নূর নবীর নামে বাংলাদেশে মোট ২২ টি মামলা। অস্ত্র আইনে ২১ বছরের জেল।
ডেস্ক রিপোর্ট: অনেক খবরের ভিড়ে বাংলাদেশ থেকে আসা একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর সবার নজর এড়িয়ে গেছে। দু’দিন আগে বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণ থেকে জানা যাচ্ছে, চট্টগ্রামের এক শীর্ষ সন্ত্রাসী খুন হয়েছে কলকাতার হরিদেবপুরে। নূর নবী ওরফে ম্যাক্সন নামে ওই বাংলাদেশী দুষ্কৃতীকে গত ২৯ নভেম্বর রাতে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বড় বড় সংবাদ মাধ্যমে খবরটি মোটেই গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয় নি। নূর নবীর মৃত্যু সংবাদটি প্রথম আলোকে জানিয়েছেন তার ভাই আক্তার হোসেন।
কে এই নূর নবী?
চট্টগ্রাম পুলিশের খুনি-সন্ত্রাসী-দুষ্কৃতীদের খাতায় নূর নবীর নাম একেবারে শীর্ষে। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জামাতে ইসলামির ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরের ‘দুর্ধর্ষ ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত নূরের বিরুদ্ধে আদালতে খুন, সন্ত্রাস, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ও তোলাবাজির অভিযোগ সহ ২২ টি মামলা ঝুলছে। অস্ত্র মামলায় ২১ বছরের কারাদণ্ডের সাজা পর্যন্ত হয়েছে তার। এহেন কুখ্যাত বাংলাদেশী অপরাধী ও নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠন জামাতে ইসলামির সদস্য পালিয়ে পশ্চিমবঙ্গে এসে মাছ ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন কলকাতায় বাস করছিল বলে খবর।
চট্টগ্রামের নূর নবী কলকাতায় তমাল চৌধুরী!
তমাল চৌধুরী নাম নিয়ে কলকাতায় আত্মগোপনে ছিল চট্টগ্রামের কুখ্যাত দুষ্কৃতী নূর নবী। কলকাতায় নূর এক নারীকে বিয়েও করেছিল বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন তার ভাই। ওই নারী নূরের কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করলে বাংলাদেশ থেকে চার লক্ষ টাকাও পাঠানো হয়েছিল। এক লক্ষ টাকা কম পড়ায় নূরকে মদের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচৈতন্য করে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করা হয়েছে বলে মৃতের ভাই আক্তার হোসেনের অভিযোগ।
ময়নাতদন্তের পর এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালের মর্গে নূর নবীর দেহ রেখেছে পুলিশ। কলকাতায় এক পরিচিতির কাছ থেকে ভাইয়ের পরিণতি জেনেছেন আক্তার। বাংলাদেশ থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন তিনি। ভিসা পেলে কলকাতায় গিয়ে ভাইয়ের দেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে চান আক্তার হোসেন।
পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার হয়েও জামিন পেয়ে যায় নূর
৩০ নভেম্বর প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবরটি থেকে আরও একটি মারাত্মক তথ্য জানা যাচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ডানলপ এলাকা থেকে নূর নবীকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও জামিনে ছাড়া পেয়ে যায় এই বাংলাদেশী মোস্ট ওয়ান্টেড দুষ্কৃতী। দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধীদের অভিযোগ, বাংলাদেশের জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদী ও দুষ্কৃতীদের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। ২০২০– র এপ্রিল মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই খুনি আব্দুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেউদ্দিনকে কলকাতা থেকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় সরকারের গোয়েন্দারা। দু’জনেই দীর্ঘ দিন পশ্চিমবঙ্গে লুকিয়ে ছিল।
ভারতীয় স্ত্রীর হাতে বাংলাদেশের সন্ত্রাসী নূর নবীর অস্বাভাবিক মৃত্যু না হলে তার খবর কেউ জানতেই পারত না। সব থেকে উদ্বেগের বিষয়- গ্রেফতার হওয়ার পরেও কীভাবে জামিনে ছাড়া পেয়ে যায় একজন বাংলাদেশী কুখ্যাত দুষ্কৃতী? নিহত এই বাংলাদেশী সন্ত্রাসী বেআইনিভাবে ভোটার পরিচয়পত্র ও আধার কার্ড বানিয়ে নিয়েছিল বলে বাংলাদেশের আরও একটি সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে। নূর নবীর ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করল- পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের মৌলবাদী জঙ্গি ও দুষ্কৃতীদের বিষয়ে কতটা অন্ধকারে রাজ্যের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক।
Feature Photo Credit- Prothom Alo.