি টাকার ক্ষতি হবে বলে মামলাকারীর দাবি। সকালে মামলার শুনানিতে সরকার ও সরকারি কর্মচারী- উভয়ের ভূমিকাতেই উষ্মা প্রকাশ করেন বিচারপতিরা।
শুনানিতে মামলাকারী আইনজীবীর পাশাপাশি কর্মচারী সংগঠনের আইনজীবী ও রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল উপস্থিত ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর অপমানজনক মন্তব্যের প্রতিবাদেই এই কর্মবিরতি বলে আদালতকে জানান সরকারি কর্মচারীদের আইনজীবী। কর্মবিরতির ব্যাপারে অ্যাডভোকেট জেনারেলের কাছে জানতে চান বিচারপতিরা। কিন্তু এজি-র জবাব তাঁদের সন্তুষ্ট করতে পারে নি। ডিএ মামলায় ইতিমধ্যেই হাইকোর্টে মুখ পুড়েছে রাজ্য সরকারের। মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। তবে ডিএ সমস্যার সমাধানে আলোচনাই যে সবথেকে গ্রহণযোগ্য পথ, এদিন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের পর্যবেক্ষণেও তা উঠে আসে। শুনানি শেষে দুই পক্ষকে বৈঠকে বসার নির্দেশ দেন তাঁরা।
মুখ্যমন্ত্রী আগেই আন্দোলনকারীদের ডেকে নিয়ে কথা বললে পরিস্থিতি এই জায়গায় পৌঁছাতোই না বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। আলাপ-আলোচনায় না গিয়ে উল্টে বারংবার নিজের সরকারী কর্মচারীদের কটাক্ষ করে পরিবেশ উত্তপ্ত করে তোলেন রাজ্য প্রশাসনের প্রধান। এখন অবশ্য আদালতের ঠ্যালা খেয়ে আন্দোলরত সরকারী কর্মচারীদের তিন নেতার সঙ্গে আলোচনায় বসতেই হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মুখ্যসচিব ও অর্থসচিবকে। আদালত ঘাড় ধরে বাধ্য না করলে রাজ্য সরকার নড়েচড়ে বসে না বলে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা।
Feature Image is Representational.