তবে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানকে ধন্যবাদ জানিয়েও তাঁর আবেদন মেনে ধর্না ও অনশন তুলল না সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ।
কলকাতা: কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র দাবিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানালেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাদের অনশন ও অবস্থান আন্দোলন তুলে নিতে বললেন রাজ্যপাল। রবিবার সকালে রাজ্যপালের ডাকে রাজভবনে গিয়েছিলেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের পাঁচজন প্রতিনিধি। মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে ১৫ মিনিট আলোচনা করেন সিভি আনন্দ বোস। কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতার দাবিতে ২৮ দিন ধরে কলকাতার শহিদ মিনার চত্বরে অবস্থান আন্দোলন করে আসছে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। ১৪ দিন ধরে অনশনও চালাচ্ছেন কয়েকজন সরকারি কর্মচারী।
আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করায় রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানকে ধন্যবাদ জানালেও এখনই অনশন বা অবস্থান- কোনোটাই তাঁরা তুলছেন না বলে রাজভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মঞ্চের নেতারা। অনশনের জেরে মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ সহ কয়েকজনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। বিষয়টি রাজ্যপালকে উদ্বিগ্ন করেছে। শনিবার টুইট করে নিজের উদ্বেগের কথা জানান সিভি আনন্দ বোস। দুটি টুইটে রাজ্যপাল লেখেন, মহার্ঘ ভাতার দাবিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন চতুর্থ সপ্তাহে পা দিয়েছে দেখে আমি ব্যথিত। সমস্যা যতই জটিল হোক, আলোচনার মাধ্যমেই তার সমাধান সম্ভব। টুইটেই অনশন তুলে নিয়ে আলোচনায় বসতে সরকারি কর্মচারীদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন রাজ্যপাল।
শনিবার রাতে রাজ্যপালের টুইটৈর পরেই রাজভবন থেকে ধর্নামঞ্চে থাকা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানকে পাশে পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই খুশি আন্দোলনরত রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। রাজ্যপাল সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের প্রতিনিধিদের বলেন, “আপনাদের বিষয়টি আমি বুঝি। আমি কেন্দ্রীয় শ্রম সচিব ছিলাম। আমি সর্বান্তকরণে আপনাদের দাবিকে সমর্থন করছি। কিন্তু আমি চাই পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপনারা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসুন।” রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতার বিষয়টি তিনি নিজেও সরকারের কাছে উত্থাপন করবেন বলে যৌথ মঞ্চের প্রতিনিধিদের জানান সিভি আনন্দ বোস। রাজ্যপাল সবথেকে বেশি উদ্বিগ্ন সরকারি কর্মচারীদের অনশনের বিষয়টিতে। অনশন তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আন্দোলনকারীদের রাজ্যপাল বলেন, “আমার বাবা স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। তিনিও অনশন করতেন। অনশন বেশি দিন চললে শরীরের উপর কী স্থায়ী খারাপ প্রভাব ফেলে তা আমি নিজের বাবাকে দিয়েই দেখেছি।” অনশনরত সরকারি কর্মচারীদের দৃঢ়তা ও মনোবলের প্রশংসা করেন তিনি।
সাংবিধানিক প্রধান হওয়ার সুবাদে রাজ্যপাল রাজ্যের অভিভাবক তুল্য। রাজ্যপাল আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা ও সহানুভূতি ব্যক্ত করায় তাঁকে ধন্যবাদ জানান যৌথ মঞ্চের নেতারা। তবে রাজ্যপালের অনুরোধ এখনই কেন তাঁরা রক্ষা করতে পারছেন না, তাও সাংবাদিকদের সামনে ব্যাখ্যা করেন মঞ্চের নেতারা। এক মাস ধরে অবস্থান আন্দোলন চললেও সরকার তাদের আন্দোলনের প্রতি বিন্দুমাত্র সহানুভূতি দেখায় নি বলে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতাদের অভিযোগ। সরকারের তাদের দাবির প্রতি সংবেদনশীল ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার নিষ্পত্তিতে আগ্রহী- একমাত্র এই প্রমাণ পাওয়া গেলেই তারা ধর্না ও অনশন তুলে নিতে রাজি বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানান মঞ্চের এক প্রতিনিধি। রাজ্যপালের মধ্যস্থতায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের আলোচনার ব্যবস্থা হলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ।
Feature Image is representational.