আমেরিকার অস্বস্তি বাড়িয়ে ওমান উপসাগরে চিন ও ইরানের সঙ্গে যৌথ নৌমহড়ায় রাশিয়া - nagariknewz.com

আমেরিকার অস্বস্তি বাড়িয়ে ওমান উপসাগরে চিন ও ইরানের সঙ্গে যৌথ নৌমহড়ায় রাশিয়া


আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বছর ঘুরলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামার কোনও লক্ষণ নেই।‌ মঙ্গলবার কৃষ্ণ সাগরে মার্কিন এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন ভূপাতিত করেছে রাশিয়ার সুখোই-২৭ যুদ্ধবিমান। ড্রোনটি আন্তর্জাতিক আকাশ সীমায় ছিল বলে ওয়াশিংটনের দাবি। যদিও রাশিয়া কটাক্ষ করে বলছে, এই ঘটনা প্রমাণ করছে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে কীভাবে সরাসরি জড়িত আমেরিকা। রুশ বিমানের আক্রমণে মার্কিন ড্রোন‌ বিধ্বস্ত হ‌ওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরমাণু অস্ত্রে বলীয়ান দুই বৃহৎ শক্তির মধ্যে সরাসরি সংঘাত বেঁধে যেতে পারে বলেও আন্তর্জাতিক মহলের আশঙ্কা। এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই বুধবার থেকে আরব সাগরে শুরু হয়েছে রাশিয়া, চিন ও ইরানের যৌথ নৌমহড়া। ওমান উপসাগরে রবিবার পর্যন্ত এই মহড়া চলবে বলে রাশিয়া ও চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে।

রাশিয়া, চিন ও ইরান আরও কাছাকাছি

ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে নেমে ভ্লাদিমির পুতিন কাঙ্খিত সাফল্য পেয়েছেন, এই কথা যেমন বলার সুযোগ নেই তেমনি আমেরিকা ও তার মিত্ররা ভলোদিমির জেলেনেস্কির পাশে দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে রাশিয়াকে একেবারে একঘরে করে দিতে পেরেছে, এমন দৃশ্য‌ও দেখা যাচ্ছে না। বরং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরেও ভারত সহ বিভিন্ন দেশের কাছে সস্তায় তেল বেচে নিজের অর্থনীতি সচল রাখতে পারছে রাশিয়া। ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই রাশিয়ার পাশে ইরান। কিয়েভ সহ ইউক্রেনের বিভিন্ন জনপদকে বিধ্বস্ত করতে ইরানের ড্রোন ব্যবহার করছে রুশ বিমান বাহিনী।‌ রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে চিন সরাসরি রাশিয়াকে সমর্থন না করলেও ইউক্রেনে পুতিনের পদক্ষেপকে নিন্দাও জানায় নি। বরং আমেরিকার চাপ অগ্রাহ্য করেই আড়াল থেকে রাশিয়াকে বিভিন্ন ভাবে মদত জুগিয়েছে বেজিং। যুদ্ধের এক বছরের মাথায় শি জিনপিং-এর চিন‌ যেন রাশিয়ার আর‌ও কাছাকাছি চলে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে ওমান উপসাগরে চলা পাঁচ দিনের ত্রিদেশীয় সামরিক মহড়াকে রাশিয়া, চিন ও ইরানের জোটবদ্ধ হ‌ওয়ার একটি প্রয়াস হিসেবেই দেখছে আন্তর্জাতিক মহল। ইরানের চাবাহার বন্দর থেকে এই মহড়ার সূচনা হয়েছে।‌

ত্রিদেশীয় সামরিক মহড়ায় নজর রাখছে আমেরিকা

খুব স্বাভাবিকভাবেই চিন-রাশিয়া-ইরানের যৌথ নৌমহড়া নিয়ে খুব একটা স্বস্তিতে নেই আমেরিকা। যদিও আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি সিএনএন-কে জানিয়েছেন, “তিন দেশের সামরিক মহড়া নিয়ে তারা মোটেই উদ্বিগ্ন নয় তবে ঘটনার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে আমেরিকা।” জন কিরবি বলেছেন, “‌তিন দেশের এই সামরিক মহড়ার জেরে যাতে উপসাগরীয় অঞ্চলে আমেরিকা ও তার সহযোগীদের নিরাপত্তা কোনও ভাবেই বিঘ্নিত না হয়, সেই দিকে অবশ্যই সতর্ক দৃষ্টি রাখব আমরা। তবে বিভিন্ন রাষ্ট্র এ’রকম মহড়া করেই থাকে। আমরা‌ও আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রদের নিয়ে নিয়মিত সামরিক মহড়া করে থাকি। ত্রিদেশীয় মহড়ার দিকে ভালভাবে নজর রাখা ব্যতীত আমাদের আর কিছু করণীয় নেই।”

রাশিয়া চিন ও ইরানের যৌথ নৌমহড়া চলছে ওমান উপসাগরে। মহড়া চলাকালীন একটি রুশ রণতরীকে দেখা যাচ্ছে। ফটো ক্রেডিট- ইরান মিলিটারি

বুধবার এক বিবৃতি জারি করে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তিন দেশের এই মহড়ার নাম রাখা হয়েছে ‘মেরিন সিকিউরিটি বেল্ট ২০২৩’। মহড়ায় রুশ নৌবাহিনীর তরফে ফ্রিগেট ‘অ্যাডমিরাল গ্রোশকভ’ ও মাঝারি আকৃতির ট্যাংকার ‘কামা’ অংশ নিচ্ছে। চিন পাঠিয়েছে গাইডেড মিশাইল ডেস্ট্রয়ার ‘নানকিং’। ইরানের নৌবাহিনীর হয়ে মহড়ায় অংশ নিচ্ছে ফ্রিগেট ‘সাখন্দ’ ও ফ্রিগেট ‘জামারান’ এবং রণতরী কর্ভেট ‘বেয়ান্দো’। মহড়া চলাকালীন দিনে ও রাতে তিন দেশের নৌসেনারা গোলা নিক্ষেপ অনুশীলন করবে বলে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে। এছাড়াও কোন‌ও জাহাজ দস্যুদলের দ্বারা অপহৃত হ‌ওয়ার পর তা কীভাবে মুক্ত করতে হয় ও মাঝ সমুদ্রে বিপদে পড়া জাহাজকে কীভাবে উদ্ধার করতে হয়, সেই প্রশিক্ষণ‌ও মহড়ায় দেওয়া হবে বলে রাশিয়ার তরফে জানানো হয়েছে।

রুশ-চিন ও ইরানের মধ্যে এটা হচ্ছে তিন নম্বর যৌথ নৌমহড়া। ত্রিদেশীয় শেষ মহড়াটি হয়েছে ২০১৯-এ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে যৌথভাবে আরও একটি নৌমহড়ায় অংশ নিয়েছিল চিন ও রাশিয়া।

Feature image is representational. Image Credit- Zuma/Tass.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *