ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বিজ্ঞানী এপিজে আবদুল কালাম একবার বলেছিলেন, “আমাদের সবথেকে বড় রোগ, আমরা নিজের দেশকে অত্যন্ত নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখি। দেশের ভাল কিছু আমাদের সহজে চোখে পড়ে না এবং সবসময় দেশের সমালোচনায় ব্যস্ত থাকি।” গণতান্ত্রিক দেশে বাস করার একটা মস্ত বড় সুবিধা, এখানে যা খুশি তাই বলার স্বাধীনতা থাকে এবং সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে এখন জনগণ এই সুবিধা ষোলআনা উশুল করে ছাড়ছে।
বন্দে ভারত এক্সপ্রেস সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ভারতের একটি হাইস্পিড ট্রেন। ট্র্যাক ভাল থাকলে যা ঘন্টায় ১৮০ কিলোমিটার থেকে ২০০ কিলোমিটার গতি তুলতে সক্ষম। দেশের পাঁচটি রুটে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চলাচল করছে। শুক্রবার (৩০ জানুয়ারি, ২০২২) থেকে হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি রুটেও বন্দে ভারতের যাত্রা শুরু হবে, যার সূচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই সংবাদ শোনার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গবাসী উচ্ছ্বসিত। এবং তা থাকাটাই স্বাভাবিক।
তবে যারা ছিদ্রান্বেষী, তাদের গাত্রদাহও হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে চোখ রাখলে এদের জ্বালা টের পাওয়া যাচ্ছে। ইসরো-ডিআরডিও’র সাফল্য হোক আর ভারতীয় রেলের গৌরব- দেশের কোনও কিছুই এদের ভাল লাগে না। লাইনে গরুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে চলা বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সামনের বনেট খুলে গেলে এরাই খিল্লি করে নিজের জ্ঞানের পরিচয় দেয়। দেশের প্রশংসা করলে পাছে রাজনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়, এই ভয়েও এরা সরকারের ভাল উদ্যোগের কটাক্ষ শুরু করে।
যারা দেশের বিজ্ঞানী, গবেষক ও প্রযুক্তিবিদদের কৃতিত্বকে খাটো করে আনন্দ পায়, তারা আসলে বিকারগ্রস্ত। করুণাই এদের প্রাপ্য। এরা নিজেরা হতাশাগ্রস্ত ও নেতিবাচক মানসিকতার। এরা চায়ও সবাই নেতির অন্ধকারে ডুবে থাক। এদের কেউ কেউ আবার চিনের উন্নতি দেখে আহ্লাদে আটখানা। সেই চিন, যাদের তৈরি টিকা কোভিড প্রতিরোধে অক্ষম।
বন্দে ভারত এক্সপ্রেস আমাদের গৌরব। কত অল্প খরচে এবং কত অল্প সময়ে এত সুন্দর একটা অত্যাধুনিক দ্রুত গতির ট্রেন দেশবাসীকে উপহার দিয়েছেন ভারতীয় রেলের সঙ্গে জড়িত প্রযুক্তিবিদেরা। নিজের দেশের ট্র্যাকের উপযোগী করে এই দ্রুতগামী ট্রেনটিকে বানিয়েছেন তাঁরা। বন্দে ভারতের কামিয়াবি দেখে মনে আস্থা জাগে, ভবিষ্যতের ভারত নিজের প্রযুক্তি দিয়েই বুলেট ট্রেন নির্মাণ করবে।
রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়, অযত্ন, অবহেলা এমনকি রাগের মাথায় রাষ্ট্রের সম্পদ ধ্বংস করার প্রবণতা আমাদের অস্থিমজ্জায় ঢুকে গেছে। ইতিমধ্যেই দেশের কয়েক জায়গায় বন্দে ভারত ট্রেনের জানালার কাঁচে ঢিল মারার ঘটনা ঘটেছে। আমরা যেই ট্রেনে চড়ে গন্তব্যে পৌঁছাই, তা অবলীলায় অপরিচ্ছন্ন করে তুলি। রাজনৈতিক আন্দোলন করতে গিয়ে ট্রেনে আগুন দিই। হাওড়া-এনজেপি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস পেয়ে শুধু আনন্দে মাতলেই হবে না। এই ট্রেনের মর্যাদাও রক্ষা করতে হবে। ভালবাসার জিনিসকে যত্ন করে রাখতে হয়। আমরা যেন বন্দে ভারতকে সযত্নে রক্ষা করি। দায় রেলের একার নয়। আমাদের সবার। বন্দে ভারত। ভারতকে বন্দনা করি। হাওড়া-এনজেপি বন্দে ভারতের যাত্রা শুভ হোক।
Feature Image is representational.