নিয়োগ দুর্নীতি: কুন্তল চুনোপুঁটি, পার্থ-মানিক প্রভাবশালী, প্রভাবশালীদের মাথারাও ধরা পড়বে তো? - nagariknewz.com

নিয়োগ দুর্নীতি: কুন্তল চুনোপুঁটি, পার্থ-মানিক প্রভাবশালী, প্রভাবশালীদের মাথারাও ধরা পড়বে তো?


নিয়োগ দুর্নীতির জাল কি কেবল কুন্তল ঘোষ কিম্বা তাপস মন্ডল দিয়ে শুরু হয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়েই শেষ? আরও কেউ এতে উপকৃত হন নি? ঘোটালার চরিত্র দেখে মানুষ তা বিশ্বাস করতে রাজি নয়। লিখলেন নির্বাণ রায়-

নিয়োগ দুর্নীতির জাল কোথা থেকে শুরু হয়ে কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে, তা ভগবান আর ঘোটালায় জড়িতরা ছাড়া আর কেউ জানে না। তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-ইডির কর্মকতারাও খাবি খাচ্ছেন বলে মনে হয়। তদন্তের ভাবগতিক দেখে তাই সময় সময় ধৈর্যচ্যুতি ঘটছে বিচারক অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর বান্ধবী অর্পিতা, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য, স্কুল সার্ভিস কমিশনের দুই প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা ও অশোক সাহা এবং সভাপতি সুবীরেশ ভট্টাচার্য জেলে। সম্প্রতি ইডির হাতে ধরা পড়েছেন হুগলি জেলার যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ। কিন্তু আরও কত কুন্তল জেলের বাইরে, এই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

ধৃত কুন্তল ঘোষ, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মানিক ভট্টাচার্য। চক্রে আরও কেউ কি নেই?

ধৃত কুন্তল ঘোষের সঙ্গে এক অভিনেত্রীর‌ও নাম উঠেছে ভাসা ভাসা। যদিও এখনও পর্যন্ত খাসা কোনও তথ্য এই সম্পর্কে জানা যায় নি। তবে কিঞ্চিত ধোঁয়া যখন উঠেছে তখন আগুন তো কোথাও জ্বলেছেই। যে অভিনেত্রীর নাম নিয়ে কানাঘুষা, তিনি আবার এখন শাসকদলের যুব সংগঠনের নেত্রী। প্রশ্ন হল রাজ্য জুড়ে আরও কত কুন্তল আছে এবং তাদের সবার মাথা কে? প্রাথমিকের শিক্ষক, উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষক, এস‌এসসি-র শিক্ষক, গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি- শিক্ষা ক্ষেত্রে যত রকমের নিয়োগ হয়েছে, তার একটিতেও বিন্দু মাত্র স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয় নি। প্রত্যেকটি পদ কেনাবেচা হয়েছে এবং তাতে কী বিপুল পরিমাণ টাকা লেনদেন হয়েছে, তা আমরা সাধারণ মানুষ অনুমান করতে পারি মাত্র। কিন্তু অনুমানের ওপর নির্ভর করে তো বিচার হয় না। দোষীদের শনাক্ত ও বিচার করতে গেলে উপযুক্ত প্রমাণ চাই।

নিয়োগ ঘোটালায় সব মিলিয়ে মোট কত টাকা লেনদেন হয়েছে এবং কাদের পকেটে টাকা গিয়েছে, তা বের না করতে পারলে শেষ পর্যন্ত মামলা কাঁচিয়ে যাবে এবং ধৃতরা এক সময় ছাড়া পাবেই। বিহারে পশুখাদ্য ঘোটালার মাথা শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েছিল এবং বিচারে তাঁর সাজা পর্যন্ত হয়েছিল। লালুপ্রসাদ যাদব শুধু বিহার নয় জাতীয় রাজনীতির একজন ‘আইকনিক ফিগার’। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি তাঁর রাজনৈতিক জীবনকে কার্যত শেষ করে দেয়। বাংলায় নিয়োগ দুর্নীতির জাল কি কেবল কুন্তল ঘোষ কিম্বা তাপস মন্ডলের মতো দালালদের দিয়ে শুরু হয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়েই শেষ? আরও কেউ এতে উপকৃত হন নি? ঘোটালার চরিত্র দেখে মানুষ তা বিশ্বাস করতে রাজি নয়।

কুন্তল ঘোষের রাজনৈতিক অবস্থানের উচ্চতা আহামরি কিছু বড় নয়। কিন্তু এই কুন্তল একাই নাকি ৩২৫জন শিক্ষক পদপ্রার্থীর থেকে টাকা তুলেছে। এক-একটি পদ ১০ থেকে ১৪ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে বাজারে খবর। তাহলে কুন্তলের মাধ্যমে কত টাকা ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত চালাচালি হয়েছে, এই প্রশ্ন কি আমরা তুলব না? তাপস মন্ডল বলে এক দালাল চাকুরিপ্রার্থীদের থেকে টাকা তুলে তৃণমূলের যুবনেতা কুন্তল ঘোষের কাছে হস্তান্তর করত। এমনটাই আদালতে জানিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এই টাকার পরিমাণ সাড়ে ১৯ কোটি টাকা। কুন্তল ঘোষের দুটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট মারফত সাড়ে ছয় কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন ইডির আধিকারিকেরা।

প্রাথমিকে বেআইনিভাবে নিয়োগ পাওয়া ১৩০জনের প্রত্যেকের কাছ থেকে কুন্তল ঘোষ ৮ লক্ষ টাকা করে তুলেছিল বলেও আদালতে দাবি করেছেন নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নিয়োজিত ইডির আধিকারিকেরা। ১৩০×৮ লক্ষ= ১০ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। এই টাকার একটা ভাগ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পকেটে ঢুকেছিল বলে জানতে পেরেছে ইডি। এখন প্রশ্ন হল, বখরা কি আর কার‌ও ঘরে যায় নি? ধৃত পার্থ, মানিক, সুবীরেশ- এরা সবাই নিঃসন্দেহে প্রভাবশালী। কিন্তু প্রভাবশালীদের ওপরেও প্রভাব খাটান, এমন আরও দু-তিনজন শীর্ষ প্রভাবশালীও তো থাকতে পারেন। আইনের লম্বা হাত শেষ পর্যন্ত সেই প্রভাবশালীদের গলা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে তো?

Feature Image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *