পদ্মাসেতু ও কর্ণফুলী টানেলের পর ঢাকায় মেট্রোরেলের সূচনাকে নিজেদের বিরাট সাফল্য হিসেবেই দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগ সরকার
ঢাকা প্রতিনিধি: যানজটের নগরী ঢাকায় শুরু হল মেট্রোরেল পরিষেবা। বুধবার ঢাকার উত্তরায় মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ। উত্তরার দিয়াবাড়ি স্টেশন থেকে ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১০ কিলোমিটার পথ ওভারহেড মেট্রোর লাইন পাতা হলেও আপাতত ট্রেন চলবে আগারগাঁও পর্যন্ত। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৫ কিলোমিটার দূরত্ব মেট্রোরেলে চেপে ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডে অতিক্রম করতে পারবেন যাত্রীরা।
পৃথিবীর ষষ্ঠ জনবহুল নগরী ঢাকা জানযটের জন্য কুখ্যাত। মাত্র দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে দেড় ঘণ্টা লেগে যায় এই শহরে। মেট্রোরেল পরিষেবা ঢাকাবাসীকে যানজটের যন্ত্রণা থেকে অনেকটাই রেহাই দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। ঢাকা মেট্রোর ভাড়া নিয়ে নাগরিক সমাজ থেকে প্রবল আপত্তি উঠলেও পদ্মাসেতু ও কর্ণফুলী টানেলের পর একে নিজেদের বিরাট সাফল্য হিসেবেই দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগ সরকার। বুধবার সকালে উত্তরার দিয়াবাড়ি স্টেশনে মেট্রোরেল পরিষেবার উদ্বোধন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার মুকুটে আরও একটি পালক যোগ হল।” শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে বাংলাদেশের অহঙ্কারে, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার পথে আরও একটি পালক জুড়তে পারলাম, এটাই বড় কথা।” অনেক টাকা খরচ করে তৈরি মেট্রোরেল সযত্নে ব্যবহার করতে নাগরিকদের কাছে আবেদন জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
আগামী বছরের শেষে বাংলাদেশে নির্বাচন। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে বিরোধীরা। যদিও সেই কথায় কান না দিয়ে ভোটের প্রচার শুরু করে দিয়েছে আওয়ামি লিগ। এদিনের অনুষ্ঠানেও ভোটের প্রসঙ্গ টানতে ভোলেন নি আওয়ামি লিগ প্রধান। শেখ হাসিনা বলেন, “জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছিল বলেই আজ এইসব করতে পারলাম।” বিএনপি সহ বিরোধীদের যদিও অভিযোগ, ভোটের আগের রাতে পুলিশ দিয়ে কারচুপি করে আঠারোর নির্বাচনে জেতে আওয়ামি লিগ। উদ্বোধন শেষে মেট্রোরেলে সওয়ারীও হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্গে ছিলেন বোন রেহানা, বাংলাদেশের সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি ও জাপানি সংস্থা জাইকার প্রধান ইচিগুচি তমোহিদে সহ অন্যান্যরা।
বৃহস্পতিবার থেকে সাধারণ যাত্রীদের জন্য মেট্রোরেল খুলে দেওয়া হবে। ঢাকায় মেট্রোরেল পরিষেবা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড বা ডিএমটিসিএল। আপাতত সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দিনে চারঘন্টা মেট্রো চলাচল করবে। আগামী ২৬ মার্চ থেকে দিনভর সাড়ে তিন মিনিট অন্তর ট্রেন চালানো হবে বলে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। এই তিনমাস মাঝের কোনও স্টেশনেই ট্রেন থামবে না।
শুরুতে ঢাকায় এলিভেটেড মেট্রোরেল প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়। জাপানি সংস্থা জাইকা দিয়েছে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা। বাংলাদেশ সরকারের ঘর থেকে যাচ্ছে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা। মেট্রো রেলের নকশা ও প্রযুক্তি জাপানের। রেকও এসেছে জাপানি সংস্থা কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়াম থেকে।
সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা, সর্বোচ্চ ১০০
নাগরিকদের সুলভে গতিশীল গণপরিবহণের সুবিধা দিতেই মেট্রোরেলের মতো পরিবেশবান্ধব পরিষেবা চালু করে থাকে যে কোনও দেশের সরকার। কিন্তু ঢাকামেট্রোর ভাড়া চোখ কপালে তোলার জন্য যথেষ্ট। ভারতের যে কোনও শহরের মেট্রোরেলের তুলনায় ঢাকামেট্রোর ভাড়া মহার্ঘ্য। এমনকি পাকিস্তানের লাহোর মেট্রোর তুলনায়ও। এই উপমহাদেশে সবথেকে সস্তা মেট্রোরেল পরিষেবা কলকাতার। কলকাতা মেট্রোর সর্বনিম্ন ভাড়া মাত্র পাঁচ রুপি। সর্বোচ্চ ২৫ রুপি। ঢাকামেট্রোর সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা, সর্বোচ্চ একশ! দিল্লি ও চেন্নাই মেট্রোর সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ রুপি। লাহোর মেট্রোর সর্বনিম্ন ভাড়া পাকিস্তানি মুদ্রায় ২০ টাকা। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেলে চেপে যেই দূরত্ব অতিক্রম করতে ১০০ টাকা গুণতে হবে যাত্রীদের, সেই একই দূরত্ব যেতে দিল্লি মেট্রোতে লাগে মাত্র ৪০ রুপি। ছুটির দিনে যা নেমে আসে ৩০ রুপিতে। ঢাকামেট্রোর এমন উচ্চ হারে ভাড়ার প্রতিবাদ করেছে বাংলাদেশের বিরোধী দল থেকে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন, সবাই।
ঢাকামেট্রোর প্রথম চালক একজন নারী
ঢাকামেট্রোর প্রথম চালক বা ট্রেন অপারেটর একজন নারী। নাম মরিয়ম আফিজা। মরিয়ম নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রাপ্ত। ঢাকামেট্রোর চালকদের মধ্যে পাঁচজন নারী বলে জানা গেছে। মরিয়ম তাঁদেরই একজন। ২০২১ সালের ২ নভেম্বর ডিএমটিসিএল-এ চালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর এক বছর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মরিয়ম আফিজা।
Feature Image Credit- Bangladesh Awami League Official FB page.