ডেস্ক রিপোর্ট: কোনও জাপানিকে বুলেট ট্রেনে ঢিল ছুড়তে দেখেছেন? দেখেন নি। শোনেনও নি। বন্দে ভারত দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি একটি সেমি হাইস্পিড ট্রেন। ক্রমে ক্রমে সারা ভারত জুড়ে ট্রেনটির যাত্রাপথ বিস্তৃত হচ্ছে। কিন্তু রেলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্রুত গতিতে চলা এই ট্রেনটিকে অক্ষত রক্ষা করা। ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারি মাসে বন্দে ভারত প্রথম চালু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্যবার ট্রেনটিকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয়েছে।
বন্দে ভারতকে দুষ্কৃতীদের হাত থেকে বাঁচাতে এবার কড়া হুঁশিয়ারি দিল রেল। এবার থেকে ঢিল ছুড়ে ধরা পড়লে বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে অভিযুক্তের পাঁচ বছরের কারাবাস হতে পারে। মঙ্গলবার একটি বিবৃতির মাধ্যমে এই সতর্কবার্তা প্রচার করেছে দক্ষিণ-মধ্য রেল। আসলে বন্দে ভারতকে ঢিল থেকে রক্ষায় নতুন কোনও আইনের কথা বলছে না রেল কর্তৃপক্ষ। দেশের প্রচলিত ফৌজদারি আইনের মধ্যেই কঠোর শাস্তির সংস্থান রয়েছে। ১৯৮৯ সালের রেলওয়েস অ্যাক্টের ১৫২ ধারা অনুযায়ী এই ধরণের অপরাধে পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল দেওয়াই যায়। চলন্ত ট্রেনে-বাসে পাথর ছোড়াকে লঘু করে দেখার সুযোগ নেই। এর ফলে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি যাত্রীদের গুরুতর আহত এমনকি মৃত্যুরও আশঙ্কা থাকে। যে ট্রেন যত দ্রুত গতিতে ছুটে চলে ঢিলের আঘাতে সেই ট্রেন ও ট্রেনযাত্রীদের ক্ষতির আশঙ্কা তত বেশি।
বন্দে ভারত ট্রেনে ঢিল মারা যেন সংক্রামক রোগে পরিণত হয়েছে। এত সুন্দর ট্রেনটি চালু হওয়ার পর থেকেই তা বিকৃত মানসিকতার কিছু মানুষের রোষ অথবা নিষ্ঠুর মজার শিকার। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ছত্তীসগঢ়, পশ্চিমবঙ্গ, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্র, মহারাষ্ট্র এমনকি গুজরাট থেকেও বন্দে ভারতে ঢিল ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে। ঢিলের আঘাতে বহুবার ট্রেনটির জানালার কাচ ভেঙে গেছে। এখনও পর্যন্ত বন্দে ভারতে ঢিল ছোড়ার ঘটনায় সারা দেশে ৩৯ জনকে গ্রেফতার করে ধৃতদের বিরুদ্ধে রেলওয়ে অ্যাক্টের বিভিন্ন ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে।
বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের প্রতিটি কোচের দু’পাশে দুটি করে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। দুষ্কৃতীদের শনাক্তকরণে যা কাজে আসে। পাথর মারা বন্ধে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা জাগাতে অনেক প্রচার চালাচ্ছে রেল। কিন্তু শুধু প্রচারে এই অপরাধ মূলক কাজ থামানো যাচ্ছে না।দুষ্কৃতীরা ভাল কথায় কান দিচ্ছে না। এক-এক মাসে নয়-দশবার বন্দে ভারতে ঢিল পড়ছে। এখন কড়া হাতে মোকাবিলা করা জরুরি হয়ে উঠেছে। তাই বন্দে ভারতে ঢিল মেরে ধরা পড়লে কী পরিণতি হতে পারে, তা জানিয়ে দিল দক্ষিণ-মধ্য রেল। তবে জড়িতরা অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে তাদের কড়া শাস্তি দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু অভিভাবকদের তো একটা দায়িত্ব থেকে যায়, সন্তানদের নিয়ন্ত্রণ করার।
রেলের কড়া সতর্কবার্তার মধ্যেই বুধবার মাইসোর থেকে চেন্নাই গামী বন্দে ভারতে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটল তামিলনাড়ুর তিরুমানজোলাই এলাকায়। ঘটনায় গুবেন্দ্রন বলে একজনকে আটক করেছে আরপিএফ। ধৃত ব্যক্তি রেললাইনের ধারে বসে মদ্যপান করছিল।
ট্রেনে ঢিল ছোড়াটাই একটা লজ্জার ঘটনা। দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও বিষয়টি নিয়ে নাগরিকদের সচেতন করতে হচ্ছে রেলকে- এর চেয়ে লজ্জার আর কী আছে?
Feature Iamge is representational.