মুখ্যমন্ত্রী হয়েও ধর্না ছাড়েন নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হয়েও বহুবার ধর্নায় বসেছেন। আবার ধর্নায় মমতা। এবার দিল্লিতে
ডেস্ক রিপোর্ট: ফের ধর্না মঞ্চে দেখা যাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে। তবে কলকাতায় নয় দিল্লিতে। বকেয়া আদায়ের দাবিতে আগামী ২৯ ও ৩০ মার্চ দিল্লিতে বাবা সাহেব ভীমরাও আম্বেডকরের মূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার ভুবনেশ্বরে রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের নিজের মুখে তাঁর দিল্লির কর্মসূচির কথা জানান মমতা।
১০০ দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা সহ একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সিএজি-র রিপোর্টে রাজ্যে চলমান কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির হিসেবে বড় গরমিলের আভাস পাওয়ার পরেই কঠোর হয় কেন্দ্র। ইতিমধ্যে কেন্দ্রের পাঠানো অডিট টিম একাধিকবার রাজ্যের জেলায় জেলায় ঘুরে হিসেবপত্র সমীক্ষা করে গেছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির সুবিধাভোগীদের তালিকায় যে বিস্তর জল আছে, তা রাজ্যের তরফেও স্বীকার করা হয়েছে। ভুলচুক যা ছিল, সব ঠিক করা হয়েছে বলেও রাজ্য সরকারের দাবি। যদিও এখনও বাংলাকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির নতুন বরাদ্দ ছাড়ে নি দিল্লি।
একেবারে দুয়ারেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পেতে মরীয়া রাজ্য সরকার। যদিও টাকা আসবে টাকা আসবে করে মার্চের মাঝামাঝি পেরিয়ে গেছে। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় অডিট টিম হিসেবপত্র দেখে যদি সন্তুষ্টই হয়ে থাকে তবে জনকল্যাণ মূলক প্রকল্পগুলিতে নতুন বরাদ্দ আসছে না কেন? তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, রাজ্যকে বঞ্চিত করতেই ন্যায্য পাওনা বকেয়া রেখেছে মোদী সরকার।
রাজ্যের বকেয়া মেটানো নিয়ে ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে মোদীর সঙ্গে মুখোমুখি বসে দেনদরবার না করে রাস্তাই বেছে নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সকালে ভুবনেশ্বরে রওনা হওয়ার ঠিক আগেই দিল্লিতে ধর্নার কথা জানালেন মমতা। বুধবার পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দিরে পুজো দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে বৈঠক করার কথা মমতার। কলকাতায় ফিরেই দিল্লি যাওয়ার প্রস্তুতি নেবেন।
ধর্না-অবস্থান-অনশন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবনে নতুন কিছু নয়। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে লাগাতার ধর্না-অনশনে বসেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারকে নাকাল করেছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী হয়েও ধর্নাকে দূরে সরিয়ে রাখেন নি। উনিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে সারদা মামলার তদন্তে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাংলোয় সিবিআই হানা দিতেই ধর্মতলায় ধর্নায় বসে গিয়ে একটা নজির সৃষ্টি করেছিলেন মমতা। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময় ভোটপ্রচারে কুকথা বলায় ২৪ ঘন্টার জন্য তৃণমূল সুপ্রিমোর প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে নির্বাচন কমিশন। প্রতিবাদে পরদিন সকালে মেয়ো রোডে গান্ধী মূর্তির নিচে মৌন অবস্থানে বসে পড়েন মমতা। এমনকি নন্দীগ্রামে ভোটগ্রহণের দিন বুথের ভেতরে ধর্নায় বসে রাজ্য জুড়ে হাওয়া গরম করে দিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
পরিস্থিতি একটু খারাপ বুঝলেই প্রতিপক্ষকে প্রতিআক্রমণে গিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি বহু ব্যবহৃত রাজনৈতিক কৌশল। এই কৌশল অনেকবার অনেক প্রতিকুল পরিস্থিতিতে তাঁকে ডিভিডেন্ড দিয়েছে। যখন বকেয়া মহার্ঘ ভাতা নিয়ে রাজ্য সরকারের কর্মচারীরা চল্লিশ দিন ধরে ধর্নায়। যখন নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শাসকদল ঘনিষ্ঠ কেউ না কেউ রোজই গ্রেফতার হচ্ছে। যখন বীরভূম তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল গরু পাচার মামলায় ফেঁসে দিল্লিতে ইডির হেফাজতে। তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে ধর্নায় বসতে চলেছেন।
কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিতে দুর্নীতির অভিযোগ বহু দিনের। গ্রামেগঞ্জে এই নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষও আছে। দিদির দূতরা ঘুরতে গিয়ে তা টেরও পাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে বকেয়া আদায়ে নেমে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগে মমতার ধর্না বাংলার মানুষকে প্রভাবিত করতে পারবে কি?
Feature image is representational.