জলপাইগুড়ি: বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের নাম ভারত। আমরা গণতান্ত্রিক সংবিধান দ্বারা শাসিত। তবে গণতন্ত্রের কথা মুখে বলা যত সহজ, কাজে তার প্রয়োগ ও চর্চা অনেক বেশি কঠিন। এই দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরেই গণতন্ত্রের অভাব। সাংগঠনিক নির্বাচনের নামে দলগুলিতে যা হয়ে থাকে, তা নিয়ম রক্ষা ছাড়া আর কিছুই নয়। সামাজিক সংগঠনগুলিতে আইন মাফিক নির্বাচনের বাধ্য বাধকতা থাকলেও তা কাগজপত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। রাজনৈতিক দল বা সামাজিক সংগঠনে কেন গণতন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে যাওয়াই রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণটা বুঝতে কারও অসুবিধা হয় না। ব্যক্তি, পরিবার বা গোষ্ঠীর আধিপত্য কায়েম রাখার পথে প্রকৃত গণতন্ত্র সব সময়ই অন্তরায়। এই পরিস্থিতিতে পুরোপুরি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সাংগঠনিক নির্বাচন সেরে নিঃসন্দেহে একটা নজির গড়ল সামাজিক সংগঠন হুমাইপুর প্রকাশ ফাউন্ডেশন।
রবিবার ছিল প্রকাশ ফাউন্ডেশনের নির্বাচন। প্রকাশ ফাউন্ডেশনের গঠনতন্ত্রে পাঁচ বছর অন্তর সংগঠনের জেলা ও রাজ্য কমিটি পুনর্গঠনের কথা বলা আছে। এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া পুরোপুরি গণতান্ত্রিক। এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শুধু মুখে কিম্বা নথিতে নয়, পুরোপুরি বাস্তবে প্রতিফলিত করতে ফাউন্ডেশনের নেতৃত্ব বদ্ধপরিকর। গোপন ব্যালটে ভোটের মাধ্যমে রাজ্য সভাপতি ও রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সহ সংগঠনের প্রতিটি পদাধিকারীকে নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখা হলেও ভোট হয়েছে শুধু জলপাইগুড়ি ও ময়নাগুড়ি ইউনিটে। পুরোনো রাজ্য কমিটির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে এটাই প্রথম সাংগঠনিক নির্বাচন। আগামী দিনে সাংগঠনিক নির্বাচন আরও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক হবে বলে আশাবাদী প্রকাশ ফাউন্ডেশনের শীর্ষ নেতৃত্ব।
জলপাইগুড়ি থেকে ২৩ জনকে রাজ্য কমিটিতে পাঠাতে ১২২ জন সদস্যের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৬৭ জন। ময়নাগুড়ি থেকে ৬ জনকে নির্বাচিত করতে ৩৩ জন সদস্যের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ২২ জন। ভোট পরিচালনা করেছে নির্বাচন কমিশন। রবিবার দুপুরে প্রকাশ ফাউন্ডেশনের জলপাইগুড়ি দফতরে পা রেখে চোখে পড়ল পুরোদস্তুর ভোটের পরিবেশ। ভোটার তালিকা থেকে আঙুলের কালি, প্রিসাইডিং অফিসার- পোলিং পার্টি থেকে ব্যালট বাক্স বাদ গেল না কিছুই। গোপন কক্ষে ঢুকে ব্যালটে টিক মার্ক দিয়ে তা বাক্সে ফেলছেন ভোটাররা।
রাজ্য জুড়ে সামাজিক ও সেবামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে প্রকাশ ফাউন্ডেশনের ২০ টি ইউনিট। সংগঠন পরিচালিত হয় ১০১ সদস্যের রাজ্য কমিটি এবং ৩৩ জনের উপদেষ্টা পরিষদ দ্বারা। এই মুহুর্তে সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ৫৩৪। নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর নতুন রাজ্য কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করবে আগামী ১৮ ডিসেম্বর। রাজ্য সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হওয়ায় একমাত্র প্রার্থী নব্যেন্দু মৌলিকের পদটিতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত। পরবর্তী পাঁচ বছরে মধ্যে রাজ্যে সংগঠন আরও বিস্তৃত ও মজবুত হবে বলে দৃঢ়ভাবে আশাবাদী নব্যেন্দু। সংগঠন বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে সংগঠনের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চাও আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
ফিচার ফটো- নিজস্ব।