আসানসোল থেকে কলকাতা হয়ে কেষ্টকে কীভাবে নিয়ে যাওয়া হবে দিল্লি, উপায় বাতলে দিল আদালত‌ই - nagariknewz.com

আসানসোল থেকে কলকাতা হয়ে কেষ্টকে কীভাবে নিয়ে যাওয়া হবে দিল্লি, উপায় বাতলে দিল আদালত‌ই


বিধি কি তাহলে বোলপুরের ব্যাঘ্র কেষ্টকে তিহাড় জেলের ডাল-রোটি খাইয়েই ছাড়বে?

ডেস্ক রিপোর্ট: অনুব্রত মণ্ডলের দিল্লিযাত্রা নিয়ে শেষ মুহূর্তে যে জটটি লেগেছিল, সিবিআই আদালতের নির্দেশে তাও কেটে গেল সোমবার সকালে। বিধি কি শেষ পর্যন্ত বোলপুরের ব্যাঘ্র কেষ্টকে তিহাড় জেলের ডাল-রোটি খাইয়েই ছাড়বে? অনুব্রতকে বগলদাবা করে ইডির আধিকারিকদের দমদম থেকে দিল্লিগামী ফ্লাইটে না ওঠা অব্দি বিশ্বাস নেই। তবে, আসানসোলে সিবিআই-এর বিশেষ আদালতের নির্দেশের পর অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আপাতত আর কোনও জটিলতাই থাকল না, যদি না শেষ মুহূর্তে আবার নতুন কোনও ফ্যাকড়া তৈরি করেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতির আইনজীবীরা।

গত ১১ অগাস্ট গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মন্ডলকে বোলপুরে তাঁর নিজের বাসা থেকে গ্রেফতার করে সিবিআই। পরে গত ১৭ নভেম্বর এক‌ই মামলায় অনুব্রতকে গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ততদিনে একটু কষ্ট হলেও আসানসোল জেলে মানিয়ে নিয়েছেন কেষ্ট। কিন্তু গ্রেফতারের পরপরই ইডি তাঁকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে জেরা করতে চায়। দিল্লিযাত্রা আটকাতে অনুব্রত ঠিক ততটাই চেষ্টা করেছেন, যতটা করেছিলেন সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতারি এড়াতে।

দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে অনুব্রতকে হাজির করতে চেয়ে আবেদন জানায় ইডি। আদালত তা মঞ্জুর‌ও করে। দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতের নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে দিল্লি হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা থেকে আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে আর্জি- কোন‌ওটা করতেই বাকি রাখেন নি বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি। কিন্তু বিধি বাম। দিল্লি হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ না দেওয়ায় অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার পথে আইনি বাধা আগেই দূর হয়েছিল ইডির। পরে অনুব্রতের আর্জি খারিজ হয়ে যায় আসানসোলের সিবিআই আদালতেও। কিন্তু অনুব্রতের দিল্লিযাত্রা বিলম্বিত করতে এবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা ঠুকেন তাঁর আইনজীবীরা। শনিবার কলকাতা হাইকোর্ট‌ও ইডির অনুকূলে রায় দেওয়ায় অনুব্রত মণ্ডলের দিল্লিযাত্রার পথে প্রায় সব আইনি বাধাই দূর হয়ে যায়।

কিন্তু শেষ মুহূর্তে আদালতের নির্দেশ মতো অনুব্রতকে আসানসোল সংশোধনাগার থেকে বের করে এনে কলকাতায় কেন্দ্রীয় সরকারের পরিচালনাধীন কোন‌ও হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আনার প্রক্রিয়ায় গোল বাঁধে। জেল কর্তৃপক্ষ না আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট নাকি ইডি- কে অনুব্রতকে সংশোধনাগার থেকে কলকাতায় আনবে এবং কলকাতা থেকে দিল্লি নিয়ে যাবে- এই নিয়ে তিন কর্তৃপক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়। আসানসোল সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ বিষয়টির নিষ্পত্তি চেয়ে সিবিআই আদালতের দ্বারস্থ হলে সোমবার যাবতীয় জটিলতার অবসান ঘটিয়ে দেয় আদালত।

অনুব্রতকে সংশ্লিষ্ট কোন কোন কর্তৃপক্ষ কীভাবে দিল্লি নিয়ে যাবে, এই‌ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, অনুব্রত মণ্ডলকে কলকাতা নিয়ে যাবেন আসানসোল সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। যাত্রাপথে অনুব্রতকে নিরাপত্তা দেবে আসানসোল পুলিশ। কলকাতায় কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ কোন‌ও হাসপাতালে অনুব্রত শারীরিক পরীক্ষা হবে। চিকিৎসক ফিট সার্টিফিকেট দিলে কারা কর্তৃপক্ষ হাসপাতালেই অনুব্রতকে ইডির কাছে হস্তান্তর করবেন। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট অনুব্রতকে বিমানে চড়িয়ে দিল্লিতে নিয়ে যাবে। কখন অনুব্রতকে সংশোধনাগার থেকে বের করে কলকাতায় নেওয়া হবে, তা ইমেল ও ফোন মারফত পুলিশ ও ইডিকে জানিয়ে দিতে আসানসোল সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

বোঝাই যাচ্ছে, বিশেষ সিবিআই আদালতের নির্দেশের পর অনুব্রতের দিল্লিযাত্রা সংক্রান্ত প্রায় সব বাধাই দূর হয়েছে। কেষ্টদা ও তাঁর টিম হঠাৎ নতুন কোনও নাটক মঞ্চস্থ করতে না পারলে তাঁর দিল্লি ভ্রমণ এ যাত্রা ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অনুব্রত মণ্ডল দীর্ঘদিন ধরেই গুহ্যদ্বারে ভগন্দরের সমস্যায় ভুগছেন। সম্প্রতি ভগন্দর ফেঁটে রক্তপাত হচ্ছে- আদালতে এই আবেদন জানিয়ে দিল্লি যাওয়া থেকে রেহাই চেয়েছিলেন কেষ্ট। কিন্তু কেষ্টর কষ্টকে বিশেষ আমল দেয় নি আদালত। এখন অনুব্রতের স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায়িত্ব বর্তেছে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ হাসপাতালেরে চিকিৎসকদের উপর। চিকিৎসকেরা যদি মনে করেন গুহ্যের ঘা অথবা শারীরিক অন্য কোনও সমস্যা অনুব্রতের দিল্লি যাত্রার পথে কোন‌ও বাধা হয়ে দাঁড়াবে না, তাহলে ইডির আধিকারিকেরা তাঁকে নিয়ে দিল্লির প্লেনে উঠবেন।

একবার দিল্লিতে গেলে অনুব্রত কবে বাংলায় ফেরেন, এখন এটাই প্রশ্ন। ইডি অনুব্রতকে দিল্লিতে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে চায়। জেরা চলাকালে অথবা জেরার শেষে অনুব্রত মণ্ডলকে তিহাড় জেলেও থাকতে হতে পারে। কবি কাজি নজরুল ইসলাম লিখে গেছেন- “চিরদিন কাহার‌ও সমান নাহি যায়।/ আজিকে যে রাজাধিরাজ কাল সে ভিক্ষা চায়।” এই অনুব্রত মণ্ডলের দাপটে সে’দিনও বীরভূম জেলার জেলাশাসক,‌ পুলিশ সুপার পর্যন্ত তটস্থ থাকতেন। আজকে দিল্লি যাওয়া ও তিহাড়বাস আটকাতে সেই অনুব্রত‌ই বাচ্চার মতো কান্নাকাটি করছেন। সময়ের মাইর একেই বলে কেষ্টদা!

Feature Photo is Representational. Photo Credit- ANI.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *